জানিস ওর গার্লফ্রেন্ড/ বউ ওর চাইতে বয়সে বড়, দেখতে একদম খালাম্মা লাগেঃ পর্ব-২

আজকের লেখাটির প্রথম পর্ব যদি পড়ে না থাকেন, তবে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
জানিস ওর গার্লফ্রেন্ড/ বউ ওর চাইতে বয়সে বড়, দেখতে একদম খালাম্মা লাগেঃ পর্ব-১

অনানুষ্ঠানিক অনলাইন জরিপের প্রশ্ন আর উত্তরগুলো যদি একটু ভাল করে লক্ষ্য করি আমরা, তাহলে আমাদের সমাজের ছেলেদের ও মানুষের মানসিকতার একটা ক্ষুদ্র অংশ আমাদের চোখে পড়বে। আচ্ছা এই প্রশ্ন আর উত্তরগুলো থেকে কি কোন অসামঞ্জস্যতা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে? একটু দেখুন তো বয়সে বড় মেয়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ছেলেরা ভাবে বয়সে বড় মেয়ে বিয়ে করলে মেয়েদের বয়স্ক লাগবে, ভবিষ্যৎ যৌন জীবনে সমস্যা হবে, মেয়েদের ভাবনার পরিপক্কতা বেশী থাকবে তাই সংসার জীবনে ঝগড়া বিগ্রহ লেগেই থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি ।

কিন্তু আমাদের সমাজে যখন একটা বেশী বয়সী ছেলে একটা কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে তখন কি সেই মেয়েটি বা আমাদের সমাজের মানুষগুলো বা সেই মেয়েটির অভিভাবকরা এটা কখনও চিন্তা করে যে, ছেলেটিকে কিছুদিন পর দেখতে বুড়ো লাগবে, মেয়ের চাইতে ছেলের ভাবনার পরিপক্কতা বেশী হবে তাই বোঝাপড়া হবে না , ছেলেটির বয়স বেশী হলে তারও যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে, ছেলেটির বয়স হলে মেয়েটিরও Ego & Power problem ইত্যাদি হতে পারে । এগুলো কি ভাবা হয় মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে? ভাবা হয় না তো !

কিন্তু তার মানে কি বেশী বয়সী ছেলের সাথে কম বয়সী মেয়ের বিয়ে হলে এসব সমস্যা হয় না ? অবশ্যই হয় । কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে এসব ভাবা হয় না কারন বিয়ের পর মেয়েদেরকেই সবকিছু মানিয়ে নিতে হয় । বলা হয়ে থাকে মেয়েরা হচ্ছে মায়ের জাত তাই তাদের সব সহ্য করে নিতে হয়।

খুব দূরে যেতে হবে না, ছেলেরা যদি নিজের মা বাবা বা সমাজের আশেপাশে চোখ রাখে তাহলেই এমন অনেক উদাহরণ দেখতে পাবে যেখানে, বাবাটি সবসময় মাকে অসম্মান করে কথা বলছে অথবা মায়ের মতের কোন মূল্য দিচ্ছে না, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলছে, সন্তানকে মায়ের একাই লালনপালন করতে হচ্ছে কিন্তু আবার বাবাই সন্তানের বেশীরভাগ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে  ইত্যাদি ইত্যাদি । এটা বেশীরভাগ সংসারেরই স্বাভাবিক একটি চিত্র। ব্যতিক্রম কিছু থাকতে পারে যেখানে এমন হয় না।

যাইহোক, আমরা ব্যতিক্রম নিয়ে এখানে কথা বলছি না। তাহলে এসব বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কি মায়ের বয়স বেশী ছিল তাই তাদের মধ্যে এত সমস্যা হচ্ছে? যদি উত্তর “না” হয় তবে কি কারনে এমন হচ্ছে? একটু ভেবে দেখুন তো । আমাদের বেশীরভাগ মা বাবার বয়সের তারতম্য অনেক বেশী । মায়ের বয়স ২০ তো বাবার বয়স ৩৫ বা ৩০ বা তারও উপরে।  এখানে তো মা নামক মেয়েটির বয়স বাবা নামক ছেলেটির চাইতে অনেক কম তবুও কি কারনে এমন সমস্যা হচ্ছে?

আর যৌন জীবন নিয়ে যে ভয় বা বেশী বয়সী মেয়েদের মানসিক পরিপক্কতা নিয়ে যে মাথা ব্যাথা আমাদের সমাজের মানুষের বা আমাদের ছেলেদের বা কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়েদেরও; তা আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত???

