১৯৬৩ সালের আগস্টের ১৬ তারিখ মিশিগানের ফার্মিংটন হিলের ফ্রেড নেসার আর মেরী নেসার দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয়া শিশুটি ভবিষ্যতে কী করতে যাচ্ছে তা নিয়ে কারো বিন্দুমাত্র কোন ধারণা নিশ্চয়ই ছিল না। লরেন্স জেরার্ড নেসার ওরফে ল্যারি নেসারের আদি পুরুষ ছিল সিরিয়ার নাগরিক। ইউএসএ ন্যাশনাল জিমন্যাস্টিক টিমের অ্যাথলেটিক ট্রেইনার হিসেবে ১৯৮৬ সাল থেকে কাজ শুরু করেন ল্যারি। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিনের উপর ডিগ্রী নেয়ার পর ১৯৯৭ সালে স্পোর্টস মেডিসিনের উপর আরেকটা ফেলোশীপ সম্পন্ন করেন তিনি। দীর্ঘদিন যাবত এই পেডোফাইল ডাক্তার নিজের মানসিক বিকৃতি লুকিয়ে জনসম্মুখে কাজ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার মূল কারণ হিসেবে ভিক্টিমদের চুপ করে থাকাকেই দায়ী করা যায়।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে, অবশেষে দুজন সাবেক জিমন্যাস্ট ল্যারি নেসারের যৌন নিপীড়নের কথা এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের সময় বিবৃতি দেন। আর সেখান থেকেই শুরু ল্যারির জীবনের ধসের। একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে তার বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে আরও তিনজন সাবেক জিমন্যাস্ট ল্যারির বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনেন ‘সিক্সটি মিনিট’কে দেয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে।
অলিম্পিক গোল্ড ম্যাডেলিস্ট ম্যাককাইলা ম্যারোনি যিনি টুইটারে বিখ্যাত হ্যাশট্যাগ #Me Too এর প্রবর্তন করেন, তিনি বলেন ল্যারি তাকে তেরো বছর বয়স থেকে ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ক্রমাগত উত্যক্ত করেছেন। পরবর্তীতে তিনি মামলা দায়ের করেন ল্যারির বিরুদ্ধে।
আদালত কক্ষে ল্যারির উপর রাগে ক্ষোভে হামলা করে বসেন এক ভিক্টিমের বাবা
আবারও ‘সিক্সটি মিনিটস’এর একটি সাক্ষাৎকারে, অলিম্পিক স্বর্ণবিজয়ী অ্যালি রেইজম্যান নেসারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনেন। যখন তার বয়স ছিল মাত্র পনেরো বছর, তার ওপর নিপীড়ন চালায় মানসিক বিকারগ্রস্থ লোকটি।
জাতীয় দলের সাবেক সদস্য ম্যাগি নিকোলাসও একই অভিযোগ আনেন তার ডাক্তারের বিরুদ্ধে। জানা যায়, নিকোলাস এবং তার কোচ সারাহই সর্বপ্রথম ইউএসএর জিমন্যাস্টিক দলে নেসারের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৭ই জুন অফিশিয়ালি অভিযোগ উত্থাপন করেন। এভাবেই একের পর এক বের হয়ে আসতে থাকে নেসারের ঘৃণ্য আচরণের অবিশ্বাস্য কাহিনিগুলো।
না জানি কত শিশু-কিশোরীর ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিলেন এই বিকারগ্রস্থ ডাক্তার, কিন্তু দিনশেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে দুইশো পঁয়ষট্টিজনের মতো। তার কাছে পাওয়া যায় শিশু পর্নোগ্রাফির মতো জঘন্য জিনিস, যা তার প্রতি আনা অভিযোগকে আরও সুস্পষ্ট করতে সাহায্য করে। ২০১৭ সালের ২২শে নভেম্বর, ইনাম কাউন্টি সার্কিট কোর্টে ষোল বছরের কম বয়সী বাচ্চা মেয়েদের সাথে যৌন আচরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন লরেন্স জেরার্ড নেসার। সাতজন কিশোরীর ওপর নিপীড়নের দায় স্বীকার করে সে, যাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ছিল তেরোর কম! ২০১৮ সালের জানুয়ারির ১৮ তারিখের মধ্যেই, একশো পঁয়ত্রিশটি অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে যা পরের সপ্তাহেই একশো পঞ্চাশে গিয়ে ঠেকে! জানুয়ারির ২৪ তারিখে, ইনাম কাউন্টি সার্কিট কোর্টের জজ রোজমেরি অ্যাকিলিনা অপ্রাপ্তবয়স্কদের সাথে যৌন আচরণের দায়ে ল্যারিকে চল্লিশ থেকে একশো পঁচাত্তর বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। বেশ ঠান্ডা মাথায় রায় ঘোষণার পর জজ আরও বলেন যে, তিনি ল্যারিকে কোন অবস্থাতেই কারাবাস হতে মুক্ত দেখতে চান না। তিনি বলেন, কম বয়স থেকেই নিজের এই বিকৃতির কথা জেনেও ল্যারি ইচ্ছাকৃভাবেই এর চিকিৎসা করাননি। জানুয়ারির ৩১ তারিখে মিশিগানের আরেকজন জজ দুইশো পয়ষট্টিজনের ওপর যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত করেন এই ডাক্তারকে।
ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের জনক ল্যারির এসব ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর পরই তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে সন্তানদের কাস্টডি খুব সহজেই পেয়ে যান। বর্তমানে অ্যারিজোনায় ইউনাইটেড স্টেটস প্যানিটেনশ্যারিতে সাজাভোগ করছেন এই পেডোফাইল।
লেখিকাঃ সেজুঁতি ইমতিয়াজ