কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিবৃত্ত -১

[কন্ট্রিবিউশন কন্টেন্ট] অবশেষে কোটা ব্যবস্থা ‘সংস্কার’ নয় বাতিলই করলো সরকার। দীর্ঘ বছর ধরে থেমে থেমে চলছিল এই আন্দোলন। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে এই আন্দোলন মহীরুহ আকার ধারণ করেছিল। একযোগে সারা বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলতে থাকে গত দেড়মাস ধরে। মার্চ ৮তারিখে তা সারা দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়। এদিন আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় দখল করে সারাদেশে অবরোধের ঘোষণা দেয়। তারা বলেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা ছাড়া তারা এই অবরোধ অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন। এই ঘোষণার সাথে সাথে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। আন্দোলন যেন আরো চাঙ্গা হয়। যারা চাকুরী করে তারা অফিস শেষে বাসায় না গিয়ে শাহবাগে আসতে শুরু করে। এরকম স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শুধুমাত্র স্বাধীনতা ছাড়া আর দেখা যায়নি বলে অনেকে মনে করেন। শাহবাগে জনাগমন বাড়তেই থাকে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলনে একাত্বতা প্রকাশ করতে থাকে। টিভি,রেডিও, ফেইসবুক সবখানেই শুধুমাত্র কোটা সংস্কার নিয়ে আলোচনা। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমন আরম্ভ করে। তারা রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের শাহবাগ মোড় থেকে উঠিয়ে দেন। অসংখ ছাত্রকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর পুলিশ শাহাবগ মোড়ে এবং আন্দোলনকারীরা চারুকলা থেকে রাজু ভাস্কর্যের রাস্তায় অবস্থান করে। থেমে থেমে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টক ধাওয়ায় হতেইই থাকে রাতভর।

এমন সময় গুজব ছড়িয়ে পরে এক আন্দোলনকারী পুলশের আক্রমনে নিহত হয়। সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল হলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের হলের গেট ভেঙ্গে রাজু ভাস্কর্যে চলে আসে। তারা পুলিশের এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চুপ থাকার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আর এই গুজবের পরপর একদল অনুপ্রবেশকারী ভিসির বাড়িতে হামলা করে।ভিসির বাসায় ব্যাপক ভাংচুর করে অনুপ্রবেশকারীরা। সাথে সাথেই আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় কমিটি এর তীব্র নিন্দা জানান। এবং এই কাজ আন্দোলনকারী কেউ করেনি বলে ঘোষনা দেন।

আরো পড়ুনঃ বিগত দুই যুগের সবচেয়ে ক্লাসিক আন্দোলন

রাত তখন দেড়টা, সারা দেশের মানুষের চোখ টিভির লাইভ সম্প্রচারে। অবস্থা বেগতিক দেখে সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক এসে আন্দোলনকারীদের সাথে দেখা করেন। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে ৯মার্চ সকাল ১১টায় আলোচনা করবেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে যাদেরকে আটক করা হয় তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এই কথা বলে তিনি চিলে যান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড় থাকেন। পড়ে খবর আসে একজন মারা যাওয়ার ঘটনাটি গুজব ছিল।

৯মার্চ, ভোর থেকেই বিভিন্ন হল এবং আশেপাশের এলাকা থেকে ছাত্ররা রাজু ভাস্কর্যে জমা হতে থাকে। আন্দোলন আরো বেগবান হতে থাকে। সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হয়। এরই মধ্যে গনমাধ্যমে খবর আসে ওবায়দুল কাদেরের সাথের পূর্বনির্ধারিত আলোচনা বাতিল হয়। ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষনা দেয় ক্যম্পাসে অন্যায় কিছু হলে তারা রাজপথে তার মোকাবেলা করবে। ছাত্ররা আরো ক্ষেপে উঠে।

দুপুরের পর খবর আসে ওবায়দুল কাদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে কথা বলবেন। ২০সদস্যের একটি প্রতিনিধি দিল দেখা করেন। তারা আলোচনা করেন। ওবায়দুল কাদের প্রথমে দুই মাসের সময় চান। কিন্তু আন্দোলন কারীরা তা মেনে নেয় না। তারপর আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার এর দাবী মেনে নেয়া হবে।

(চলবে)