আমাদের মানব মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১০০ টেরাবাইট (মতভেদ আছে)। তারপরেও আপনি সকালে কিছু পড়ে বিকালে মনে রাখতে পারছেন না! আরো মনে রাখতে পারছেন না আপনার ফোন নাম্বার, কলিগের নাম এমনকি বন্ধুর নাম! এমনটি হবার কথা ভাবতেই ভয় লাগে, তাই না? কিন্তু সত্য হল, জীবনের এক সময়ে এইরকম পরিস্থিতিতে আপনাকে পড়তে হবে। আমাদের বয়স ৪০ থেকে বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে আসে। কিন্তু যদি এই পরিবর্তন বয়স হওয়ার আগে ঘটে, তবে তা কারোর কাম্য নয়। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। যা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-
মস্তিষ্কের ব্যায়াম
আপনার মস্তিষ্ককে যত বেশি কাজে লাগাবেন, আপনার মস্তিষ্ক তত বেশি কাজ করবে। যেমন ধরুন, সবজি কাটার ছুরিটি দিয়ে যত বেশি কাটাকাটি করবেন ছুরিটি তত বেশি ধার হবে। মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা অসাধারণ। যত বেশি ব্যবহার করবেন, ততই এই ক্ষমতা বাড়তে থাকবে। প্রতিনিয়ত নতুন জিনিস নিয়ে ভাবতে থাকুন, পুরাতন স্মৃতি রোমন্থন করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার মস্তিষ্ক বেশ সক্রিয় থাকবে।
পাজল বা ওয়ার্ড
গবেষণায় দেখা যায় যাদের নিয়মিত পাজল সমাধান, স্ক্রাবল, সুডোকো মেলানোর অভ্যাস রয়েছে তাদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি কর্মক্ষম। যখন খেলা হয় তখন মস্তিস্কের স্মৃতি এলাকাগুলো সহ পুরো মস্তিস্কের সমস্ত স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয় যা কিনা স্মৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও তাদের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা জনিত সমস্যাও হয় না।
বই পড়া
প্রায় সকল বিখ্যাত ব্যাক্তিদের জীবনী থেকে জানা যায় যে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটি বিষয় কমন ছিল, তা হলো তারা সবাই প্রচুর বই পড়তেন। বই পড়া হচ্ছে মস্তিষ্কের সবচাইতে ভালো ব্যায়াম। বই পড়ার বিষয়টি মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন যাই হোক না কেন, অবসর সময়ে তা পড়ে নিলে মস্তিষ্কের বেশ ভালো ব্যায়াম হয়। এতে করে স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়।
নতুন ভাষা শেখা ও লেখা
নতুন একটি ভাষা শেখা এবং লেখার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে তেমনই কমে যায় স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা। নতুন একটি ভাষা শেখা, বোঝা এবং প্রয়োগ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ে যা স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল হতে বাধা দেয়।
নতুন কিছু করুন
আপনার প্রতিদিনকার কাজের পরিধি থেকে বের হয়ে নতুন কিছু করুন। নতুন কাজ আপনার মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করবে। একটি কাজের মধ্যে নিজেকে বেঁধে ফেলবেন না। নতুন কাজ আপনার বুদ্ধিমত্তাকে বৃদ্ধি করার সাথে সাথে মস্তিষ্ককে আরো কর্মক্ষম করে তোলে। যেমন আপনি হয়তো প্রতিদিন সকালে উঠে ডানহাত দিশে ব্রাশ করেন, ডানহাত দিয়ে বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন। কাল থেকে তা না করে আপনি বামহাত ব্যবহার করতে পারেন, এটাও নতুন বা ভিন্ন কাজের অন্তর্ভুক্ত।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। আপনি যতক্ষণ ব্যায়াম করবেন, ততক্ষণ আপনার মস্তিষ্কে নতুন কোষ তৈরি হয়ে থাকে। ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির সবচেয়ে সহজ এবং ভাল উপায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার
আমাদের শরীরের যেমন জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে,তেমনি ব্রেনেরও জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে। আমরা সবাই জানি ফল, শাকসবজি, মাছ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ফল, শাকসবজির সাথে ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার, বাদাম, বিনস, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়োর বীচি, সামুদ্রিক মাছ, রঙিন ফল, গ্রীণ টি ইত্যাদি খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ক্যালকুলেটর ব্যবহার বন্ধ করুন
ছোটখাটো হিসাব করার জন্য ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা বন্ধ করুন। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বা ক্যালকুলেটরের উপর নির্ভরতা আমাদের মস্তিষ্ককে অলস করে দিচ্ছে। এটা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট করার জন্য দায়ী।
পরিমিত ঘুম
প্রতিদিন নিয়মিত ঘুম মস্তিষ্ক সক্ষম রাখার জন্য খুবই কার্যকরী। কারণ ঘুমের মধ্যে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। আর আমরা সারাদিন যে সকল কাজ করি, পড়াশুনা করি বা যা কিছুই করিনা কেন, যখন আমরা ঘুমাই তখন ঐ তথ্যগুলো আমাদের মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে কনভার্ট হয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভাল ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে। ঘুমের সময় সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যগুলোকে মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করতে থাকে। আর ঘুমকে বলা হয় মেমোরি চার্জার। ঘুমের সময় আপনার মস্তিষ্ক পরবর্তী স্মৃতি ধরার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে।