ঈদের সময় নকল টাকার বিড়ম্বনা- চিনে নিন ৪ টি বৈশিষ্ট্য দেখে

ইন্টারনেট থেকে
ইন্টারনেট থেকে

টাকা আমাদের জীবনে একটি অপরিহার্য জিনিস । টাকা ছাড়া জীবনযাপন করা প্রায় অসম্ভব । কোন প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে,কোথাও বেড়াতে যেতে , কাউকে কোন কিছু উপহার দিতে সব কিছুতেই টাকার প্রয়োজন । চলুন আজ আপনাদেরকে বাংলাদেশের টাকার রাজ্য থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি । জেনে আসি টাকা আসলে কি এবং কিভাবে বাংলাদেশে টাকার উৎপত্তি হল এবং আসল টাকা চেনার উপায় কি ।

টাকা আসলে কি

টাকা  হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট দেশের আর্থ –সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন একটি যাচাইযোগ্য নথি যা সাধারণত কোন দ্রব্যের বা সেবার বা পুনরায় পরিশোধযোগ্য  ঋণের মূল্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য । বিভিন্ন দেশে এই গ্রহণযোগ্য নথির নাম ভিন্ন ভিন্ন এবং এই নথির মূল্যমানও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । কোথাও এটা টাকা নামে পরিচিত, কোথাও মুদ্রা, কোথাও পাউন্ড, আবার কোথাও ডলার,কোথাও সেন্ট  ,কোথাও বা দিনার ইত্যাদি নামে পরিচিত ।

টাকার প্রধান কাজ হচ্ছে বিনিময়ের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করা, গননার একক হিসেবে কাজ করা, মূল্যমান সংরক্ষন করা ইত্যাদি । যদি কোন জিনিস অথবা কোন যাচাইযোগ্য নথির এসব কাজকে পরিপূর্ণ করার ক্ষমতা থাকে তবে সেসবই টাকা হিসেবে গন্য হবে ।

বাংলাদেশী টাকা বিষয়ে কিছু তথ্য

বাংলাদেশের বিনিময়ের যাচাইযোগ্য নথির নাম হচ্ছে টাকা । ( ৳) এটি হচ্ছে টাকার  মুদ্রা প্রতীক এবং  BDT হল  বাংলাদেশের ব্যাংক কোড । বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে “টাকা” প্রতিষ্ঠিত হয়  ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর । এর মধ্যে  ১ টাকা , ২ টাকা এবং ৫ টাকার নোট এবং ধাতব মুদ্রা  বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রচলিত হলেও কাগুজে টাকা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক – “বাংলাদেশ ব্যাংক” কর্তৃক প্রবর্তিত হয় । সাধারণত টাকার ভগ্নাংশকে বলা হয়  পয়সা, যার মূল্যমান ১ টাকার ১০০ ভাগের ১ভাগ । বাংলাদেশে পূর্বে পয়সার বহুল প্রচলন থাকলেও বর্তমানে পয়সার প্রচলন খুব কমে গেছে । বাংলাদেশে যেসব পয়সা প্রচলিত সেগুলো হল ১ পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা এবং ৫০ পয়সা ।

বাংলাদেশে সাধারনত কাগুজে টাকার প্রচলন বেশী । বাংলাদেশের বহুল ব্যবহৃত কাগুজে নোটগুলো হল ১টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা , ১০০ টাকা , ৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা ।

বাংলাদেশে টাকার পাশাপাশি ধাতব মুদ্রাও রয়েছে । বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত  ধাতব মুদ্রা গুলো হল ১ টাকা ,২ টাকা ও ৫ টাকার মুদ্রা ।  ( তথ্য সূত্র – উইকিপিডিয়া ) ।

বাংলাদেশী টাকার উৎপত্তি কথা

ভাষাবিদদের মতে বাংলা টাকা শব্দটি  এসেছে সংস্কৃত “টঙ্ক” শব্দ থেকে  যার অর্থ “রৌপ্যমুদ্রা”। বঙ্গরাজ্যে সবসময় টাকা শব্দটি যেকোনো মুদ্রা বা ধাতবমুদ্রাকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হত । পরিব্রাজক ইবনে বতুতার মতে ১৪ শতাব্দীতে বাংলা অঞ্চলের লোকজন সোনা এবং রূপার ধাতবকে দিনার না বলে “টাকা” বলত ।

পাকিস্থান অধিরাজ্যের অংশ হিসেবে পূর্ব বাংলায় ১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গের পর ১৯৫৬ সালে পূর্ব বাংলার নাম আবার পূর্ব পাকিস্তান রাখা হয় । তখন সেই পাকিস্তানি রুপিতেও “ টাকা” কথাটি লেখা ছিল । মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আগে পর্যন্ত এই ভূখণ্ডে মুদ্রা হিসেবে পাকিস্তানি রুপির প্রচলন ছিল । পাকিস্তানি শাসনের সময় পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের মাধ্যমে পাকিস্তানি রুপির নোটগুলোতে বাংলাতে “বাংলা দেশ” আর ইংরেজিতে “BANGLA DESH লেখাটি রাবার স্ট্যাম্প দিয়ে মুদ্রাঙ্কন করার একটি বেসরকারী রীতির প্রচলন ছিল । কিন্তু পাকিস্তানি সরকার ১৯৭১ সালের ৮ই জুন সমস্ত নোট এবং রাবার স্ট্যাম্পগুলোকে  মূল্যহীন, বেআইনি , ও অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে দেয় ।

অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ  “টাকা” কে সরকারী মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করা হয় । এই টাকার প্রচলন সর্বত্র না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার পরেও বেশ কয়েক মাস বাংলাদেশে পাকিস্তানি রুপির প্রচলন ছিল । (তথ্যসুত্র – উইকিপিডিয়া ) ।

কিভাবে আসল টাকা চিনবেন

বিশ্ব বানিজ্যের সফল বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বলেছিলেন, “Rule No-1 – Never Lose money , Rule No :2 – Never forget rule No :1 .

