” হেঁচকি “- শব্দটা আমাদের কাছে খুব পরিচিত ৷ মানুষের বেঁচে থাকার কোন এক মুহূর্তে প্রত্যেকেই হেঁচকির সম্মুখীন হয়ে থাকে ৷ এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় ৷ কিন্তু হেঁচকি যদি বারবার হতে থাকে, তখন তা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় ৷ আপনি যদি এই হেঁচকি আপনার শরীর থেকে চিরতরে বিদায় দিতে চান,তবে নিম্নোক্ত ১০ টি উপায় আপনাকে এই উদ্ভট হেঁচকি সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে ৷ আসুন, জেনে নেই-উপায়গুলো কি কি….
১ঃ নাকে চিমটি কাটা এবং সাথে এক গ্লাস পানি পান করা
হেঁচকি থেকে মুক্তির একটি কার্যকরী উপায় হলো-হেঁচকির সময় নাকে চিমটি কাটা এবং সাথে এক গ্লাস পানি পান করা ৷ তবে পানি পান করার সময় অবশ্যই নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখবেন ৷ আরো একটি উপায় হলো-যদি আপনি একসাথে বেশি পরিমাণে খাবার গলাধঃকরণ করেন-যেমন এক নলা ভাত, দেখবেন মুহূর্তেই আপনার হেঁচকি গায়েব ৷ এরপরও প্রথমবারে যদি আপনার হেঁচকি না থামে,তবে উপরোক্ত উপায়গুলো পুনরায় বা বারবার চেষ্টা করবেন ৷ সাধারণত,দুই বা তিনবার চেষ্টার পর হেঁচকি গায়েব হয়ে যাবে ৷
২ঃ এক চামচ মধু
যখন হেঁচকি উঠবে তখন এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ মধু খুব ভালো করে মিশিয়ে খাবেন ৷ কেননা,এই মধু মানবদেহের ভেগাস নার্ভকে (এক ধরনের স্নায়ু) সুড়সুড়ি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং এর ফলে আপনার হেঁচকিও ম্যাজিকের মতো উধাও হয়ে যাবে ৷
৩ঃ শুকনো কোকো পাউডার
হেঁচকির তীব্রতা যখন আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলবে, তখন তাড়াতাড়ি এক চামচ শুকনো কোকো পাউডার গলায় চালান করে দিবেন ৷ এছাড়া যেকোন চকলেট ড্রিংকের পাউডারও এক্ষেত্রে কাজ করবে, যেমন মাইলো, ওভালটিন।
৪ঃ পানির গ্লাস না ধরেই পানি পান করা
হেঁচকি দূর করার জন্য এটি একটি অদ্ভুত পদ্ধতি ৷ টেবিলের উপর পানিপূর্ণ একটি গ্লাস রেখে এবার সেই গ্লাসটি না ধরে সেখান থেকে পানি পান করুন আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত এভাবে পানি পান করতে থাকুন,যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার পক্ষে সম্ভব এবং যতক্ষণ পর্যন্ত গ্লাসটি পড়ে না যায় ৷
৫ঃ মিষ্টি খাবার
অতিরিক্ত মিষ্টি আপনার হেঁচকি দূর করবে ৷ যেমন, হেঁচকির সময় এক চামচ চিনি খেয়ে দেখুন, দেখবেন সেটা ম্যাজিকের মতো কাজ করছে৷ কেননা, চিনি আপনার খাদ্যনালীকে বিরক্ত করবে৷ আর যখন এই খাদ্যনালীর অসুবিধা হবে,তখন “ফ্রেনিক নার্ভ”(ডায়াফ্রামের সংকোচন-প্রসারণের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে ” ফ্রেনিক নার্ভ ” নামক এক বিশেষ ধরনের স্নায়ু ) রিসেট হবে এবং হেঁচকি থেমে যাবে ৷
৬ঃ টক খাবার
যে কোন টক খাবারও মূলত হেঁচকি থামানোর ব্যাপারে যথেষ্ট কার্যকর ৷ আপনি যদি লেবুর টক সহ্য করতে না পারেন,তবে লেবুর উপর সামান্য চিনি ছিটিয়ে খেতে পারেন ৷ তাও যদি খেতে না চান, তবে আপনি এক চা চামচ ভিনেগার খেয়ে নিতে পারেন, যা হেঁচকি থামাতে সহায়ক ৷
৭ঃ কাগজের ব্যাগে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া
যখন আপনার হেঁচকি অসহনীয় পর্যায় চলে যায়, তখন একটি কাগজের ব্যাগে মুখ ঢুকিয়ে দিন এবং ব্যাগের চারপাশটা শক্ত করে আটকে ফেলুন ৷ তারপর তার মধ্যে আপনি শ্বাস ছাড়ুন এবং শ্বাস নিন ৷ এভাবে ১০বার করুন ৷ যত দ্রুত আপনি শ্বাস ফেলবেন এবং গ্রহণ করবেন,তত দ্রুত আপনার হেঁচকি দূর হবে ৷
৮ঃ ছোট ছোট চুমুকে পানি পান
একবারে বড় চুমুকে পানি পান না করে,ছোট ছোট চুমুকে পানি পান করলে আপনি উপকৃত হবেন বেশি ৷ প্রথমে শ্বাস বন্ধ করে ছোট চুমুকে পানি পান করুন,তারপর শ্বাস আস্তে আস্তে ছাড়ুন,তারপর আবার আরেক চুমুক পানি নিন ৷ এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করুন,দেখবেন মুহূর্তের মধ্যে হেঁচকি গায়েব ৷
৯ঃ তীব্র গন্ধের কোন কিছুর ঘ্রাণ নেওয়া
তীব্র গন্ধের কোন কিছু যেমন-লবণের ঘ্রাণ আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বিধিতে পরিবর্তন আনবে ৷ আবার লেবু এবং ভিনেগারের ঘ্রাণ হেঁচকি দূর করতে সহায়ক ৷
১০ঃ নিশ্বাস ধরে রাখা এবং নাকের ডগায় আঙুল ঘোরানো
নিঃশ্বাস ধরে রেখে নাকের ডগায় আঙুল দিয়ে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থ্যাৎ আঙুলটাকে ডান থেকে বামে ঘোরাতে হবে ৷ সে সময় আপনি যেকোন ছড়া গান কিংবা রাইম গাইতে পারেন ৷ আর এ পদ্ধতি আপনার হেঁচকি দূর করতে কার্যকর ৷
উপরোক্ত পন্থাগুলোর মধ্যে কিছু সহজ উপায়,আবার কিছু অদ্ভুত উপায়ও রয়েছে ৷ তবে আপনার জন্য যে পদ্ধতিটা সুবিধা হবে,আপনি সেই পদ্ধতিটা বাড়িতে বসে চেষ্টা করে দেখতে পারেন ৷ তবে হেঁচকি যদি বেশিদিন ধরে আপনার সঙ্গী হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই আপনার যে কোন মেডিকেল চেক-আপে যাওয়া উচিত ৷ তবে হেঁচকি একটি খুবই সাধারণ ব্যাপার,যা মেডিকেল সায়েন্স খুব একটা পাত্তা দেয় না ৷ এটি আপনি যে কোন ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমেই দূর করতে পারেন ৷