পড়াশোনা এবার হবে মজাদার

পড়তে বসলেই যেন রাজ্যের সকল একঘেয়েমি পেয়ে বসে। প্রথমে বিরক্তি সহকারে পড়তে বসা তারপর পড়তে পড়তে মনোসংযোগ হারিয়ে ফেলা কিংবা ঘুমে ঢুলু ঢুলু হয়ে নানান চিন্তায় বুদ হওয়া। পড়ার ইচ্ছা না থাকলে পড়তে বসে পড়া যায় না। তাই পড়া শুরু করার আগেই মানসিকভাবে স্থির করুন এখন আপনি পড়তে বসবেন। মাঝে মাঝে এমন হয় পড়তে বসার জন্য মনকে কোন মতেই স্থির করা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় পড়তে বসলেও মন চঞ্চল হয়ে উঠে পড়ায় মনোসংযোগ ঘটে না। তাই মন যখন চঞ্চল, অস্থির থাকে তখন বৃথাই বাধ্য হয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন না। এতে পড়াও হবে না মনও আরো অশান্ত হবে। তবে পড়ার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ আপনার মনকে স্থির করে দিবে এবং পড়তে স্পৃহা জাগাবে। পড়াশোনাকে আর বিরক্তকর ভাবার কিছুই নেই। পড়াশোনাকে উপভোগ করে মজাদার করে নিন।

পড়াশোনায় মন বসার ক্ষেত্রে পরিবেশটা অনেক গুরত্বপূর্ণ

আসুন জেনে নেই কেমন হওয়া উচিত একটি উপযুক্ত পড়ার পরিবেশে। এই পরিবেশ আপনার মনকে স্থির করে দিবে এবং পড়ার মাঝে বিরক্তি সৃষ্টিকারী সমস্যার সমাধান করবে। প্রথমেই পড়ার জন্য সুবিধাজনক নিরিবিলি কোন স্থান। যে রুমে তুলনামূলক বাহিরে শব্দ কম প্রবশ করে সেই রুমকে বেছে নিন। পড়ার টেবিলটি অবশ্যই জানালার পাশে অথবা যেখানে আলো-বাতাস বেশি প্রেবশ করে তার পাশে রাখবেন। আপনার বাসার লাইটে আর ফ্যানের প্রতিও খেয়াল রাখবেন। লাইটের আলো যেন অতিরিক্ত কম বা বেশি না হয় কারণ কম আলোতে পড়লে চোখের সমস্যা হয়ে থাকে। বেশি আলোতে সহজেই মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। ফ্যানে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস পাওয়া যায় সেই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। শেলফটি চেষ্টা করবেন টেবিলের অল্প দুরত্বে রাখার যাতে বইয়ের প্রয়েজন হলে সহজেই উঠে আনা যায়। পড়ার টেবিলটা সুন্দর করে গুছিয়ে নিন। সবকিছু হাতের কাছে রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুল যেমন কলম, পেন্সিল, স্কেল, ক্যালকুলেটর, জ্যামিতি বক্স এগুল টেবিলের ড্রয়ারে রাখার চেষ্টা করবেন। টেবিলটি সুন্দর করে সাজিয়ে নিন। ছোট একটি ফুলের টব জায়গা থাকলে টেবিলের উপর রাখতে পারেন। জায়গা কম হলে প্লাস্টিকের কৃত্রিম ফুল দিয়েও সাজাতে পারেন। এতে আপনি একটি নিবিড় পড়ার পরিবেশ পাবেন। পড়ার টেবিলের আশেপাশে লাল রঙের কোন বস্তু রাখুন। যেমন- লাল রঙের কলমদানি, পেপার ওয়েট, লাল রঙের কলম, স্কেল, লাল রঙের কাগজ দিয়ে টেবিলের উপরে দেয়ালে সুন্দর করে কিছু ইতিবাচক উক্তি লিখে রাখতে পারেন ইত্যাদি। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার গবেষণায় জানা গেছে লাল রঙ স্মৃতি শক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।  সবশেষে বসার জন্য চেয়ারটি অবশ্যই আরামদায়ক হতে হবে।