যৌন জীবন নিয়ে যে ভয় ছেলেদের, সেটা ঠিক কি কারনে তা আমার বোধগম্য নয় । কারণ, একটা বয়স পর ছেলেদেরও যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।  তারাও সক্ষম থাকার পরেও তাদের সংগীকে যৌন সুখ দিতে অক্ষম হতে পারে ।  মেয়েদের ক্ষেত্রে যেটা হয় ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে তাদের মেনোপজ শুরু হয় । কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, সে যৌন অক্ষম হয়ে যায়। মেনোপজ শুরু হওয়ার অর্থ হল যে, মেনোপজ শুরু হওয়ার পর থেকে মেয়েরা আর সন্তান উৎপাদন করতে পারবে না।  সন্তান উৎপাদন করতে না পারাটাকে যদি কেউ যৌন অক্ষমতা ভাবেন তাহলে আসলেই বলার আর বোঝানোর কিছু থাকে না। মেনোপজ শুরু হওয়ার কয়েক বছর মহিলাদের একটু আবেগীয় ওঠানামা হয়,নতুন শারীরিক পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। কিন্তু কয়েক বছর পর সেটা আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়। মেনোপজ শুরু হলে মেয়েরা শুধু সন্তান উৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু যৌন সক্ষম থাকে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আচ্ছা একটু ভেবে বলুন তো ৪৫-৫০ বছর বয়সে কয়জন সন্তান নিতে আগ্রহী হয়? একটা মানুষ কি সারাজীবন শুধু সন্তান উৎপাদন করেই যায় বা একটা দম্পতি কতবছর পর্যন্ত সন্তান নিতে আগ্রহী থাকে? যদি কারও জীবনের লক্ষ্যই থাকে যে, সে সারাজীবন ব্যাপী সন্তান উৎপাদন করে যাবে তাহলে সে ভিন্ন কথা। তাহলে হয় সেই ব্যক্তিকে তার সংগীনির ৪৫-৫০ বছর পর পর একটা করে নতুন বিয়ে করতে হবে নাহয় তার চাইতে অন্তত পক্ষে ২০- ৩০ বছর ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। হয়ত এজন্যই ছেলেরা তাদের চাইতে ছোট মেয়ে খোঁজে বিয়ের জন্য। যেন তারা তাদের জীবদ্দশায় সারাজীবনব্যাপী সন্তান উৎপাদন করতে পারে ।

এখন চলুন সামনে এগোনোর আগে আরেকটি না বলা, না জানা সত্য জেনে নিই । এই প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে একটু আধটু পড়ালেখা করতে হয়েছে আমাকে । কয়েকজন মেডিকেল ছাত্র ছাত্রীর সাথে কথা বলতে হয়েছে । তো মেয়েদের Menopause সম্পর্কে পড়ার জন্য ইন্টারনেটে সার্চ দিতে গিয়ে Menopause বানান ভুল করে Manopause লিখতেই আমার সামনে এক নতুন জগত উন্মোচিত হল । নিজের অজান্তেই আমার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল, ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল আর মুখ সামান্য হাঁ হয়ে গেল ।

ভুল করে Manopause লেখার পর দেখলাম শুধু মেয়েদেরই Menopause হয় বিষয়টা তা নয়। ছেলেদেরও Manopause হয় এবং সেটা শুরু হতে থাকে ছেলেদের ৪০ বছর পর থেকে।

Female menopause এর ক্ষেত্রে যা হয় মেয়েদের Estrogen Hormone কমে যায়। আর এজন্য মেয়েদের Hot Flashes, Mood Swing ইত্যাদি হয় । আর ছেলেদের ক্ষেত্রে যা হয় ছেলেদের Testosterone Hormone কমে যায় । এজন্য ছেলেদের মধ্যে irritability, concentration problem, loss of energy ইত্যাদি দেখা দেয়। ছেলেদের বয়স ৩৫ বছর পর থেকে ক্রমান্বয়ে প্রতি বছর Testosterone Hormone এর মাত্রা কমতে থাকে ১%-১.৫% শতাংশ করে । কি আশ্চর্য লাগছে? আমরা কয়জন জানি এই তথ্য যে, ছেলেদেরও Manopause হয়? এটা না জেনেই শুধু মেয়েদের menopause নিয়ে আমাদের ছেলেদের বা আমাদের সমাজের মানুষদের অহেতুক চিন্তার কোন শেষ নেই।

Male Manopause  বিষয়ে বিস্তারিত প্রবন্ধ নিয়ে পরে হাজির হব। এখন আমাদের মূল বিষয়ে ফেরা যাক। তাহলে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের আগেই ছেলেদের Manopause প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তাহলে শুধু মেয়েদের menopause নিয়ে অহেতুক যৌনভয় কি কারনে? বরং মেয়েদের কি আরো বেশী যৌনভয়ে ভীত হওয়া উচিত নয় বেশী বয়সী ছেলেদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে ? কারন ছেলেদের Manopause প্রক্রিয়াটি মেয়েদের চাইতে অনেক আগেই শুরু হয়ে যাচ্ছে । সুতরাং ভবিষ্যৎ যৌন জীবন চিন্তা করে যারা ভীত হোন তারা ভয় থেকে বের হয়ে এসে একটু পড়ালেখা করুন। সত্যকে জানুন। হুজুগে মেতে কুসংস্কারে ডুবে মারা যেয়েন না দয়া করে। তার চেয়েও বড় কথা; সঠিক তথ্য না জেনে অন্যকে আতংকিত করেন না।

(চলবে…)