ফ্যাসিস্ট মুসোলিনি ও হারিয়ে যাওয়া “Sword of Islam”!

ইউসুফ কার্বিশকের হাতে ‘Sword of Islam’ (Source: italiacoloniale)

১৯৩৭ সালের ১২ই মার্চ, ইতালীর মহান নেতা (Duce of Italy) বেনিতো মুসোলিনি তার নিজস্ব ক্রুজার Polaতে করে লিবিয়ার সমুদ্র বন্দর টব্রুকে অবতীর্ণ হন। তৎকালীন গভর্নর ইটালো বাল্বো তাকে ব্যাপক সংবর্ধণা দেন তাকে নিয়ে নতুন গভর্নরের নামে নামকরন হওয়া নতুন রাস্তা Via Balbia তে ভ্রমণ করেছিলেন। এই রাস্তা ত্রিপোলিটানিয়াকে সাইরেনাইকার সাথে সংযুক্ত করেছিল। আর সে অঞ্চলে ওটাই ছিল সে সময়কার প্রথম ও একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম।

মুসোলিনির এই সফর ২১ শে মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। তিনি শহর, গ্রাম এবং বহু কৃষি খামার পরিদর্শন করেছিলেন এবং সামরিক, মহানগর এবং আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির সাথে কূটনৈতিক পর্যালোচনাও করেছিলেন। এসময়ে তিনি Casa del Fascio নামের একটি বিল্ডিঙে ছিলেন, ও সেখানকার বসতি স্থাপনকারীদের জীবনযাত্রার পরিস্থিতি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

সাইরিনের নিকটবর্তী লুইগি রাজ্জার নতুন একটি গ্রামে তিনি মোট আশি পরিবারের ৬২৭ জন আব্রুজ্জিকালাব্রিজ অভিবাসীদের থেকে সংবর্ধনা পান।

সে রাত তিনি একটি তাঁবুতে রাত কাটিয়ে ভোর সাড়ে ৫ টায় পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান সেরে গাড়িতে করে বন্দরে পৌঁছে সেখান থেকে সির্তের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। তারপর তাওরগা, মিসুরতা ভ্রমন করে অবশেষে ত্রিপোলিতে পৌছান। ত্রিপোলির মুল ফটক থেকে তাকে ২,৬০০ নাইটের (Knight) সুবিশাল এক দল তাকে স্বাগত জানায় ও ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যায়।  

পরের দিন তিনি ত্রিপোলিতে একটি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন:

“Nel 1926 io venni qui per dare quello che fu chiamato, e come tale rimase nelle cronache, uno scossone alla Colonia. I risultati sono visibili agli occhi di chiunque. Corona, questa opera di trasformazione, la Litoranea libica, impresa gigantesca, che soltanto ingegneri italiani e operai italiani potevano portare a compimento in termine di tempo rapidissimo”

“১৯২৬ সালে আমি এখানে এসেছিলাম, যে কারনে আমাকে ডাকা হয়েছিল, এবং যেমনটি ইতিহাসে রয়ে গেছে, কলোনির স্বার্থে একটু ঝাঁকুনি। ফলাফল সবার কাছেই দৃশ্যমান। কোরোনা, রুপান্তরের কাজ, লিবিয়ার উপকূল, একটি বিশাল উদ্যোগ, যা কেবলমাত্র ইতালীয় প্রকৌশলী এবং ইতালিয়ান কর্মীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পাদন করতে পারে।”

blank
লিবিয়াতে মুসোলিনি (Source: pm1.narvii.com)

১৮ ই মার্চ তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বাগেরার উপত্যকায় এসে পৌঁছান। এখানে তাঁর অপেক্ষায় ছিল ২,০০০ আরব নাইট, যারা  তাকে তিনবার যুদ্ধের সিংহনাদ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন! এখানে মুসোলিনি ইটালিয়ান জোটের মহান সমর্থক কালিফা ইজ-জাউইয়ের (Kalifa Ez-Zaui) সাথে বার্বার প্রধান ইউসুফ কার্বিশকের (Jusuf Kerbisch ) হাত থেকে ইসলামের সুরক্ষক হিসাবে (Protector of Islam; Hāmī al-Islām; حامي الإسلام) ইসলামের তলোয়ার বা “Sowrd of Islam” উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।

blank
সম্মানসূচক Sword of Islam প্রদানের মুহুর্ত (Source: binaryapi.ap.org)

সোনায় বাধানো তলোয়ার মুসোলিনির হাতে তুলে দেওয়ার সময় ইউসুফ বলেছিলেন:

“Vibrano accanto ai nostri animi in questo momento quelli dei musulmani di tutte le sponde del Mediterraneo che, pieni di ammirazione e di speranza, vedono in te il grande uomo di Stato, che guida con mano ferma il nostro destino.”