ওয়ারেন বাফেট ঠিক কি কারণে এই উক্তিটি করেছিলেন তা তিনিই ভাল জানেন কিন্তু যারা জীবনের কোন না কোন সময় টাকা হারিয়েছেন বা জাল টাকার খপ্পরে পড়ে বিপদে পড়েছেন টাকা হারানোর বেদনা তারাই ভাল জানেন । এবং তারাও হয়ত ওয়ারেন বাফেট এর এই কথার সাথে একমত হবেন ।

নকল টাকা এখন আমাদের সমাজের একটি অভিশাপ । টাকা জালকারীদের বদৌলতে মাঝে মাঝেই আমাদের নকল টাকার খপ্পরে পড়তে হয় যা সত্যিই বেদনাদায়ক । আর আমরা এই নকল টাকার খপ্পরে তখনই পড়ি যখন আমরা আসল টাকা সনাক্তকারী চিহ্নগুলো জানিনা বা আসল টাকা চিনিনা । এখন ঈদের মৌসুম এবং চারিদিকে নকল টাকার ছড়াছড়ি । আমরা একটু অসচেতন হলেই এই নকল টাকা আমাদের ব্যাগে বা পকেটে জায়গা করে নিতে পারে । তাই আসুন আজ আপনাদের আসল টাকা চেনার চিহ্নগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব । এতে শুধু ঈদের মধ্যেই নয় সারা বছরই আপনি নকল টাকা থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন ।

টাকা চিহ্নিত করণ তথ্য সুত্র – বাংলাদেশ ব্যাংক

১। নিরাপত্তা সুতা

১০০ টাকা , ৫০০ টাকা  ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটেই মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো সম্বলিত নিরাপত্তা সুতা রয়েছে । নোটের মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো নিরাপত্তা সুতার ৪ টি স্থানে মুদ্রিত আছে । নোট চিত করে ধরলে নিরাপত্তা সুতায় মূল্যমান এবং লোগো দেখা যাবে । কিন্তু, কাত করে খাড়াভাবে ধরলে তা কালো দেখা যাবে । এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত যা নোটের কাগজের অবিচ্ছেদ্য অংশ । নখের আঁচড়ে বা মুচড়িয়ে উক্ত নিরাপত্তা সুতা কোনক্রমেই উঠানো সম্ভব নয় । জাল নোটে নিরাপত্তা সুতা সহজেই নখের আঁচড়ে বা মুচড়ানোতে উঠে যায় ।

২। রঙ পরিবর্তনশীল কালি

১০০ টাকা , ৫০০ টাকা  ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটের উপরের ডান দিকের কোনায় ইংরেজি সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান রঙ পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত আছে । ১০০ টাকা  ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট আস্তে আস্তে নড়াচড়া করলে নোটের মূল্যমান লেখাটি সোনালি হতে ক্রমেই সবুজ রঙ এ পরিবর্তিত হয় । একইভাবে ৫০০ টাকা মূল্যমানের নোটে ৫০০ টাকা মূল্যমান লেখাটি লালচে হতে পরিবর্তিত হয়ে সবুজ হয় । জাল নোটে ব্যবহৃত এ রঙ চকচক করলেও তা পরিবর্তিত হয় না ।

৩। অসমতল ছাপা

১০০ টাকা , ৫০০ টাকা  ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটের সামনের ও পেছন পৃষ্ঠের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান এবং ৭ টি সমান্তরাল সরল রেখা উঁচু নিচু (খসখসে) ভাবে মুদ্রিত আছে । তাছাড়া নোটের ডান দিকে ১০০ টাকার নোটে ৩ টি, ৫০০ টাকার নোটে ৪ টি এবং ১০০০ টাকার নোটে ৫ টি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে যা হাতের স্পর্শে উঁচু নিচু ( খসখসে ) অনুভূত হয় । এ সকল বৈশিষ্ট্য জাল টাকায় সংযোজন করা সম্ভব নয় ।

৪। জল ছাপ

১০০ টাকা , ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে । বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং মুল্যমান প্রতিকৃতির তুলনায় উজ্জ্বল দেখাবে ।

ঈদ হোক আনন্দময়।

লেখিকাঃ শারমীন আক্তার সেতু। আমি পেশায় একজন মনোবিজ্ঞানী । কবিতা লিখতে এবং পড়তে পছন্দ করি । মনোবৈজ্ঞানিক ফিচার লেখার সাথে যুক্ত আছি। তাছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও লিখতে এবং জানতে পছন্দ করি । আমি এর আগে পরামর্শ .কম এ লেখার সাথে যুক্ত ছিলাম । এখন কিছু ইংরেজি সাইটে অনুবাদের কাজ করছি । আমার শখ ভ্রমণ এবং গান গাওয়া । বাগান করতে পছন্দ করি এবং বিভিন্ন গাছ,ফুল্‌,ফল এবং নতুন নতুন জায়গার সাথে পরিচিত হতে ভাল লাগে।