কোরিয়ান টিভি সিরিজ নিয়ে প্রথম দুই পর্বের (প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব-এর লিংক) লেখায় আপনাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় আজ এই সিরিজের তৃতীয় কিস্তির লেখা নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি আগের দুই পর্বের মত এই পর্বও আপনাদের ভাল লাগবে।
The Heirs
বড়লোকের ছেলের সাথে গরীবের মেয়ের প্রেম নিয়ে ট্রিপিক্যাল কোরিয়ান ড্রামা। তবে যেহেতু কোরিয়ান, তাই এত সহজে ট্রিপিক্যাল বলার জো নাই! বহুদিন ধরে অনেকগুলো পার্ট টাইম জব করে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে বোনকে দেখতে আমেরিকায় পাড়ি জমায় অষ্টাদশী চা উন চ্যাং (Park Sin Hye)। কিন্তু সেখানে গিয়ে তার মাথায় হাত। বোনের যে ঠিকানা তার কাছে কাছে সেখানে সে থাকে না। কিন্তু এই অচীন দেশে কোঠায় ঊঠবে সে এখন? আরে নায়ক আছে না? উদ্ধারকর্তা হিসাবে ঘটনাস্থলে হাজির হয় তান পরিবারের ছোট ছেলে কিম তান (Lee Min HO)। দুজনের মাঝে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এদিকে কয়েক দিন থেকে চা উন কোরিয়ায় ফিরে আসে। চা উন ফিরে যাওয়ায় কিমের আর কিছু ভাল লাগে না। তাই সেও দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
এতটুকু পর্যন্ত ট্রিপিক্যালই, কিম দেশে ফেরার পর থেকেই কাহিনী নতুন মোড় নেয়। কিমের বাবার দুই সংসার। কিমের মা ছোট বউ, তারে কেউ দেখতে পারেনা। কিমের বড় ভাই যে করেই হোক পুরো কোম্পানী নিজের করে পেতে চায়, কিন্তু কিমের মা ছেড়ে দেয়ার পাত্রী নয়। নিজের ছেলের অধিকার কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু এসব নিয়ে কিমের কোন মাথাব্যথা নেই, তার জীবনের এক মাত্র লক্ষ চা উনের মন জয় করা। কিন্তু চা-র মা কিমদের বাসায় কাজ করে। চাকরানীর মেয়ের সাথে নিজের ছেলের প্রেম কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না কিমের বাবা। তাই চা-কে চিরতরে দেশের বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু কিমও নাছোড়বান্দা। চা-কে তার চাই-ই চাই, প্রয়োজনে সে উত্তোরাধিকারও ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কিমের মা আবার তা চান না। উফফ… হাবিজাবি! রোমান্স, সাসপেন্সে ভরপুর ড্রামাটি নামিয়ে নিতে পারেন এইখান থেকে।
I Hear Your Voice
নয় বছর বয়সে নিজের বাবাকে চোখের সামনে খুন হতে দেখে সু হা (Lee Jung Suk)। আর এক্সিডেন্টের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলগার্ল হেই স্যাং (Lee Bo Young)। আদালতে যখন বিচার হচ্ছিল, হেই স্যাং-এর সাক্ষীর কারণে খুনী মিন জুন কুকের দশ বছরের সাজা হয়। তখন আদালতেই মিন জুন কুক হেই স্যাং-কে থ্রেট দেয়, ‘দশ বছর পর আমি বের হই, তারপর খেলা হবে!’ সেদিন সু হা হেই স্যাং-কে জড়িয়ে ধরে প্রতিজ্ঞা করে ‘আমি তোমাকে রক্ষা করবো।’ এক্সিডেন্টে পাওয়া মানসিক শকের কারণে তার ভেতরে অদ্ভুত একটা ক্ষমতার সৃষ্টি হয়। সে মানুষের মনে কথা শুনতে পাওয়া শুরু করে।
দশ বছর পেরিয়ে যায়। ততদিনে হেই স্যাং একজন পাবলিক প্রসিকিউটর। জেলে থেকে ছাড়া পেয়ে মিন জুন ফিরে আসে প্রতিশোধ নিতে। দৃশ্যপটে হাজির হয় সু হা-ও। প্রেম, সংঘাত, অপরাধ আর আইন নিয়ে চমৎকার এই ড্রামাটি নামিয়ে নিতে পারেন এইখান থেকে।
Oh My Ghost