“এই মুহুর্তে ভূমধ্যসাগরের তীরের মুসলমানরা, যারা আত্মার কাঁপুন হিসেবে; যারা প্রশংসনীয় ও আশায় পূর্ণ হিসেবে, আপনার মধ্যে সেই মহান রাষ্ট্রনায়ককে দেখেন, যিনি আমাদের সাথে থেকে দৃঢ় নেতৃত্ব দেন।”

প্রতিউত্তরে মুসোলিনি বলেছিলেন,

“Le popolazioni musulmane sanno che, col tricolore italiano, avranno pace e benessere e che le loro usanze e, soprattutto, le loro religiose credenze saranno scrupolosamente rispettate.”

মুসলিম জনতা বিশ্বাস করে যে, তিনরঙা ইটালির (ইটালির পতাকার তিনটি রং) সঙ্গে, তাদের শান্তি ও মঙ্গল হবে এবং তাদের রীতিনীতি এবং সর্বোপরি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবিচ্ছিন্নভাবে সম্মান করা হবে।

ত্রিপোলিতে দিয়ে দেশে ফেরত আসার সময়, তুরিন এর পিয়াজা কাস্তেলোতে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন:

“Musulmani di Tripoli e della Libia! Giovani Arabi del Littorio! Il mio Augusto e Potente Sovrano, Sua Maestà Vittorio Emanuele III, Re d’Italia e Imperatore d’Etiopia, mi ha mandato, dopo undici anni, ancora una volta su questa terra dove sventola il tricolore per conoscere le vostre necessità e venire incontro ai vostri legittimi desideri […] Voi mi avete offerto il più gradito dei doni: questa spada, simbolo della forza e della giustizia, spada che porterò e conserverò a Roma fra i ricordi più cari della mia vita […] L’Italia fascista intende assicurare alle popolazioni musulmane della Libia e dell’Etiopia la pace, la giustizia, il benessere, il rispetto alle leggi del Profeta e vuole inoltre dimostrare la sua simpatia all’Islam e ai Musulmani del mondo intero.”

ত্রিপোলি ও লিবিয়ার মুসলমানরা! লিটরিওর যুবক আরবেরা! আমার অগাস্টাস এবং মাইটি সোভেন, ইতালির রাজা এবং ইথিওপিয়ার সম্রাট মহামান্য তৃতীয় ভিট্টিরিও ইমানুয়েল আমাকে এগারো বছর পরে, এই পৃথিবীতে আবারও পাঠিয়েছেন, যেখানে তার পতাকা আপনাদের প্রয়োজনগুলো জানতে এবং আপনাদের বাসনাগুলো পূরণ করতে উড়তে থাকে […] আপনারা আমাকে সর্বোচ্চ উপহার দিয়েছেন: এই তলোয়ারটি, যা শক্তি এবং ন্যায়বিচারের প্রতীক, যেটা আমি আমার জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি হিসেবে রাখব […] ফ্যাসিস্ট ইতালি লিবিয়া ও ইথিওপিয়া মুসলিম জনগণের শান্তি, ন্যায়বিচার, মঙ্গল, নবীর আইনের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় এবং সারা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি এর সহানুভূতি প্রদর্শন করতে চায়।

blank
ত্রিপোলি তে Sword of Islam হাতে মুসোলিনি (Source: italiacoloniale)

এমনকি ১৯৩৯ সালে, গভর্নর বাল্বো উপকূলে সমস্ত ইসলামিক লিবিয়ানদের জন্য বিশেষ ইতালীয় নাগরিকত্বের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ১৯৪৩ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় মুসোলিনির হেফাজতে থাকা গুইলিও রোমানোর ক্রাডল ও সোর্ড অফ ইসলাম দুটো জিনিসই চুরি হয়ে যায়। এর পর থেকে সোর্ড অফ ইসলাম আর কখনও পাওয়া যায়নি।

সোর্স: italiacoloniale.com; wikipedia

ফিচার ইমেজ সোর্স: Reddit