বাংলাদেশের ক্রিকেটের সূর্য কি এক বছরের জন্য অস্ত গেল?

গত দুইদিনে কত কিছুই হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের মধ্যে কত কল্পনা জল্পনা চলছে। কেউ বিসিবিকে দুষছে, কেউ পাপনকে, কেউবা খোদ আকসুকেই। সাকিবকেও যে কেউ কেউ দুষছে না, তা নয়। সত্যি বলতে দোষ কিন্তু এদের কারোরই নয়। দোষ নিয়তির। এবং অবশ্যই সাকিবের খাম খেয়ালীপনার।

স্পট ফিক্সিং বা ম্যাচ ফিক্সিং করার জন্য যারা প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সাথে ডিল করে, তাদের বলা হয় বুকি। আকসুর নীতিমালায় ফিক্সিং বিষয়ক একটি নীতি হলো, কোনো খেলোয়াড়কে বুকিরা ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিলে তা আকসুকে জানানো। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক সিরিজের আগেই প্লেয়ারদের এসব ব্যাপারে জানানো হয়। তার পরেও সাকিব তিন তিনবার ফিক্সিং করার প্রস্তাব পেয়েও তিনি আকসুকে জানাননি৷ কেন এই ব্যাপারটা তিনি এড়িয়ে গেলেন, তা ভাবতেও চাই না। অনেক বছর পর কোনো সাক্ষাতকারে সাকিব নিজেই নিশ্চয়ই ব্যাপারটা খোলাসা করবেন। কেন যেন মনে হচ্ছে, কলিজাটা কেউ খামচে ধরে আছে। এত তীব্র কষ্ট তো কেবল আত্মার মানুষের জন্য হয়।

আমি কাওকে দুষতে চাই না। আমার কেবল মনে হচ্ছে আকসুর এই নিয়মটি বড় বেশি কঠিন। তারচেয়ে বড় কথা, সাকিব আল হাসান নামের পরশ পাথরটি এমন এক সময়ে নিষিদ্ধ হলেন, যখন তিনি ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন। যে পরশ পাথরের ছোঁয়া আগামী এক বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাবে না, তার তালিকাটি নেহাতই ছোটো নয়।

১. ভারত সফর: নভেম্বর, ২০১৯

২. সম্ভাব্য পাকিস্তান সফর: জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২০

৩. জিম্বাবুয়ে সিরিজ: মার্চ, ২০২০

৪. আয়ারল্যান্ড সফর: মে-জুন, ২০২০

৫. অস্ট্রেলিয়া সিরিজ: জুন, ২০২০

৬. শ্রীলঙ্কা সফর: জুলাই-আগস্ট, ২০২০

৭. নিউজিল্যান্ড সিরিজ: আগস্ট-সেপ্টেম্বর, ২০২০

৮. নিউজিল্যান্ড সফর: অক্টোবর, ২০২০

৯. টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: অক্টোবর, ২০২০

এছাড়াও এশিয়া একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশ সিরিজ খেলার কথা ছিলো সাকিবের। আর বিপিএলেও মাঠ কাঁপানো হবে না তার। এই সিরিজগুলোতে বাংলাদেশ ভালো করুক, তা মনে প্রাণে চাই। কিন্তু বিশ্বকাপের ফলাফল যদি পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে সাকিববিহীন বাংলাদেশ দলকে যেন খোলা বইয়ের মতোই পড়া যায়। পদে পদে কী পরিমাণ নাজেহাল হতে হবে এই দলকে, তা ভেবেই কেমন অসহায়বোধ করতে হয়৷ তবে এই একবছর নবীন ক্রিকেটারদের নিজেদের জাত চেনানোর উত্তম সময়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব ছাড়া দল কেমন করে, দলকে নতুনরা কতদূর টেনে নিয়ে যেতে পারবে, তার একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে আসন্ন সিরিজগুলোতে৷

সাকিবের জন্য আশার কথা এই যে, নিষিদ্ধ থাকাকালীন সময়ে প্লেয়াররা ক্রিকেট বোর্ডের কোনো ধরণের সুবিধা পায় না। তবে সাকিব সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাবে নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য। একবছরে সাকিব যদি নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন, তবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটবে।

আমরা জানি, সাকিব আর দশটা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত। তিনি নিশ্চয়ই এই সময়টুকুর যথাযথ ব্যবহার করে সদর্পে ফিরে আসবেন ক্রিকেট বিশ্বের এই মঞ্চে৷

Feature image source : YouTube