কথায় বলে মানুষ দেখতে সুন্দর হলে যে তার মন সুন্দর হবে এমন কিন্তু না। তেমনি একজন ভদ্র মহিলার নাম রূপসী। দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি সুন্দর গায়ের গঠন। দেখলে আপাতত যে কেউ অপছন্দ করবে না। কথাবার্তায় ও মিষ্টিভাষী। তার সাথে থাকলে মাঝে মাঝে আপনি ও হেসে লুটোপুটি খাবেন। কিন্তু বাদ ঠেকবে অন্য জায়গায়। আপনি হয়ত এতদিনে তাকে মনের কোনে বন্ধু বা বান্ধবী হিসাবে স্থান দিয়ে দিয়েছেন। তার পরে ও সে আপনার উন্নতি দেখতে পারবেনা। আপনার ভালো কিছু দেখলে সে অসুস্থ হয়ে যাবে। তার উচ্চ রক্তচাপ দেখাদিবে। খেতে পারবেনা, ঘুমাতে পারবেনা কিছুদিন তার পরিবারের লোক জনের তাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার দৌড়াদড়ি বা হাসপাতালে কাটাতে হবে। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এলে সহজে তাকে আপনি ঘর থেকে বের হতে দেখবেন না। আর আপনার সাথে দেখা হলেও কথা বলবেনা। তো হঠাৎ একদিন রূপসী ঘুম থেকে উঠে দেখলো যে তাদের পাশের প্রতিবেশী ইট,বালি, রড সিমেন্ট নিয়ে এসেছে বাড়ি করার জন্য। এটা দেখে তো সে পুরাই অস্থির। ঘরে থাকতে পারছেনা। খেতে পারছেনা ঘুমাতে পারছেনা। তার এমন কষ্ট দেখে তার স্বামী ও সন্তান মিলে তাদের বাড়ির একটা পাশে টিন দিয়ে ঘেরাও করে দিল। কারন তারা জানে সে অন্যের ভালোকিছু সহ্য করতে পারে না। সে যাই হোক, টিন দিয়ে ঘেরাও করার মূল উদ্দেশ্য যাতে করে প্রতিবেশীর বাড়ির কাজ তার চোখে না পড়ে। কিন্তু তাতে কি তার মন শান্ত হয়?
রুপসীরা দুটো রাস্তা ব্যবহার করতো। একটা পুরো বাড়ির সবাই সাথে আর একটা রাস্তা শুধু রূপসীরা তাদের প্রতিবেশীদের সাথে মিলে ব্যবহার করত। প্রতিবেশীদের রাস্তা ব্যবহার করার জন্য রূপসীদের ঘর থেকে নির্দিষ্ট দূরুত্ব পার হতে হতো। রূপসীদের ঘর থেকে যে দূরুত্ব অতিক্রম করলে মূল রাস্তায় উঠা যায় ঠিক ঐ সীমানায় টিন দিয়ে খিল মেরে দেয় তার স্বামী। যেন তার ঐ প্রতিবেশিদের সাথে আর দেখা না হয়। তাহলে সে স্বস্তি পাবে। এরপর থেকে তারা তাদের মূল বাড়ির রাস্তা ব্যবহার করতো। রুপসী শ্বশুরবাড়ির সবার ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল এবং সবাই ভালোই দিন পার করছিল শুধু সেই অসুখী কারণ তার স্বামী শিক্ষক। সে তাকে সম্মান দিত না। কারন ব্যবসায়ীর মত তার টাকা নাই। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল তার ছেলে কে ব্যবসায়ী ও মেয়েকে ব্যবসায়ী ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে সুখী দেখবে কারণ সেতো অসুখী। যেমন চিন্তা তেমন কাজ শিক্ষিত স্বামীর কথা অগ্রাহ্য করে ছেলেকে এস এস সি পর্যন্ত পড়া-শুনা করিয়ে অন্য মানুষের দোকানে ব্যবসা শিখতে দিয়ে দিল। যেখানে ছেলের বাপ সমাজের ছেলে-মেয়েদেরকে জ্ঞান বিলিয়ে দেন। সেখানে তার ছেলে অন্যের কাছ থেকে ব্যবসায়ী জ্ঞান শিখতে গেল। শিক্ষক হিসাবে ভদ্র লোকের যে সম্মান ছিল সমাজের জ্ঞানীদের কাছে তা কি পরিমাণে ক্ষুন্ন হয়েছে সেটা