চাঁদ আমাদের একমাত্র উপগ্রহ এবং এটি আমাদের স্বংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। কখনও কি ভেবে দেখেছেন যদি এই চাঁদটিই না থাকতো তবে মানবজীবনে এর কি কি প্রভাব পড়তো? ঠিক এরকম দশটি সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবো।
১. অন্ধকারময় রাত্রি:
ভেবে দেখুন আকাশে চাঁদ নেই। আপনি আকাশে হাজার হাজার নক্ষত্র দেখতে পাচ্ছেন। এমনকি মিল্কিওয়েও গ্যালাক্সিও দেখতে পাচ্ছেন তাও খালি চোখে। হ্যা, এটা সম্ভব। কারণ আকাশের একমাত্র উজ্জ্বল বস্তু তারাই হবে। আপনার চারদিক সম্পূর্ণ অন্ধকার। অমাবস্যার রাত্রীর ন্যায়। আমাদের চাঁদ সূর্যের ৪,০০,০০০ ভাগের ১ ভাগ উজ্জ্বল। কিন্তু সেই উজ্জ্বলতা আর থাকবেনা। তখন শুক্র গ্রহ বা শুক তারা বা সন্ধ্যাতারা যাই বলা হোক না কেন সেটিই হবে আমাদের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম বস্তু। শুক্র গ্রহের উজ্জ্বলতা চাঁদের ১৪,০০০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। তখন আপনি রাত্রে টর্চ লাইট ছাড়া বাহির হতে পারতেননা। কিন্তু একটা স্বস্তির বিষয় তখন আমাদের চোখের বিবর্তন এমনভাবে ঘটতো যাতে অন্ধকারেও ভালোকরে দেখতে পারি।
হতে পারে তখন চিরচেনা রাত্রী অন্যরকম হতো।
২. চন্দ্রগ্রহণ নামের কোনো শব্দই থাকতো না:
চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ এই দুই শব্দের সাথে আমরা পরিচিত। কিন্তু চাঁদই যদি না থাকে তবে কি আর চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ ঘটতো?
৩. দিন হবে ৬ হতে ৮ ঘণ্টার:
২৪ ঘণ্টায় ১ দিন এটা তখন অস্তিত্বহীণ একটা বাক্য হবে। আর ৩৬৫ দিনে বছর হবে পাগলের প্রলাপ। তাহলে সময়ের এত পরিবর্তনের কারণটা কি? উত্তর “টাইডাল ফ্রিকশন”। পূর্বে পৃথিবী নিজ অক্ষে খুবই দ্রুত আবর্তিত হতো। কিন্তু চাঁদের আবির্ভাবের পর হতে ধীরে ধীরে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমতে থাকে। কারণ চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে জোয়ার ভাটার টান পৃথিবীর গতি কমিয়ে দেয়। ফলে এক হাজার দিনে এক বছর হবে চিরন্তন সত্য।
৪. পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া:
যেহেতু চাঁদ নেই ফলে ভাটাও নেই ফলে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা আজ হতে তিন গুণ বেশি বেড়ে যাবে। তখন কি বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকতো?
৫. ভারসাম্যহীন অক্ষ:
আমরা নিশ্চয় জানি পৃথিবী তার অক্ষে ২৩.৫° কোণে হেলে আছে। কিন্তু যদি চাঁদ না থাকতো তবে পৃথিবী তার অক্ষে আজ প্রায় এতটা স্থির হতো না। যেমন মঙ্গলের অক্ষ প্রায় সময় ১৫° থেকে ৩৫° কোণে হেলে থাকে। তবে তার মানে এ নয় যে পৃথিবী তার অক্ষে একেবারে স্থির। এরও ২৩° থেকে ২৬° এর মধ্যে পরিবর্তিত হতে থাকে। তবে তা লক্ষ বছরে একবার। যদি চাঁদ নাই থাকতো তবে আমরা আজ যে ঋতু দেখছি সেটা আর পেতামনা।
৬. স্বংস্কৃতির পরিবর্তন:
সেই হাজার হাজার বছর ধরে চলে স্বংস্কৃতিতে যেভাবে চাঁদের বর্ণনা পাওয়া যায় তখন সেটা আর হতো না। হতে পারে তারা স্বংস্কৃতি লেখতো শুকতারা নিয়ে।
৭. রোমান্টিক রাত্রীর মজাই থাকতো না:
ভাবুনতো দুই লাভ বার্ড রাত্রে বাইরে বসে আসমানের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বেচারা প্রেমিক কোনো ভাষাই পাচ্ছেনা যে কি বলে প্রেমিকাকে ইম্প্রেস করবে। যদি চাঁদ থাকতো তবে হয়তো বলতো আকাশের চাঁদ এনে তোমার হাতে দিতাম, কিন্তু এখনতো চাঁদ নেই তবে হাতে কি দিবে? বাদামের ঠোঙ্গা!!
৭. চান্দ্র মাস গণনা:
তখন এটাই হতো অস্তিত্বহীণ একটা গণন পদ্ধতি।
৮. চান্দ্রভিযান নিয়ে চুলকানি:
চাঁদ না থাকলে নাসার চান্দ্রভিযান ও হতো না। এর ফলে যাদের এই অভিযান নিয়ে চুলকানি আছে তাদের চুলকানিও থাকতোনা।
৯. পৃথিবীর ঢাল থাকতো না:
চাঁদ বলতে গেলে পৃথিবীর ঢাল এর মতো। এটি যেকোনো প্রকারের গ্রহাণুর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু যদি চাঁদ না থাকে মহাকাশের সমস্ত আঘাত পৃথিবীরই সহ্য করতে হবে। তখন আমাদের কি হতো!!
১০. প্রাণের সংঙ্গা কেমন হতো:
সেটাতো অজানা।চাঁদ না থাকার পরও যদি প্রাণের অস্তিত্ব থাকতো তবে তা এখনকার মতো বিবর্তিত হতো না। প্রাণের সংঙ্গাটাই অন্যরকম হতো।
এজন্য আসুন, চাঁদকে এসবের জন্য একটা ধন্যবাদ জানাই।