blank
বসার চেয়ারটি অবশ্যই আরামদায়ক হতে হবে

পড়ার পরিবেশ ঠিকঠাক হয়ে গেলে এখন পড়ার জন্য মনকে স্থির করে পড়তে বসতে পারবেন। পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন এবং রুটিন তৈরি করে নিন। কিন্তু সমস্যা হল পড়তে বসলেই চলে আসে ঘুম। এমন ঘুমভাব আসে মনে হয় নির্ঘুম ছিলেন তিন রাত। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার জন্য অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। পড়তে বসলে ঘুমভাব আসলে ঘুমিয়ে পড়ুন। তবে অবশ্য ঘুমাতে হবে আপনাকে। ঘুমভাব আসলে আমরা পড়া থেকে অন্যকাজ করে আবার পড়তে বসলে সেই ঘুমভাব আবার আমাদের ভর করে। তাই ঘুমিয়ে নিন পর্যাপ্ত পরিমাণ। দৈনিক ৫-৬ ঘন্টা রুটিন করে ঘুমাবেন। ঘুমের কথা গেল তারপর আসা যাক ক্ষুধার কথায়। পড়তে বসলেই যে কেন ক্ষুধা লাগে এমন প্রশ্ন আপনাদের অনেকের মাথায় ঘুরঘুর করে। পড়ার সময় মস্তিষ্কের শক্তির ব্যবহার হয় হয় তাই ক্ষুধা লাগাটা স্বাভাবিক। পড়তে বসার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার ক্ষুধা আছে কিনা থাকলে খেয়ে নিবেন তারপর পড়ার টেবিলের সামনে যাবেন। পড়ার টেবিল সবসময় একটু ওয়াটারপটে পানি পরিপূর্ণ করে রাখবেন। কারণ পড়তে পড়তে একটু পরপর আপনার তৃষ্ণা লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে উঠে গিয়ে পানি খেয়ে আবার বসলে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে।  পড়ার সময় কলম, পেন্সিল হতে যাবতীয় উপকরণ হাতের কাছেই রাখুন।

blank

তারপরও অনেকেই মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না। দশ-পনেরো মিনিট পরপর পড়ার মাঝ থেকে মনোযোগ হারিয়ে নানান চিন্তায় বুদ হয়ে যান। হিউম্যান সাইকোলজি বলছে, মানুষ দশমিনিটের বেশি কোনকিছুতে স্বাভাবিক মনোযোগ রাখতে পারে না। তাই যখনি দেখবেন মনোযোগ বার বার নষ্ট হচ্ছে তখনি একটু হাঁটুন নয়ত ব্যায়াম করে এসে আবার পড়তে বসুন। এমনটাও করতে পারেন দশ মিনিট পড়বেন এক মিনিট হাঁটবেন। এভাবে করে ১ ঘন্টায় আপনার মাত্র ৬ মিনিট নষ্ট হবে। খুব মনোযোগের সাথে পড়া শেষ করতে পারবেন। তবে ধীরে ধীরে আপনাকে সময় বাড়াতে হবে প্রথমদিন দশ তারপর দিন থেকে পাঁচ মিনিট করে সময় বাড়াবেন। এবং হাঁটার জন্য এক থেকে দুই মিনিটের বেশি সময় না নেয়ার চেষ্টা করবেন। এক সময় অভ্যাস হয়ে যাবে এক টানা পড়ার। পড়া শুরু করা উচিত সহজ বিষয় দিয়ে। কারণ শুরুতেই কঠিন বিষয় দিয়ে পড়া শুরু করলে বাকি বিষয়গুল কঠিন লাগে এবং পড়ার স্পৃহা কমে যায়। গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুল দাগিয়ে পড়ায় পড়ার প্রতি আলাদা মনোযোগ সৃষ্টি হয়।

অনেক সময় পড়তে বসে স্মার্টফোন সামনে রাখলে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। স্মার্টফোনটিকে দৃষ্টির বাহিরে কোথাও রাখুন। খেয়াল করবেন আপনার রুমে বা পড়া অবস্থায় যেন কেউ এসে বিশৃঙ্খল না ঘটায়।