অনেকেরই জ্বীন-ভুত-পরী নিয়ে অনেক মাথা ব্যাথা। তারা কি সত্য, নাকি মিথ্যা, তারা শুধুই কি মিথ, পুরোটাই গুঁজব নাকি আসলেই ফ্যাক্ট? না, আমি কোন জ্বীন-ভুত বিশারদ নই। তবে ডেমন নিয়ে মনের কোনে একটু তরল জায়গা বরাবরই ছিল, আম্মু-আব্বু, দাদী-নানীদের মুখে সেই ছোটবেলা থেকেই এগুলো শুনে ঘুমিয়েছি কি না তাই। সেই তরল জায়গায় কবে কবে যে ডেমনের শেওলা জমে গেছে জানিনা। সেখান থেকেই এদের উপরে একটু পড়াশুনা করতে শুরু করেছিলাম আর কি। আর যেহেতু, বাংলা হাবের মত বিশাল প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত যখন হয়েই গেছি, ভাবলাম যা পড়ছি, সবার সাথে শেয়ার করলে দোষ কোথায়। তাই সিরিজ আকারে শুরু করলাম ডেমনলজি। সাথে থাকুন, আশা করি খারাপ লাগবে না। আর যদি সিরিজটি পছন্দ হয় বা না হয়, নিচে কমেন্টে আপনার অনুভূতি জানাতে ভুলবেন না। আর শেয়ার করাটা কিন্তু বাঞ্ছনীয়।
আজ সিরিজের তৃতীয় পর্বে লিখতে চেষ্টা করলাম ন্যান্সি পজেশন সম্পর্কে কিছু কথা।
১৬২০ সালের দিকে ফ্রান্সের লরেন প্রদেশে এক নারী শয়তান দ্বারা আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটে, যা সেই সময়ে তোলপাড় তুলেছিল। Mademoiselle Elizabeth de Ranfaing নামের নারীর পজেশনের ঘটনাটি লরেনের রাজধানী ন্যান্সিতে প্রিন্টেড আকারে তৎকালীন লরেনের সবথেকে নামকরা ফিজিশিয়ান ডঃ এম. প্রিচার্ড কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এই ঘটনা ইতিহাসে ন্যান্সি পজেশন নামে পরিচিত।
ধর্মভিরু এলিজাবেথ ১৬১৭ সালে বিধবা হন। দেখতে খুব সুন্দরী হবার কারনে Povoit নামের একজন ডাক্তার তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এলিজাবেথ পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজী ছিলেন না। কিন্তু Dr. Povoit ছিল নাছোড়বান্দা। সে তাকে জোর করে প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য Herbal Love Philters বা প্রেমউদ্দীপক এক ধরনের ভেষজ পানীয় পান করায়। ওই পানীয় পান করার ফলে এলিজাবেথ এর স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপরেও Dr. Povoit এলিজাবেথ এর উপর বিভিন্ন ব্ল্যাক ম্যাজিক্যাল স্পেল করে, যার ফলে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই স্পেল এর ফলে এলিজাবেথ এর সাইকোলজিক্যাল কিছু ইফেক্ট দেখা দেয়, যেটাকে সাধারনত আমরা পজেশন বলে থাকি। পরবর্তিতে Dr. Povoit কে SORCERY বা জাদুবিদ্যায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও কাঠের খুটির সাথে বেধে জনসম্মুখে পুড়িয়ে মারা হয়।
এলিজাবেথ তৎকালীন ফিজিশিয়ানদের সাহায্য পাবার অনুরোধ করেন, কিন্তু কিছুতেই তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। পরবর্তিতে তারা তাকে এক্সরসিজম করার পরামর্শ দেয়। বিখ্যাত এই এক্সরসিজম ২ সেপ্টেম্বর, ১৬১৯ সালে রেমিরেমন্ট শহরে শুরু হয়। কিন্তু সেখানেও তেমন কোন উন্নতি না হওয়ায় তাকে ন্যান্সি নগরীতে পাঠানো হয়, যেখানে সে আরো কিছু ফিজিশিয়ানদের সাক্ষাত লাভ করে। ন্যান্সির ফিজিশিয়ানরা তাকে কনফার্ম করেন যে এই ধরনের লক্ষণ শুধুমাত্র ডায়াবলিক পজেশনের কারনেই ঘটে থাকে।
