ধরুন, আপনার প্রিয় স্মার্টফোনটি পানিতে পড়ে গেল। কী করবেন তখন আপনি? আর যা-ই করুন, দুশ্চিন্তায় অস্থির হওয়ার কোন কারণ নেই। ফোনটি পানিতে পড়ার সাথেসাথে খুব দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে পারলে একদম বিনা খরচেই আপনি আপনার ফোনটিকে কোন ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবেন। আসুন, জেনে নিই পানির ক্ষতি থেকে স্মার্টফোনকে রক্ষা করার সহজ দশটি উপায় –
১) দ্রুত ফোনটি পানি থেকে তুলে এনে সুইচ অফ করুন:
স্মার্টফোনের সঙ্গে ইউএসবি কেবল, চার্জার, মাইক্রোফোন সংযুক্ত করার ছোট পোর্টগুলোর ভেতর দিয়ে পানি ঢুকে গিয়ে সেকেন্ডের মধ্যেই ফোনের ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তাই দ্রুত ফোনটিকে পানি থেকে বের করুন এবং শর্ট সার্কিট এড়ানোর জন্যে ফোন সুইচ অফ করে দিন।
২) পানি থেকে ফোনটি তুলে এনে পেপার টাওয়েল বা নরম কাপড়ের ওপর রেখে তার ব্যাটারি কাভার এবং ব্যাটারি খুলে নিন:
এই ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফোন পানিতে পড়ে গেলেও, ভেতরে থাকা অনেক যন্ত্রাংশই ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে, যদি সেগুলো ভেজা অবস্থায় কোন শক্তির উৎসের (ব্যাটারি) সঙ্গে যুক্ত না থাকে। (আপনার ফোনের ব্যাটারি অপসারণযোগ্য না হলে এই ধাপটি এড়িয়ে যান)
৩) সিম কার্ড খুলে রাখুন:
যদিও পানিতে সিম কার্ডের তেমন কোন ক্ষতি হয় না, তবু এটি খুলে ফেলাই ভাল। খোলার পর হালকাভাবে মুছে এটিকে পুনরায় ফোনে লাগানোর আগ পর্যন্ত শুকানোর জন্যে রেখে দেয়া উচিত।
৪) ফোনের অন্যান্য আনুষঙ্গিক (যেমন- মেমোরি কার্ড, ইয়ার বাড, ফোন কেইস, প্রোটেকটিভ কাভার) অপসারণ করুন:
ফোনের স্লট ও ফাঁকা অংশ ঢেকে রাখা সবধরণের প্লাগ খুলে ফেলতে হবে, যেন ঐ অংশগুলো বাতাসে শুকিয়ে যেতে পারে।
৫) ফোনের ভেতরের পানি শুকানোর জন্যে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সাহায্য নিন:
ভেজা অংশগুলো বরাবর বিশ মিনিট করে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ধরে রেখে অবশিষ্ট পানিটুকু শুকিয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখুন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার যেন ফোনের খুব কাছ থেকে না ধরা হয়। কারণ এটি স্থির তড়িৎ উৎপন্ন করে, যা ফোনের জন্যে পানির চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক।
৬) ফোন শুকানোর কাজে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না:
যদিও পানিতে পড়ে যাওয়া ফোন শুকানোর জন্যে হেয়ার ড্রায়ারই অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম পছন্দ, তথাপি এটি ব্যবহারে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। হেয়ার ড্রায়ারের বাতাসের চাপ পানিকে ফোনের সূক্ষ্ম ফাঁকফোকর দিয়ে আরও গভীরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে। ফলে ফোনের অনেক ভেতরের দিকে থাকা যন্ত্রাংশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকে। তাই এক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা চলবে না, এমনকি ‘কোল্ড’ মোড-এও নয়।
৭) আর্দ্রতা শুষে নেয়, এমন কোন পদার্থ ব্যবহার করুন:
একটি সাশ্রয়ী উপায় হচ্ছে, চাল ভর্তি থলে বা গামলার মধ্যে সারারাত ফোনটিকে রেখে দেওয়া। এক্ষেত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ফোনটিকে উল্টে পাল্টে দিতে হবে। এতে ভেতরে থাকা পানি বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবে এবং চাল সেই অতিরিক্ত পানি কিছুটা শুষে নেবে।
কিছু বিশেষ আর্দ্রতা শোষণকারী পদার্থ (ডেসিক্যান্ট) আছে, যা চালের চেয়ে ভালভাবে আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে, যেমন- সিলিকা জেল। নতুন জুতো বা ব্যাগ কিনলে তার সঙ্গে প্রায়শই আমরা সিলিকা জেলের প্যাকেট পেয়ে থাকি। প্লাস্টিক ব্যাগ বা বায়ুরোধী বয়ামে এমন এক প্যাকেট সিলিকা জেলের সঙ্গে স্মার্টফোনটি রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এ পদ্ধতির একটি অসুবিধা হচ্ছে যে, সাধারণত এসব প্যাকেটের সবটুকু শোষণক্ষমতা আগে একবার ব্যবহারের ফলে নিঃশেষ হয়ে যায়।
৮) ফোনটিকে রোদযুক্ত কোন জায়গায় রাখুন:
ফোনটিকে রোদযুক্ত জায়গায় তোয়ালে, ন্যাপকিন বা কাগজের ওপর রাখুন। এটির উদ্দেশ্য হচ্ছে ফোনের সব পানি এবং আর্দ্রতা দূর করা।
৯) চব্বিশ ঘণ্টা পার হওয়ার পর ফোনটিকে পরীক্ষা করে দেখুন:
ফোনের প্রতিটি পোর্ট, কম্পার্টমেন্ট এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সব ফাঁকফোকরে পরীক্ষা করে দেখুন কোন পানি বা ময়লা লেগে আছে কিনা। ফোন বা তার কাভারে কোন ধূলোময়লা থাকলে তা মুছে ফোনে ব্যাটারি প্রবেশ করান। এবার ফোন চালু করুন। কোন অস্বাভাবিক শব্দ হচ্ছে কিনা এবং ফোন ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তা লক্ষ্য করুন।
১০) ফোন সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পরও যদি কাজ না করে, তবে ব্যাটারি খুলে রাখা অবস্থায় ফোনটিকে চার্জারের সঙ্গে সংযুক্ত করুন।
এতে যদি কাজ হয়, তাহলে সম্ভবত আপনার ফোনটির একটি নতুন ব্যাটারি প্রয়োজন। আর যদি নতুন ব্যাটারিতেও কাজ না হয়, তাহলে আপনার ফোনটিকে কোন অনুমোদিত বিক্রেতার কাছে নিয়ে যান। তাঁরা এ ব্যাপারে হয়তো আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ফোন পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা গোপন করা উচিত হবে না। কারণ ফোনের ভেতরের কিছু যন্ত্রাংশে আর্দ্রতা নির্দেশক দেওয়া থাকে। তাছাড়া ফোনের সমস্যার যথাযথ কারণ জানতে পারলে তা সারানোও সহজসাধ্য হয়ে ওঠে।
Source: onedio.co