মৃত্যুদন্ড, অপরাধির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয় না, কিন্তু বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে মৃত্যু দন্ড দেবার বিধান রয়েছে। এই শাস্তির বিধান পৃথিবীতে যতগুলো আইনি শাস্তি রয়েছে, তার মধ্যে সব থেকে পুরাতন। তাই সময়ের সাথে এই মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি একেক সময়ে একেক পন্থায় হয়েছে। আইন বলে অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। আর অপরাধের মাত্রার উপর ভিত্তি করে শাস্তির মাত্রারও রয়েছে ভিন্নতা। আবার যুগের পালাবদলের সাথে সাথে পাল্টে যায় শাস্তির ধরনও। ফলে আজকে যে শাস্তিকে আপনার কাছে যথাযোগ্য বলে মনে হচ্ছে, আজ থেকে শতবর্ষ পরে আপনার বংশধরের কাছেই হয়তো তা অমানবিক ঠেকবে। একই কথা বলা যায় উল্টো দিক থেকেও। অর্থাৎ ইতিহাসে শত শত বছর আগে প্রচলিত নানা শাস্তির কথা শুনে এখন আমাদেরও সেগুলোকে অমানবিক লাগতে পারে।সে যা-ই হোক, সেই শাস্তিগুলো বাস্তবায়নের উপায় জানলে বিস্মিত না হয়ে থাকার উপায় নেই। প্রাচীন পৃথিবীর এমনই কিছু শাস্তি, যা প্রাণ হরণকারী নয়, সেগুলো নিয়েই চলুন জেনে নেয়া যাক আজ।
স্কাফিজম
স্কাফিজম (Scaphism) অতীতে পার্সিয়ানদের মধ্যে প্রচলিত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মৃত্যদন্ড প্রাপ্ত আসামিকে সম্পূর্ন উলঙ্গ করে তাকে একটি ডোবার কাছে আনা হত। এরপর ডোবার সব থেকে কাছের গাছের সাথে বেধে রাখা হত। এরপর তাকে প্রচুর পরিমানে দুধ এবং মধু খাওয়ানো হত, যত সময় পর্যন্ত না তার ডায়রিয়া শুরু হত। ডায়রিয়া শুরু হলে তার সারা গায়ে মধু মেখে দেওয়া হত। এই মধু মেখে দেওয়ার ফলে আসে পাশের অনেক কিটপতংঙ্গ আকৃষ্ট হত আর আসামির গায়ের চামড়া ভেদ করে বাসা বানাতো। এই পদ্ধতিতে আসামির মৃত্যু হতে সময় লাগত ২ সপ্তাহের মত। মৃত্যুর মূল কারণ ছিল গ্যাংগ্রিন, ডায়রিয়া এবং অনাহার।
শির কর্তনঃ
শির কর্তন (Guillotine) পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি মূলত চালু করা হয় মানবিক দিক বিবেচনা করে!! ১৭০০ শতকে এই পদ্ধতি চালু করা হয়, কেননা তৎকালীন আমলে বিশেষজ্ঞদের মতে এই পদ্ধতিতে আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলে, তার কষ্ট কম হয়!! তাই তৎকালীন সময়ে অনেক দেশ এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড করতে থাকে। তবে সময়ের সাথে সাথে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে ফ্রান্সে সর্বশেষ এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এরপর থেকে বিশ্বে কোথাও আর এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়নি।
রিপাবলিকান বিবাহঃ
রিপাবলিকান বিবাহ (Republican Marriage) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার এক অদ্ভুত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে এক জন নর এবং নারী কে উলঙ্গ করে, মুখোমুখি করে এক সাথে বেধে নদীর পানিতে ফেলে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হত। এই পদ্ধতি শুধু মাত্র ফ্রান্সে চালু ছিল।
সিমেন্টের জুতাঃ
নাম শুনেই বুঝে গেছেন এই জুতা যেন তেন জুতা না বরং সিমেন্টের তৈরি। এই পদ্ধতি অনেকটাই “রিপাবলিকান বিবাহ” পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের মত, মানে নদীতে ডুবিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। শুধু পার্থক্য হল এখানে বিপরীত লিংগের কারো সাথে আপনাকে না বেধে, আপনার পায়ে পরিয়ে দেওয়া হবে এই সিমেন্টের জুতা যাতে আপনি পানির মধ্যে ভেসে থাকতে না পারেন। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার সব থেকে বেশি প্রচলন ছিল আমেরিকার মাফিয়াদের মধ্যে। মৃত্যুর মৃত্যু আবার লাশ লুকোবার কোন ঝামেলা নেই।
হাতির দ্বারা মৃত্যুদন্ড
মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার এই পদ্ধতি কিন্তু সুদুর কোন দেশের প্রচলিত পদ্ধতি না, বরং আমাদের এই দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার উদ্ভাবিত এবং এক সময়ের বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বিশাল আকৃতির হাতি তার পা দিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামির মাথা থেতলে দিত। এক্ষেত্রে আবার হাতিকে প্রশিক্ষন দেওয়া হত, যাতে সে ধীরে ধীরে পায়ের চাপ বাড়ায়, যাতে মৃত্যুদন্ড আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি পায় মৃত্যুর সময়। এই পদ্ধতি মূলত ব্যবহৃত ্তো রাজা বাদশাহদের আমলে।
তক্তার উপর
এক্ষেত্রেও মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিকে পানিতে ফেলে দেওয়া হলেও, সে কিন্তু পানিতে ডুবে মারা যেত না!! কি অবাক হচ্ছেন? আচ্ছা একটু ভেংগে বলি। এই উপায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করত সাধারনত জলদস্যুরা যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাহাজ আক্রমণ করে জাহাজের সব কিছু লুটে নিত আর যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলত তাদের বিরুদ্ধে তাদের এই ভাবে শাস্তি দিত। এক্ষেত্রে ব্যাক্তিকে শুধুমাত্র তক্তার উপর দিয়ে হাটিয়ে পানিতে ফেলে দেওয়া হত কিন্তু তার হাত পা কিছুই বাঁধা থাকত না। দিব্বি পানিতে ভেসে থাকতে পারবে। কিন্তু পানিতে ভাসমান এই সব জাহাজের চারিপাশে সব সময় কিছু হাঙ্গড় মাছ ঘুরে বেড়াত, আর পানিতে ফেলার সাথে সাথেই হাংঙ্গরের আক্রমণের শিকার হত। আর এভাবেই মৃত্যু কার্যকর হত।
(চলবে)