সামার অভ সিক্সটি নাইন থেকে কফি হাউসের আড্ডা ফারাক কতটুকু?

আমরা কথায় কথায় বিভক্ত হই। জেনে না জেনে , বুঝে না বুঝে। কিন্তু দুইদলে ভাগ হয়ে পড়ি ঠিকই । এরকম ভাগ হওয়াতে যেন পৈশাচিক আনন্দ পাই। কেউ কারো কথা শোনার প্রয়োজন মনে করি না । আমার লাইনে আমিই বস ! অনেকটা এরকম বিষয়টা। টেকনিক্যাল ভাবে বিবেচনা করলে ঠিক আছে। সবার আদর্শ একরকম হবে না। এমন চাওয়াটাও বোকামি। কিন্তু তাই বলে দুভাগে ভাগ হয়ে একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ করাটা একেবারেই অনুচিত।

গান এমনই এক বিষয় যা মানবসভ্যতার প্রতিটি পরতে পরতে স্বাক্ষর যার স্বাক্ষর আছে। মানুষের চিন্তা চেতনা তৈরীতে যেমন এই প্রাচীনতম শিল্পের অবদান আছে তেমনিভাবে মানুষকে চিন্তা করতে শেখানোর জন্যও এর ভূমিকা আছে। যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। মানুষ কখনো গানের মধ্যে পেয়েছে প্রেরণা , কখনো পেয়েছে গভীর দুঃখে ডুবে যাওয়ার অনুভূতি। গান এক চিরন্তন ,শাশ্বত বস্তু যার অবদান মনুষ্য প্রজাতি কোনদিনও অস্বীকার করতে পারবে না। গানের প্রাথমিক ইতিহাস বিবেচনা করলে ঈশ্বরের সাথে একটা যোগসূত্র স্থাপনের একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায়। মানুষ গান গাইতে শেখার পর থেকে সবচেয়ে বেশী ডেকেছে এই ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তাকেই। সময় বদলেছে , মানুষ বদলেছে । গানও বদলে গেছে। ঈশ্বরকে খোঁজার পাশাপাশি মানুষ নিজেকেও খুঁজতে চেয়েছে। ফলস্বরূপ গানের পরিধিও বেড়েছে । মানবসভ্যতা আগানোর পাশাপাশি মানুষের স্মৃতিকাতরতাও বেড়েছে। মানুষের মধ্যে প্রেমও শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে । সেসব প্রকাশ পেয়েছে গানে। সাহিত্যের ধরণ দেখে যেমন বলে দেওয়া যায় কোন সময়ে রচিত গানের কথা শুনে কিংবা কম্পোজিশন শুনে অনুমান করা যায় কোন সময়ের গান।

আরো পড়ুনঃ গান নিয়ে যত অদ্ভুত তথ্য, জানলে আপনিও চমকে যাবেন
গানের আবেদনে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে মানুষ খুবই সংবেদনশীল। ভাল গানের কথা , ভাল সুর  না হলে সাময়িকভাবে সাড়া পাওয়া গেলেও তা কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সুতরাং গানকে দীর্ঘস্থায়ী রূপদানের জন্য এর উপাদানের মধ্য স্বচ্ছতা থাকা খুব বেশী দরকার। এই উপাদানের স্বচ্ছতাও নির্ভরশীল বিষয়। পুজিবাদের যুগে গানকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলেই আমি নির্ভরশীল কথাটার উচ্চারণ করেছি । খুব ভাল লিরিকের গানও এখানে পণ্য আবার সস্তা দরের গানও এখানে পণ্য। আর দশটা পণ্যের মত গানকে তো আর যাচাই করা যায় না। সেইজন্য অনেকাংশেই গান আজকে অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল।

এই লেখাটার শুরুতেই বলা হয়েছে আমরা বিভক্ত হতে পছন্দ করি। গান নিয়েও আমরা বিভক্ত হতে বেশ পারদর্শী। বিভিন্ন গানকে বিভিন্ন জনরায় বিভক্তকরা অবশ্যই টেকনিক্যালি ঠিক আছে কিন্তু গানের সার্বজনীন রূপ টা তাতে বাধাগ্রস্থ হয়। যেকোন গানের মূল উদ্দেশ্যই থাকে শ্রোতাকে গানের সাথে রিলেট করানো। সেটা যে জনরা ই হোক না কেন। সেটা হতে পারে রক , সেটা হতে পারে মেটাল , সেটা হতে পারে ফোক। কারো সাথে কারো কোন বিরোধ নেই। কিন্তু শ্রোতাদের মধ্যে একটা স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায় নিজের পছন্দের জনরা বাদ দিয়ে অন্য জনরার গানকে মুন্ডুপাত করতে। এক প্রজন্মের গানের সাথে আরেক প্রজন্মের গানের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য থাকবে সেটা অতি স্বাভাবিক আবার কিছু গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আজীবন দোলা দিতে থাকবে।

আরো পড়ুনঃ প্লে লিস্ট- বর্ষণমুখর দিনে শুনতে পারেন ১০ ভিন্ন ঘরানার বৃষ্টির গান
গানের ভাষা সার্বজনীন। গানের সুর সার্বজনীন। এক ভাষার গান অন্য ভাষার মানুষ বুঝতে না পারলেও গানের সার্বজনীনতায় সে গানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। ইউটিউবের কমেন্ট সেকশনে অনেক গানের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। সর্বশেষ দেসবাসিতো  গান সেটার প্রমাণ দিয়েছে।

বাঙ্গালীদের সবসময়ের জন্য নস্টালজিক একটি গান হচ্ছে মান্না দের কন্ঠে কফি হাউসের আড্ডা  । স্মৃতিচারণ যে গানের মূল উপাদান। এটি একট সময়োউত্তীর্ণ গান। খেয়াল করলে দেখা যাবে গানের যে মূল উপাদান সে স্মৃতিচারণা তা মানবজীবনের একটি অতি অতাবশ্যকীয় উপদান। মূলত এটিই গানকে অমর করে রেখেছে। গানে উপাদান নির্বাচনে যে স্বচ্ছতার কথা বলা হয়েছে যা এইগানে পুরোদমে উপস্থিত। আরেকটি গানের কথা বলবো কানাডিয়ান রক লেজেন্ড ব্রায়ান এ্যাডামসের গান সামার অভ সিক্সটি নাইন  যেকোন মনযোগী শ্রোতা যারা এই দুটি গানই শুনেছেন তাদের কাছে কিন্তু থিমটা পরিষ্কার। দুটো গানের স্মৃতিচারপণার সবচেয়ে সুন্দর দিকটা উঠে এসেছে কিন্তু মান্না দে আর ব্রায়ান এ্যাডামস দুইজনতো দুই ভুবনের মানুষ। দুজন দুরকমের গান করেন। কেউ কারো গান কখন শুনেছেন এমনটাও বলা যায়  না জোর দিয়ে । কিন্তু দিনশেষে তাঁরা একবিন্দুতে মিলেছেন। একইরকম আবেগ প্রকাশ করেছেন সার্বজনীন ভাষার সবচেয়ে বড় মাধ্যম গান দিয়ে। এখানেই গানের সৌন্দর্য , এখানেই গান সার্বজনীন।

Jimmy quit and Jody got married

নিখিলেশ প্যারিসে , মইদুল ঢাকাতে

এই দুটো লাইনের মধ্যে কি আদৌ পার্থক্য করা সম্ভব?