রবার্ট কর্নেলিউয়াস : ইতিহাসের ১ম সেলফি তোলা ব্যক্তিটি

সেলফি। আমাদের প্রতিদিনের একটি অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় শব্দ। এক একটা সেলফি বহন করে হাজারো রকমের স্মৃতি। কতশত ছোটবড় গল্প লুকিয়ে থাকে সেলফিগুলোর পেছনে। বর্তমান যুগে আমাদের নিত্য দিনের গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সেলফি। উঠতে,বসতে,ঘুমুতে সব জায়গায় সেলফি তুলে বেড়াই আমরা। কিন্তু কখনও কি জানতে ইচ্ছে করেছে যে বিশ্বের প্রথম সেলফিটি কে তুলেছিলো???যদি আপনার জানতে ইচ্ছে করে যে,বিশ্বের প্রথম সেলফিটি কে তুলেছিলো,তাহলে এ পোস্ট আপনার জন্য।

অনেকে মনে করেন যে বিশ্বের প্রথম সেলফিটি তোলা হয়েছিলো হয়তো ২০০৩ সালে। কিন্তু না। প্রথম সেলফিটি তোলা হয়েছিলো, তারও বহু বছর আগে। এবং মজার ব্যাপার হলো সে সময় কোন সেলফি ক্যামেরাও আবিষ্কৃত হয়নি। এবং ক্যামেরাগুলোও ছিলো ভীষন রকমের স্লো আর জটিল রকমের।

সময়টা ছিলো ১৮৩৯।

জায়গার নাম? আমেরিকা।

এবং ফটোগ্রাফারের নাম ছিলো রবার্ট কর্নেলিউয়াস। তার ধারণ করা সেলফিটিকেই প্রথম সেলফি বলা হয়। অনেকে আবার প্রথম লাইট ফটোগ্রাফিও বলে থাকেন।তিনি ছিলেন প্রথম ব্যাক্তি, যে নিজে ক্যামেরা অপারেট করে নিজের ছবি নিয়েছিলেন।

blank
Robert Cornelius

১৮০৯ সালে জন্ম নেয়া এ ফটোগ্রাফারের ছিলো রসায়নের প্রতি অদ্ভূত রকমের ভালোবাসা।রসায়ন নিয়ে অল্প বিস্তর পড়াশোনা করতেন তিনি। পাশাপাশি বাবার ধাতুর ব্যাবসাতেও যোগ দেন। এবং অল্প সময়ের মধ্যেই একজন বিখ্যাত ও সফল ব্যাক্তিতে পরিনত হন তিনি।

সে সময়ের একজন বিখ্যাত উদ্ভাবক ছিলেন জোসেফ স্যাকটন। ফিলাডেলফিয়ার সেন্ট্রাল হাইস্কুলের দ্যাগুরিটাইপের জন্য তিনি রবার্টকে একটি রূপোর চাকতি বানানোর কথা বলেন।মূলত সে ঘটনার পর থেকেই ফটোগ্রাফির প্রতি রবার্টের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো।

ডিগেরোটাইপ ছিলো জনসাধারনের জন্য উপলব্ধ প্রথম ফটোগ্রাফি প্রক্রিয়া। তার আবিষ্কারক লুই – জ্যাক – মেন্ডে দাগুরের নামানুসারে এর নামকরন করা হয়েছিলো। ডিগেরোটাইপ আবিষ্কারের প্রায় বিশ বছর পর তা ১৮৩৯ সালে বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছিলো।

প্রক্রিয়াটি ছিলো বেশ জটিল ধরনের। ডিগেরোটাইপিস্ট / ফটোগ্রাফাররা আয়নার মতো দেখতে রূপালী ধাতুর পাত ব্যবহার করতো। ধাতুর এ পাতগুলো হতো ভীষন হালকা আর সংবেদনশীল। ডিগেরোটাইপ পদ্ধতিটি ছিলো প্রচন্ডরকমের ধীরগতিসম্পন্ন। একটি ছবি উঠতে প্রায় ৩-১৫ মিনিট সময় লাগতো। আলোর উপর নির্ভর করতো ছবি উঠার সময়কাল। আলো বেশি হলে দ্রুত ছবি উঠতো। আর কম হলে ছবি উঠতে বেশী সময় লাগতো। এ প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানার পর কর্নেলিয়াস ঠিক করলেন যে,তিনি এ ডিগেরোটাইপ প্রক্রিয়াকে আরও নিঁখুত আর উন্নত করবেন। এবং.. একসময় রসায়ন ও ধাতুবিদ্যার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি উন্নত ডিগেরোটাইপ তৈরি করে ফেলেন।

blank
The second selfie of Robert Cornelius

তখন ডিগেরোটাইপের জন্য প্রয়োজন পড়তো প্রচুর আলোর। এর ফলে রবার্টকে বাইরে কাজ করতে হতো অনেক।বিখ্যাত প্রথম সেলফিটি যেদিন তোলা হয়েছিলো, সেদিন ছিলো ১৮৩৯ সালের অক্টোবর মাসের এক দুপুর । রবার্ট তার দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে ডিগেরোটাইপ নিয়ে খুটখুট করছিলেন। ছবির জন্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন অপেরা গ্ল্যাসের সাথে লাগানো ছোট্ট একটি বক্স। ছোট্ট সে বক্সটির সাথে ছিলো একটি লেন্স।

ছবি তোলার প্রক্রিয়াটি ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ার কারণে তরুন ফটোগ্রাফারের হাতে ছিলো পর্যাপ্ত সময়। তিনি দৌড়ে গিয়ে প্রথমে ক্যামেরার শ্যাটার খুলে ফেলেন। যতক্ষন প্রয়োজন ক্যামেরার সামনে থাকেন।তারপর আবার শাটার বন্ধ করে ফেলেন।এবং এভাবেই তোলা হয়েছিলো বিশ্বের প্রথম সেলফিটি।

ছবিটিতে দেখা যায় রবার্ট এলোমেলো চুল নিয়ে অনিশ্চিতভাবে তাকিয়ে আছেন।তার দাঁড়ানোর ভঙ্গি কিছুটা বাঁকানো এবং একপাশে সরে আছেন। হাত দু’টো ভাঁজ করা। ছবির পেছনে গুটি গুটি হাতে রবার্ট লিখে দিয়েছিলেন – ” The first light picture ever taken.1839.”

এই সাফল্যের পর ১৮৪১-১৮৪৩ পর্যন্ত রবার্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দু’টি ফটোগ্রাফি স্টুডিও স্থাপন ও পরিচালনা করেন।পরে ফটোগ্রাফির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় এবং অন্য ফটোগ্রাফাররা আরও স্টুডিও তৈরি করার পর রবার্ট তার ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন।হয়তো তিনি ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন।কিংবা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে পারিবারিক ব্যবসা থেকে তিনি বেশী লাভবান হবেন।তাই ফটোগ্রাফি ছেড়ে আবার পারিবারিক ব্যবসায় মন দিয়েছিলেন।