মনে পড়ে গত সপ্তাহে জেনেছিলাম চীন দেশ সম্পর্কে কিছু আজব ও মজার তথ্য। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের মজাদার, অদ্ভুদ ও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে থাকে। জাপানও তার ব্যতিক্রম নয়। জাপানে এমনকিছু ঘটনা ও নিয়মনীতি আছে যা বিশ্বের আর কোথাও আছে বলে জানা যায় না। আজ চলুন সেসব জানার জন্য বাংলাহাব.নেট এর সাথে জাপান ঘুরে আসি।
১। অফিসে ঘুমানো
সাধারণত আমাদের দেশে অফিসে ঘুমানো খুবই খারাপ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু জাপান এর সম্পূর্ণ উল্টো! জাপানে অফিসে ঘুমালে ভাবা হয় ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর কাজের প্রচুর চাপ ছিল। তখন বস এর সামনে তার ভাবমূর্তি খারাপ না হয়ে আরো ভাল হয়! তবে বস এর সামনে ভাল সাজার ইচ্ছা কিন্তু জাপানীদেরও মাথায় কাজ করে। তাই অনেকে বস এর সামনে ঘুমের ভান করে থাকে। জাপানের এই অদ্ভুদ নিয়ম সারা বিশ্বের আলোনায় রয়েছে।
২। কর্মী হয়রানির অভিনব পদ্ধতি
জাপানে শ্রম আইন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল। এজন্য কোন কোম্পানি চাইলেই তার কর্মী বিদায় করতে পারে না। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা গুণতে হবে!
তাই বলে কোম্পানির মালিক পক্ষরাও কিন্তু বোকা নন। তারা যে কর্মীকে ছাঁটাই করতে চান তাকে বিরক্তিকর কাজ দিয়ে থাকেন। হতে পারে সারাদিন টিভি পর্দার সামনে বসিয়ে রাখা। এসবের জন্য আবার আলাদা শাস্তি কক্ষ রয়েছে।
৩। সন্তান দত্তক গ্রহণ
সন্তান দত্তক বা পালক সন্তান গ্রহণতো পুরো বিশ্বেই রয়েছে। জাপান ও আমেরিকায় এই সংখ্যা সর্বাধিক এবং গ্রহণকৃত সন্তান হয় বয়স্ক! জাপানে মোট দত্তক গ্রহণের শতকরা ৯৮ ভাগের বয়স ২০-৩০ বছর! অর্থাৎ তারা বয়স্কদের দত্তক গ্রহণ করে! ব্যবসায়িক পরিবার কিন্তু ছেলে নেই, দেখবেন দত্তক নিয়েছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে, যদি নিজের ছেলে বাবা-মা রাখতে অক্ষম হয় তবে অন্য একজনের ছেলে নিয়ে আসে।
৪। হিকিকোমোরী
জানা যায় জাপানের লোকেদের নিজেদের অন্যদের থেকে আলাদা আলাদা রাখার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। জাপানী তরুণরা চলার পথে আলাদা স্থান, ঘরের ভিতর সীমিত কক্ষ নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে। এই ধরনের যুবকের সংখ্যা ৭-১০ লাখ পর্যন্ত জানা যায়। এই যুবকগুলো বাইরের জগতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকে। একে হিকিকোমোরী বলে।
৫। ক্যাপসুল হোটেল
অনেক সময় সমস্যা মোকাবেলায় বা দুশ্চিন্তায় আরামের জন্য একক বিছানায় থাকার প্রবণতা চলে আসে। জাপান এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় ক্যাপসুল হোটেল তৈরি করে থাকে যেখানে শুধুমাত্র একটি বিছানার সমপরিমাণ স্থান রয়েছে। তবে এই ঘরে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। আরেকটি কথা, এই ক্যাপসুল হোটেল শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য তৈরি করা হয়।
৬। দাঁতের ত্রুটিপূর্ণ আকার দেয়া
আমাদের দেশে সাধারণত দাঁত সঠিক ও সুন্দর গঠনের হতে হয়। অন্যথায় দাঁত নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে নানা ধরনের কথা শোনা লাগতেই পারে।
কিন্তু জাপানে গত কয়েক বছর আগে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে যুবক-যুবতীরা তাদের দাঁতের গঠন সৌন্দর্য না বাড়িয়ে ত্রুটিপূর্ণ আকার দিয়ে সৌন্দর্য আরো কমিয়ে ফেলত!
৭। পাহাড়
জাপান অনেক উন্নত দেশ। হয়তো ভাবতে পারেন তাদের জমি অনেক উর্বর। যেখানে প্রচুর ফসল ফলে। কিন্তু তা নয়। জাপানে শতকরা ৭০ ভাগ ভূমি হচ্ছে পাহাড়ী। এছাড়াও দেশটিতে ২০০ এর মত আগ্নেয়গিরী রয়েছে!
৮। বাচ্চাদের পরীক্ষা নেই
আমাদের দেশে বাচ্চাদের কতগুলো পরীক্ষা দিতে হয় ভাবুনতো? প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীতেই পরীক্ষা। আরো আছে বৃত্তি পরীক্ষা কিংবা পিএসসি। কিন্তু জাপানে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না!
৯। পত্রিকাগুলোয় শুধুই শিক্ষণীয় বিষয়
জাপানে স্বাক্ষরতার হার শতকরা ১০০ ভাগ। তাদের পত্রিকায় আমাদের দেশের মত সংবাদ দূর্ঘটনা, রাজনীতি, সিনেমার সংবাদ ইত্যাদি ছাপানো হয় না। সেখানে শুধু প্রয়োজনীয় ও আধুনিক জগৎ সম্পর্কে সংবাদ ছাপা হয়।
১০। ছাত্র-শিক্ষক ক্লাস পরিষ্কার করে
আমাদের দেশে কি কখনও এটা কল্পনা করা যায়? হাতে ধূলাবালি লাগবেতো! কিন্তু জাপানে ছাত্র-শিক্ষক একইসাথে ক্লাসরুম পরিষ্কার করে।
১১। কমিক্স বই
জাপানে মোট প্রকাশিত বইয়ের ২০% হচ্ছে কমিক্স বই।
১২। ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের কথা শুনলে কিংবা আমাদের দেশে ভূমিকম্প হলে প্রথমে যে দেশটির কথা আপনার আমার স্মরণে আসে সেটি হচ্ছে জাপান। জাপান সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভূমিকম্প নিয়ে অবশ্যই কিছু বলতে হবে। আপনি জানেন কি জাপানে প্রতিবছর প্রায় ১৫০০ ভূমিকম্প হয়? অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৪টি! তাই তারা অধিকতর ভূমিকম্পের ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকায় কাগজের ঘর নির্মাণ করে।
১৩। পারমানবিক বোমা আক্রান্ত দেশ
জাপান হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে পারমানবিক বোমা নামক অমানবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। জাপানের সেই হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে এখনও ফসল ফলে না। বিকলাঙ্গ বাচ্চা জন্ম হয়!
১৪। হত্যা
ধারণা করুন তো জাপানে হত্যাকাণ্ড কতটা হতে পারে? শতকরা ১ জন নাকি হাজারে ১ জন? যদি ভাবেন হাজারে একজন তাহলে ভুল ভাবলেন। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, জাপানে প্রতি ২ লক্ষ জনে একজন খুন হয়!
জানলেন তো জাপান নিয়ে অবাক করা তথ্য। আগামীতে হয়তো অন্যকোন দেশ নিয়ে লিখব। তাহলে ততক্ষন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবেন আশা করছি….
লেখকঃ ডা. সাইফুল ইসলাম সোহেল