বিখ্যাত এই এক্সরসিজমের এক্সরসিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন চার্চে অফিসিয়াল, ধর্মতত্ববিদ্, সন্ন্যাসী, ফিজিশিয়ান ও রয়্যাল কোর্টের রিপ্রেজেন্টেটিভরা। তারা প্রথমে এলিজাবেথ এর উপরে পজেসিভ ডেমনকে ডাকে। ডেমন উপস্থিত হলে তাকে তারা হিব্রু, গ্রীক, ইটালিয়ান ও ল্যাটিন চারটি আলাদা আলাদা ভাষায় ইন্টেরোগেট করেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ডেমন তাদের সবাইকেই আলাদা আলাদা ভাষায় সঠিকভাবে জবাব দেয়। কখনো কখনো ডেমনটি একইসাথে ভিন্নভিন্ন ভাষায়ও উত্তর দিয়েছিল। যেমনঃ তার উত্তরের এক অংশ ফ্রেঞ্চ ভাষায় দিয়েছিল, অপর অংশ হয়ত ল্যাটিন।
এখানে একটা মজার ঘটনা ঘটে। ডেমনকে তখন গ্রীক ভাষায় ইন্টেরোগেট করা হচ্ছিল। চার্চ অফিসিয়ালদের একজন ভুল গ্রীক বলে ফেলে। ডেমন তাকে গ্রামাটিক্যাল ভুল ধরিয়ে দিয়েছিল।
আলাদা আলাদা ভাষা ব্যাবহার করে এক্সরসিস্টেরা ডেমনকে বেশ কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়েছিলেন। ডেমন সেগুলো যথাযথভাবে বুঝতে পেরেছিল ও পালন করেছিল। যেমন এলিজাবেথের বুকে ক্রস আঁকা, হলি ওয়াটার বা পবিত্র জল বহন করা, বিশপের পায়ে চুমু খাওয়া আর বিশেষ কিছু বডি মুভমেন্ট করা। ক্যাথোলিক থিওলজির ব্যাপারে করা প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদান করেছিল, সাথে উপস্থিত সবার গোপন পাপের কথাও সবার সামনে ফাঁস করেছিল ডেমনটি। কখনো কখনো এক্সরসিস্টেরা জোরে কথা না বলে খুব নিচু গলায় আদেশ করেছিল; কিন্তু ডেমনটি তাদের ঠোট নড়ানো, এমনকি হাতের আঙুল নাড়ানো দেখেও সঠিক ইন্সট্রাকশন গ্রহন করে যথাযথভাবে পালন করেছিল। সবশেষে ডেমন উপস্থিত লোকদের মধ্যে কারা Calvinist (পূর্ববিধানবাদী) এবং Puritan (শুদ্ধাচারী) সাক্ষী ছিল তাও বলে দিয়েছিল।
সমালোচকেরা অবশ্য এই পজেশনের উপর তীব্র ভৎসনা করেছিলেন। সন্ন্যাসী Claude Pithoy অবশ্য বলেছিলেন, ‘যদি ওই কেস সত্য হয় তবে আমি নিজেকে পজেজড করে দেখাতে চাই।’ পরে অবশ্য Pithoy তার উর্দ্ধতনের কথায় চুপ করে যান।
এলিজাবেথ অবশেষে এক্সরসিজম দ্বারা ডেমন থেকে মুক্ত হয় এবং পরবর্তিতে নান হিসেবে নিজেকে ইশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে দেন। এক্সরসিস্টেরা তার পজেশনের ভ্যালিডিটি নিয়ে লিখিত স্টেটমেন্ট গ্রহন করেন। তৎকালীন সুনামধারী ফিজিশিয়ান ডঃ প্রিচার্ড ১৬২২ সালে এই কেস লিখিত আকারে ডকুমেন্ট করেছিলেন।
ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনারা শেয়ার করলে বারবার লিখতে আগ্রহ বাড়ে। আর সর্বদা নতুন কিছু জানতে বাংলা হাবের সাথেই থাকুন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
(ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও প্রতীকী)