ভদ্রলোক মাত্রই বলতে পারবেন। পরশ্রী কাতর রুপসী নিজে সুখী হওয়ার জন্য ছেলের জীবনটাকে ছেলেকে বুঝে উঠার সুযোগ দিলনা। এইতো গেল ছেলের কথা এবার মেয়ের সম্পর্কে বলা যাক- মেয়ে সবে এস এস সি পাস করে এইচ এস সি’তে ভর্তি হয়েছে। তখন তাদের কোন এক আত্মীয় একটা বিয়ের সমন্ধের ব্যাপারে বললেন। ছেলে দেখতে খুবই সুন্দর, লম্বা, গায়ের রং ফর্সা ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন রুপসী উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করল ছেলেদের কি কি আছে না আছে।
ঘটক বলে কথা – শুরু করে দিল ছেলের ভাইদের যা যা আছে তা তা ছেলেদের বলে। মানে ছেলের বাবার সম্পত্তি বলে। কিন্তু এসব আসলে ছেলের ভাইদের নিজস্ব সম্পত্তি। কারন তারা কেউ অ্যামেরিকাতে। কেউ বা সুইডেনে ভালো অবস্থানে আছে। তাই নিজের মাতৃভূমিতে ও তারা ঘর- বাড়ি সব করে রেখেছে। ছেলের বলতে ছিল শুধু ছোট খাটো একটা দোকান। আবার সব সময় দোকানে কাজও পেত না। তো ঘটকের মুখে এতো এতো কিছু শুনে রুপসীর আর তর সইলো না। চুপিসারে ছেলেদের বাড়ি দেখে আসলো। ছেলেকে দেখেতো আরো মহা খুশি। কারন ছেলেটা সত্যি দেখার মত ছিল। তো সে বাড়িতে ফিরে আসার পরে খবর পাঠালো ছেলে পক্ষকে মেয়েকে দেখতে আসতে। কিন্তু এরি মধ্যে সে এই ছেলেকে মেয়ের জামাই বানাবে পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। এরা যেদিন দেখতে আসলো ঐদিন তাদের কে ভুরিভোজ করালো । ছেলের জন্য হাতের আংটি বানিয়ে আনলো। ছেলেকে আংটি পরিয়ে দিল। আর ছেলে পক্ষকে পুষলিয়ে পুষলিয়ে উপস্থিত বিয়ে সম্পন্ন করলো। কারন চিন্তা এমন সুদর্শন ছেলে তারা হাত ছাড়া কেন করবে। আর সব চাইতে বড় কথা জামাই কিনা বাড়ি সেরা হবে।
তো কিছু দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলো। মহাধুম-ধামে তাদের দিন কাটতে লাগলো। কিন্তু এদিকে ছেলের ভাইদের বউদের এতো এতো গয়না-গাটি দেখেতো রুপসীর মন খারাপ। সবার এত এত কিন্তু জামাই আমার মেয়েকে কোন কিছু দিচ্ছেনা কেন! তো একদিন জামাইকে রূপসী ও তার মেয়ে জিজ্ঞেস করলো বিয়ের আগের টাকা পয়সা, গয়না – গাটি সম্পর্কে। জামাই স্রেপ উত্তর দিল যা দেখছেন এসব আমার ভাইদের। তারাই তো আমার বিয়ের সব খরচা- পাতি দিয়েছে। এসব শুনেতো রুপসীর পুরানা রোগ দেখা দিল। হাসপাতাল, ডাক্তার, কিছুদিন বেডে পড়ে থাকলো। আর কোন দিন মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার নাম নেয়নি। মেয়ের জামাইকে বলতো তুমি তোমার ভাইদের থেকে আলাদা হয়ে যাও। জামাইয়ের কথা হচ্ছে তা সম্ভব না । কারন তারাইতো আমাকে দেখভাল করেছে। কি করে আমি তাদের কে অস্বীকার করি। জামাইকে বাগে আনতে না পেরে নিজের মেয়েকে নিয়ে এসেছে। দেখে জামাই তার কথা শুনে কিনা । কিন্তু না জামাইয়ের এক কথা-“আপনার মেয়ের ভালো লাগলে আসবে ভালো না লাগলে আসবেনা । আমি কিন্তু যা বলেছি ‘বলেছি” । এখন মেয়ের যাবতীয় খরচ এবং সংসার দুটোই সামলাতে হচ্ছে অসম্মানিত সে শিক্ষককে তার স্ত্রীর পরশ্রীকাতরতার জন্য!