সিনেমা বা নাটক আমাদের বিনোদনের একটি অনেক বড় অংশ জুড়ে আছে। সিনেমা বা নাটক এগুলো যে শুধু কল্পনার ভিত্তিতেই তৈরী হয় তা নয়, মাঝে মাঝে সিনেমা বা নাটকে আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবিও থাকে। সিনেমা বা নাটক সফল হবার পেছনে রয়েছে এর গল্প , এর উপস্থাপন এবং অভিনেতার নৈপূন্য। আজ তেমনই কিছু কোরিয়ান নাটক নিয়ে আসলাম আপনাদের জন্য। যেগুলোর গল্প এবং অভিনেতাদের অভিনয় মন ছুঁয়ে যাবে। অনেকদিন ধরে এসব নাটকের বেশ রয়ে যাবে মনে। মনে এঁকে দেবে এক অন্যরকম ভাল লাগার অনুভূতি। তবে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে নাটকগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
১। Kill Me, Heal Me:
IMB Rating: 8.3
পরিচালকঃ দা জিন কিম, জিন মান কিম।
লেখকঃ সু ওয়ান জিন।
অভিনয়েঃ সিওন জি, জিওন ইওম হুয়াং, ওং ইয়ং চই সহ আরো অনেকে ।
ড্রামা সিরিয়ালটি বাক সাং আর্ট এওয়ার্ড এবং সিউল ইন্টারন্যাশনাল ড্রামা এওয়ার্ড অর্জন করেছে ।
এটি একটি মনোবৈজ্ঞানিক ইস্যু ভিত্তিক ড্রামা সিরিয়াল যেখানে চা দো হিয়ু একজন সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারের সন্তান যার মাঝে ৭ ধরনের ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান। চা দো হিয়ুর এই ৭ ধরনের ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুকিয়ে আছে তার শৈশবের এক বিভীষিকাময় সময়ের প্রতিফলন যা তাকে প্রতি সময় মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে ফেলে দেয়, বিব্রত অবস্থায় ফেলে দেয় কারন কখন তার কোন ব্যক্তিত্ব দেখা দিবে তার কোন ঠিক নেই। এদিকে সে তার পরিবার এবং বিশাল ব্যবসার উত্তরসূরী। তার বাবার অসুস্থতার কারনে তার ডাক পড়ে এই বিশাল ব্যবসা সামলানোর জন্য। কিন্তু সে তার এই মানসিক রোগের কারনে নিজের উপর ভরসা করতে পারছিল না, এজন্য সে সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরনাপন্ন হয় যে কিনা অনেক আগে তার চিকিৎসার সাথে যুক্ত ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে তার একটি ব্যক্তিত্ব তার প্রথম ভালবাসাকে আবার খুঁজে পায় । ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে তার জীবন, ঘটতে থাকে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা। এসবের আড়ালে চা দো হিয়ুর পরিবারের এক অতি স্পর্শকাতর গোপন ঘটনা লুকানো আছে যা ফাঁস হয়ে গেলে তার পরিবার বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। কিন্তু সেই গোপন ঘটনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে চা দো হিউয়ুর মানসিক রোগের কারন ও চিকিৎসা। এরপর?