আমি নিজের কথা বলি। হরর কিংবা সুপারন্যাচারাল জনরার আমি খুব ভক্ত ছিলাম না। কিন্তু কোরিয়ান সুপারন্যাচারাল দেখা শুরু করার পর থেকে আমি রীতিমত হররের ভক্ত হয়ে গেছি! ভূতগুলো এত্ত কিউট, দেখলেই শুধু প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করে! না বং সুন (Park Bong Young) একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করে। তার বিশেষত্ব হল সে ভূত দেখতে পায়! ভূতের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেনা, তাই কাজের সময় সারাদিন ঢুলে আর বসের গালি খায়। তার বস কাং সু উ (Cho Jung Seok) কাজের ব্যাপারে খুবই খুঁতখুঁতে, তাই না বংকে সারাদিন ঝাড়ির উপরে রাখতে ছাড়ে না! এদিকে ঝাড়ি খেতে খেতে না বং কখন যে তার বসকে ভালোবসে ফেলেছে তা সে নিজেই জানে না! এই অবস্থায় কিউট একটা ভার্জিন ভূত সিন সুন তাকে এসে প্রস্তাব দেয় যে, ‘তুমি যদি আমাকে তোমার উপর ভর করতে দাও, তাহলে আমি বসকে তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াবো! বিনিময়ে আমি শুধু ভার্জিনিটি হারাতে চাই!’ ওহ, সে ভূতের সমস্যা ছিল সে ভার্জিন! মরার আগে অনেক অতৃপ্তি নিয়ে মরে সে, তাই পৃথিবী ছেড়ে যেতে পারছে না! একবার তৃপ্ত হয়ে গেলেই যেতে তার আর সমস্যা হবে না! না বং ভেবে দেখল বিষয়টা তো খারাপ না! সে-ও তার বসকে আপন করে পেল, এদিকে ভূতও মুক্তি পেল। দুজনের জন্যই উইন-উইন সিচুয়েশন। তাই সে খুশি মনেই রাজি হল। কিন্তু বিপত্তি বাধল তখনই, যখন বসকে পটাতে গিয়ে ভূতনী সত্যি সত্যি বসের প্রেমে পড়ে গেল!
চমৎকার এই রোমান্টিক হরর ঘরনার দম ফাটানো হাসির ড্রামাটি নামিয়ে নিতে পারেন এইখান থেকে।
Gu Family Book
কোরিয়ান মিথ অনুযায়ী গুমিহো হল নয় লেজওয়ালা শিয়াল, যারা চাইলে মানুষের রূপ ধরতে পারে। দুই প্রজন্মের দুই গুমিহোর ট্র্যাজিক লাভ লাইফ নিয়ে এই ড্রামা। গোয়ান উং একজন মাস্টারমাইন্ড ভিলেন। যে বা যারাই তার বিপক্ষে যায়, দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তাদের সমস্ত সম্পদ দখল করে নেয় সে। সেই সাথে তাদের ফ্যামিলিও ধ্বংস করে দেয়। এমনই এক ট্র্যাজিক ঘটনার শিকার ছই কাং ছি (Lee Seung Gi)। কিন্তু সব হারিয়েও কাং ছি দমে যাবার পাত্র নয়। নিজ পরিবারের মর্মান্তিক পরিণতির প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর কাং ছি-র একা লড়াই করে যাওয়ার গল্প নিয়ে তৈরি রোমান্টিক-ফ্যান্টাসি-রিভঞ্জ জনরার ড্রামাটি নামিয়ে নিতে পারেন এইখান থেকে।
Scarlet Heart: Ryeo
কোরিয়ানরা বরাবরই হিস্টোরিক্যাল ড্রামা খুব ভাল বানায়। সম্ভবত তাদের ঐতিহ্যবাহী অতীত তাদের এই প্রেরণা জোগায়। গোরিও যুগের রাজা ওয়াং সু (Le Jung Gi) ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তপিপাসু রাজা হিসাবে পরিচিত। সিংহাসনের জন্য সে নির্মমভাবে তার ভাইদের খুন করেছিল। ইতিহাস বইতে তাকে গোরিও যুগের কলঙ্ক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তত এইভাবেই গোরিও যুগের ইতিহাস পড়েছে হা সু (IUO)। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত টাইম হোলের ফাঁদে পড়ে ২০১৬ সালের আধুনিক কোরিয়া থেকে গোরিও যুগে হাজির হয় সে, পরিচয় হয় ওয়াং সু-র সাথে। দেখতে পায় ইতিহাস বইতে যে ভয়ংকর ওয়াং সু-র কথা সে পড়েছিল, এই ওয়াং সু মোটেও সেরকম নয়। ধীরে ধীরে তারা একে অপরের প্রেমে পড়ে। বদমেজেজী ওয়াং সু-কে কোমল মনের প্রেমিক করে তোলে। টাইম হোলের প্রভাব শেষে হা সু আবার বর্তমানে ফিরে আসে। এসে দেখে বদলে গেছে ইতিহাস। ওয়াং সু এখন গোরিও যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা হিসাবে বিবেচিত।
রোমান্টিক ঘরানার চমৎকার এই হিস্টোরিক্যাল ফ্যান্টাসি ড্রামাটি নামিয়ে নিতে পারেন এইখান থেকে।