আজ কথা বলবো এমন একটি নভেলা নিয়ে, যেটিকে নিয়ে পরবর্তিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হলে সেটা সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
হ্যাঁ, কথা বলছি জীবিতকালেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠা লেখক “স্টিফেন কিং”র উল্লেখযোগ্য নভেলা “রিটা হেওয়ার্থ অ্যান্ড শশাঙ্ক রিডেম্পশন” নিয়ে। নভেলাটি ১৯৮২ সালে তার ‘ডিফারেন্ট সিজন’ নামক একটি গল্পসঙ্কলনে প্রকাশিত হয়। নভেলাটির গুডরিডস রেটিং : 4.52/5। স্টিফেন কিং তার এই গল্পটি লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন লিও তলস্তয়ের “গড সি’স দ্য টুরথ, বাট ওয়েটস(God sees the truth, but waits)” নামক একটি গল্প থেকে।
জেলখানায় প্রবেশ করতেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অ্যান্ডি ডুফ্রেইনের জীবনে নেমে এলো বিভীষীকা। দাগি আসামি হিসেবে একদমই বেমানান সে। তার সাথে পরিচয় ঘটলো আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি রেডের। ঘটনাচক্রে কঠিন এক সত্য জানতে পারলো সে। অ্যান্ডির আশা একদিন মুক্ত মানুষ হয়ে নির্জন এক দ্বীপে কাটিয়ে দেবে বাকি জীবনটা। একই স্বপ্ন সে সঞ্চার করে দেয় রেডের মধ্যেও। আর দীর্ঘ সময় জেল খাটার পর অবশেষে আশা নামক শব্দটির উপর বিশ্বাস রেখেই চমকে দিয়েছিল সবাইকে।
রেডের চিঠিতে অ্যান্ডি ডুফ্রেইনের একটি কথা—
“Remember that hope is a good thing, Red, maybe the best of things, and no good thing ever dies.”
নভেলাটি বাংলা অনুবাদ করেছেন দেশের স্বনামধন্য লেখক-অনুবাদক “মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন”। অনুবাদ অনেক ভালো লেগেছে, অনেক ঝরঝরে, সাবলীল অনুবাদ ছিল। রেড’র জবানীতে বর্ণনা করা হয়েছে গল্পটি। ছোটছোট বাক্যের মাধ্যমে বেশ দারুণভাবেই বইটির অনুবাদ করেছেন। লেখায় সবকিছু যেভাবে খুঁটিনাটি বর্ণনা করেছেন পড়তে বেশ আরাম লেগেছে। বইয়ের সংলাপ, দৃশ্যায়ন, খুঁটিনাটি বর্ণনা খুব সুন্দরভাবে করেছেন। গল্পটির মূল উপজীব্য হলো আশা। আশাই মানুষের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে চলে। গল্পটি রূপকার্থে মানবজীবনের কথাই বলেছে সম্ভবত। প্রতিটি চরিত্র যেন বাস্তবিক। একজন কয়েদী যদি তার জীবনের ৪০টা বছরই জেলে কাটিয়ে দেয় তাহলে কেমন হয় তার চিন্তাধারা? বাকি জীবনটা নিয়ে কী হয় তার পরিকল্পনা? একটু একটু করে মানিয়ে নিয়ে একসময় দেখতে পায় জেলখানাটাই তার সব। বাইরের পৃথিবীটা হয়ে যাবে সম্পূর্ণই ভিন জগৎ। জেলখানার বাস্তবতায় একেকজন মানুষের মন, একেকজনের চিন্তাধারা। এজন্যই প্রতিটা চরিত্র হয়ে ওঠে শক্তিশালী। তবে বিরলপ্রজাতির কিছু মানুষ বেছে নেয় কঠিনতর পথ। তাদের সফলতা বা বিফলতা দিয়ে মুক্তির প্রতি সুতীব্র আকাঙ্খাকে বিচার করাটা হবে খুবই অন্যায়। জীবন্ত কিংবদন্তি স্টিফেন কিং এর ‘রিটা হেওয়ার্থ অ্যান্ড শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ পাঠককে সত্যি চমকে দেবে, সেই সাথে বিশ্বাস রাখতে তাগিদ দেবে ‘আশা’ নামক শব্দটির উপরে।
নভেলাটি থেকে ১৯৯৪ সালে “দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন(The Shawshank Redemption)” নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা করা হয় ফ্র্যাঙ্ক ড্যারাবন্টের পরিচালনায়। ছবিটির ইন্টারেট মুভি ডাটাবেস(IMDB) রেটিং 9.3/10।
মুভিটিতে অ্যান্ডি ডুফ্রেইন’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন টিম রবিন্স এবং রেড’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন মর্গান ফ্রিম্যান। দুজনেই খুব ভালোভাবে চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলছেন। ছবিতে কাহিনী, চরিত্রায়ণ, কথোপকথন, ধারাভাষ্য, পরিচালনা ও সমন্বয় সবকিছুই অসাধারণ হয়েছে। রেড’র চরিত্রে মর্গান ফ্রিম্যানের কণ্ঠে দেখানো হয়েছে ছবির বেশিরভাগ অংশই। তার কাব্যিক কণ্ঠই মুভির সৌন্দর্য্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে। বই থেকে মুভি করলে প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বইয়ের তুলনায় মুভি অনেকাংশে ফিঁকে হয়ে যায়, ঠিকমত ফুটিয়ে তোলা যায় না সবকিছু। কিন্তু এই নভেলাটি থেকে করা মুভিটির মধ্যে কোনো কিছুই বাদ যায়নি ধরতে গেলে। আরেকটা কথা হচ্ছে, বই পড়ার পর সেই বইয়ের মুভি দেখতে গেলে অথবা মুভি দেখার পর সেই মুভির মূল বই পড়তে গেলে অনেক সময় দেখা যায় আগ্রহ শেষ হয়ে যায় বা ভালো লাগাটা চলে যায়, কিন্তু এই বই ও মুভি দু’ক্ষেত্রেই আগ্রহ ও ভালো লাগা বেশ ভালোভাবেই ছিল।
যারা বইটি পড়েননি বা মুভিটি দেখেননি, তাদের বইটি পড়ার ও মুভিটি দেখার আমন্ত্রণ রইল।
Photo source: http://thegalileo.co.za/movies/the-shawshank-redemption/
http://listtoday.org/the-shawshank-redemption-movie-22-hd-wallpaper.html