প্রায় সকল গর্ভবতী মহিলা গর্ভাবস্থায় বেশ কয়েকটি সাধারণ সমস্যার সম্মুখীন হন। তারা যেন সেই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পান, তা নিয়ে আজকের আয়োজন।
ইনসমনিয়া:
গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরাই নির্ঘুম রাত কাটান। যাদের কখনো ঘুম নিয়ে সমস্যা ছিলো না, তারা একেবারে জেগে রাত কাটিয়ে দেন। এই প্রেগনেন্সি ইনসমনিয়াকে মোটেও অগ্রাহ্য করা উচিত না। কারণ এই ইনসমনিয়া পরবর্তীতে ডিপ্রেশনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
প্রতিকার:
– নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমুতে যাবার অভ্যাস করুন। আপনার শোবার ঘর যেন কোলাহল মুক্ত হয়।
– রাত ৮টার পর ভারী কোন খাবার খাবেন না।
– চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ সময়মতো খেয়ে নিন।
– ঘুমুতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ বা এক কাপ ক্যামোমাইল চা ঘুম আসতে সহায়তা করবে।
– ঘুমুতে যাওয়ারর আগে কম্পিউটার, ফোন, টেলিভিশন থেকে দূরে থাকুন। এর চেয়ে বরং একটি গল্পের বই বা ম্যাগাজিন পড়ুন।
প্রস্রাবে সমস্যা:
গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে প্রস্রাবের সমস্যা প্রকট হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে দুইটি ব্যাপার ঘটতে পারে, প্রথমত ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া, ব্লাডারের উপর নিজের কন্ট্রোল না থাকা। ঘনঘন প্রস্রাব পায় কারণ শেষের দিকে হয়তো আপনার বাচ্চা ব্লাডারে নিজের মাথা রাখছে অথবা আলতো করে ঘষা দিচ্ছে। এই কারণে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের এই সময়ে ঘনঘন প্রস্রাব পায়।
ব্লাডারের উপর নিজের কন্ট্রোল না থাকার মূল কারণ হচ্ছে প্রেগনেন্সির সময় আপনার পেলভিক ফ্লোরের মাসল খানিকটা ঢিলে থাকে। তাই কাশি, হাঁচি বা জোরে কথা বললে খানিকটা প্রস্রাব এসে যাওয়ার মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে।
প্রতিকার :
– সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অধিক পরিমাণে পানি এবং সন্ধ্যা থেকে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অল্প পানি পান করুন। দিনে কতটুকু পানি পান করতে পারবেন তা আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন।
– প্রস্রাবের বেগ হওয়ার সাথে সাথে বাথরুমে যাবেন। প্রস্রাব চেপে রাখবেন না।
– প্রতিদিন হালকা কিছু পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করার চেষ্টা করবেন।
– প্রসাব করার সময় একটু সামনের দিকে ঝুঁকে প্রস্রাব করবেন। এতে ব্লাডার খালি হতে সুবিধা হবে।
বমিবমি ভাব এবং বমি করা:
সাধারণত প্রেগন্যান্সির প্রথমদিকে ঘুম থেকে ওঠার পর বমিবমি ভাব, এবং দিনের যে কোন সময় বমি হতে পারে। আবার কোন বিশেষ কোন খাবারের গন্ধেও বমিভাব হতে পারে। এটি একটি সাধারণ উপসর্গ।
প্রতিকার:
– এক কাপ উষ্ণ গরম পানিতে আধা চামচ আদা কুচি ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার বমি হবে না এবং বমিভাব দূর হবে।
– দীর্ঘক্ষণের জন্য ক্ষুধার্ত থাকবেন না।
– বমিভাব হলে লেবু বা আদার ঘ্রাণ শুঁকে দেখতে পারেন। উপকার পাবেন।
– যেসব খাবারের ঘ্রাণে গা গুলিয়ে উঠে, সেগুলো পরিত্যাগ করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য :
সকল গর্ভবতী মহিলাদের এ সমস্যাটি হয়না। ৪ ভাগের এক ভাগ গর্ভবতী নারী এই সমস্যায় ভোগেন। একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস আপনাকে এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তবে সমস্যা খুব বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
– ফাইবারযুক্ত খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খান।
– হালকা এক্সারসাইজ এবং হাঁটাহাঁটি করুন। এতে খাবার হজমে সহায়তা হবে।
– অনেকসময় আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এই বিষয়ে চিকিৎসকের সাথে আলাপ করুন।
হাত পায়ে পানি এসে ফুলে যাওয়া:
এই সমস্যাটি প্রায় সকল গর্ভবতী মহিলাদের মাঝে দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় শরীরে বাচ্চার জন্য আলাদাভাবে রক্ত এবং ফ্লুইড তৈরী হওয়ার কারণে এই সমস্যা প্রকটতা লাভ করে।
প্রতিকার:
– এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না।
– শক্ত ফিতা বা বেল্টযুক্ত জুতা পরিহার করুণ।
– যখনই বসবেন, চেষ্টা করবেন পায়ের নিচে খানিকটা উঁচু মোড়া বা টুল দিয়ে বসতে।
– ঘুমানোর সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে উঁচু করে ঘুমাবেন। এমনভাবে বালিশ রাখবেন যেন আপনার পায়ের লেভেল আপনার হার্টের লেভেল থেকে উঁচুতে থাকে।
– সোডিয়াম যুক্ত খাবার পরিহার করুন। পাতে লবণ খাবেন না।
– অধিক পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খান। যেমন কলা, পালং শাক, মিষ্টি আলু, ব্রকলি ইত্যাদি।