বাংলাহাব মিনি ক্রাইম থ্রিলার- ‘কিডনি “

-“আপনার ছেলের অপারেশন সাকসেসফুল। ”
-” আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমাদের নেই। আপনি সত্যি মানুষ নন দেবতা।”

এই কথা শোনার পর ভেতরটা মুচকি হেসে উঠে ডাক্তার আবিরের। আর মনে মনে বলতে থাকে “আমি দেবতা নয়,অপদেবতা”। মিস্টার আবির, ৪২ বয়সী এক ডাক্তার। অল্প সময়ে সুনামের পাল্লাটা বেশ ভারী তার। “অপারেশনের জন্য কিডনি পাওয়া যাচ্ছে না” এ কথাটি ডা. আবিরের ক্লিনিকের জন্য বেশ বেমানান। অপারেশন করতে এসে কিডনি যোগাড়ের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এমন ধারার কথা মি. আবিরের ক্লিনিকে আসা কোন রোগীর মুখে শোনা যায়নি।

ক্লিনিক চালানোর পাশাপাশি মি. আবির অন্য একটি চেম্বারেও বসেন। যেটি শুধু মাত্র রোগীদের চিকিৎসার জন্য খোলা হয়েছে।চেম্বারটা শহর থেকে কিছুটা দূরে নির্জন একটি এলাকায়। কিন্তু এই চেম্বারে থাকাকালীন তিনি সবসময় তার মুখে মাস্ক পরে থাকেন। আর একটি অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই চেম্বারের বাইরে তার নামের কোন সাইনবোর্ডে নেই এমনকি রোগীর প্রেস্ক্রিপশনটাও লিখেন সাদা কাগজে যেখানে থাকেনা তার নামের কোন চিহ্ন।

ক্লিনিকের অপারেশনের আগে আবির সাহেব তার চেম্বারে আরেকটি অপারেশন করেছেন। অপারেশন না করলে তিনি তার ক্লিনিকে থাকা রোগীর জন্য কিডনি যোগাড় করতেন কি করে? তাহলে তিনি কার অপারেশন করেছেন! রোগীর পরিচয় আবির সাহেব নিজেই জানেন না। যে এলাকায় তার চেম্বার সেখানে অনেক বাচ্চাকে দেখা যায় ভিক্ষা করতে। বিকেল গড়িয়ে এলে তেমন আর লোকজন দেখা যায় না। অন্ধকারে সেখান থেকে কাউকেনা কাউকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে চেম্বারে আনাটা খুব কঠিন কিছু নয়। চেম্বারে এনে কথা ছলে বাকী কাজটা খুব সুকৌশলেই সেরে নেন তিনি। অপারেশন শেষে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে আসে কোন অচেনা জায়গায় যেন সে অসহায় বাচ্চা গুলো প্রাণে বেঁচে গেলেও আর যেন তাদের এলাকায় ফিরে আসতে না পারে।

খুব কম বয়সে বাবা মাকে হারিয়েছেন তিনি। মানুষ হয়েছেন কাক-কাকীর কাছে। তাদের মুখে শুনেছেন তার বাবা মা দুজনেই মারা গেছে কিডনির অসুখের জন্য। কার, চিকিৎসার টাকা তাদের ছিলোনা। সেই থেকে তিনি মনে মনে শপথ নিয়েছে, একদিন এই কিডনি অদল-বদল করেই তিনি প্রচুর টাকার মালিক হবেন।

‘”কোথায় তুমি?”

-” চেম্বারে আছি। একটু পর ক্লিনিকে যাবো। তুমি আর নীল খেয়ে নিও। আমার বাড়ি ফিরতে রাত হবে।”

রিমি আর দশ বছরের ছেলে নীলকে নিয়ে সংসার। আজ ক্লিনিকে অপারেশন আছে। কিন্তু এখনো কিডনি যোগাড় হয়নি। আশেপাশে কোন বাচ্চাও দেখতে পাচ্ছেন না।এমন সময় মুখে মাস্ক, নোংরা জামা-প্যান্ট পড়া একটি বাচ্চা ছেলে তার কাছে এসে ভিক্ষা চাইছে। আবির সাহেবের ঠোঁটে কোণে বাকা হাসি। ভেতরে আয়,তোকে চকলেট দেবো। হাতে সময় বেশী নেই। মুখের মাস্ক না খুলেই তিনি অপারেশন শুরু করেন। অপারেশন শেষ। এমন সময় তার স্ত্রী রিমির ফোন।

-” ছেলের সারপ্রাইজ কেমন লাগলো। স্কুল থেকে ফেরার পর আমায় পাগল করে দিচ্ছে। যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগীতায় সে ফার্স্ট হয়েছে। তার এ বেশে সে তার পাপাকে চমকে দেবে। তাই ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে তোমার চেম্বারে পাঠিয়ে দিতে হলো। হ্যালো, আবির তুমি কথা বলছোনা কেন? হ্যালো। ফোনটা আবির সাহেবের হাত থেকে পরে যায়।

-” এই আমি কি করলাম। মুখ থেকে মাস্কটা সরানোর সাহস হচ্ছেনা তার।

-স্যার, স্যার ড্রাইভারের গলার আওয়াজে চমকে উঠেন তিনি। নীল বাবা আমায় এখানে আসতে বারণ করেছে। তাই গাড়ি নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

কিন্তু ফিরতে এতো দেরি হচ্ছে কেন দেখতে এলাম। একি! নীল বাবা শুয়ে আছে কেন। স্যার স্যার। কি হয়েছে আপনার।

আবির সাহেবের জ্ঞান ফিরেছিলো ঠিকই কিন্তু নীলের ঘুম আর ভাঙ্গেনি। জ্ঞান ফেরার পর আবির সাহেব শুধু একটা কথায় বলে,” আমি পাপী, আমি অপদেবতা “।