এরপর কি হয় তা জানতে হলে নিজেরাই দেখে ফেলুন। ভালবাসা, বিশ্বাস আর মমতার এক অপূর্ব সংমিশ্রন ঘটেছে ড্রামা সিরিয়ালটিতে। আর এই ড্রামা সিরিয়ালটির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল এখানে মানসিক রোগটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি এবং এর চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে দেখানো হয়েছে।
২। Sirius:
IMB Rating: 6.9
পরিচালনায়ঃ ওয়াং লি মো
অভিনয়েঃ ওং কিল বাক, হিয়ুং শিক পার্ক, শিউং সু রু, জুং ইয়ুং সিও সহ আরো অনেকে।
ড্রামা সিরিয়ালটি দুজন জমজ ভাইয়ের কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন খুব চুপচাপ, লাজুক এবং ভীতু অপরদিকে তার অন্য ভাই খুব সাহসী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াকু মানসিকতার। তার জমজ ছোট ভাইটি লাজুক এবং চুপচাপ থাকার কারনে তার বিদ্যালয়ের কিছু বখাটে ছেলে তাকে উত্যক্ত করত এবং মাঝে মাঝেই তাকে মারধোর করত। কিন্তু সে যেহেতু চুপচাপ এবং ভীতু তাই এসব অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ সে করত না।
এরকমই একদিন সে খুব মার খেয়ে এল । ভাইয়ের এরকম অবস্থা দেখে বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিল সে তার ছোট ভাইয়ের বিদ্যালয়ে গিয়ে তার ভাইয়ের মারের বদলা নিবে। যেহেতু তারা জমজ তাই তাদের দেখে কেউ আলাদা করতে পারত না কে কোনটা । তাই পরের দিন দো ইয়ুং চান পার্কের বিদ্যালয়ে যায় এবং যে পার্ককে মারধোর করেছিল তার সাথে দেখা করতে গিয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । যার জন্য দো ইয়ং চান একদমই প্রস্তুত ছিল না। এর ফলে তার জেল হয় এবং এই ঘটনার জন্য তাদের মা পার্ককে দায়ী করে এবং এই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দো ইয়ং চান এবং পার্কের জীবনকে এক অন্য ধারায় প্রবাহিত করে।
এরপর থেকে ঘটতে থাকে একের পর হৃদয়বিদারক ঘটনা। কি সেই ঘটনা? জানতে হলে দেখে ফেলুন ড্রামা সিরিয়ালটি। আশা করা যায় আপনাদের ভাল লাগবে এবং সময় নষ্ট হবে না।
৩। Don’t Worry I am a Ghost:
IMB Rating: 6.9
পরিচালনায়ঃ কি ইয়ুন জিং।
লেখকঃ দা ইয়ুং হুয়াং।
অভিনয়েঃ তাই গিউ বং, শিং হাই পার্ক, বং তাই কিউ সহ আরো অনেকে।
ড্রামা সিরিয়ালটির কাহিনী গড়ে উঠেছে একজন তরুন মুন কিকে ঘিরে যে কিনা হঠাৎ রাস্তায় গাড়ি দূর্ঘটনায় তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। তার আগের কোন কথাই মনে পড়ে না। এমন অবস্থায় সে এক তরুনীকে কিম ইয়ো কে দেখতে শুরু করে যাকে সে ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পায় না। কিম ইয়ো মুন কি কে তার পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে এবং সবসময় তার সাথে সাথে থাকে। কিন্তু মুন কি বুঝতে পারে না কেন কিম ইয়ো তার কাছে আসে বা সে কি ই বা চায় তার কাছে যেহেতু তাকে অন্য কেউ দেখতে পায় না।
একদিন মুন কি কিম ইয়ো কে জিজ্ঞাস করে যে সে তার কাছে কি চায় তখন কিম বলে যে কেউ একজন তাকে খুন করেছে এবং যেদিন তাকে খুন করা হয় সেদিন কিম ইয়ো সেখানে তার বাসায় ছিল। কিম ইয়ো এখন চায় যে মুন কি যেন তার খুনের রহস্য উন্মোচন করে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে। কিম মুন কি কে নানা ধরনের সূত্র দিতে থাকে যেন মুন কি ঐ দিনের ঘটনা মনে করতে পারে। কিম মুন কি কে অনেক ভালবাসত এটা মুন কি জানত না কিন্তু কিম এবং মুন দুজনেই জানত তারা দুজন দুজনকে ভালবাসে কিন্তু কেউ কাউকে কখনো বলেনি। এমন এক সময়ে কিম ইয়ো এর খুন হয়ে যায়।
কিছুদিন চেস্টার পর মুন কি এর স্মৃতি কিছুটা ফিরে আসে। স্মৃতি ফিরে আসার পর যে সত্যটি সামনে আসে তার জন্য মুন কি বা কিম কেউই প্রস্তুত ছিল না। সেই সত্য জানার পর কিম আবার এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চায় আর মুন কি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
কি সেই সত্য ? জানতে হলে দেখে ফেলুন ড্রামা সিরিয়ালটি।