১৮৭৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের ঘটনাকে উপলক্ষ করে সিডনি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল স্বাগতিক নিউ সাউথ ওয়েলসের সাথে সফরকারী ইংলিশদলের ম্যাচকে ঘিরে। বর্তমান সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (সেই সময়ে এটি অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ড নামে পরিচিত ছিল) ১৮৭৯ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই ম্যাচে নিউ সাউথ ওয়ালস খেলছিল ডেভ গ্রেগরীর নেতৃত্বে, অপরদিকে ইংলিশদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল লর্ড হ্যারিস।
দাঙার আগুন জ্বলে উঠেছিল একটি বিতর্কিত আম্পায়ারিং ডিসিশনের কারণে। যখন জর্জ কৌলথার্ড অস্ট্রেলিয়ান স্টার বিলি মার্ডককে আউট দিয়েছিল।
আম্পায়ার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের। কিন্তু অস্ট্রেলীয় সমর্থকরা ভাবলো তিনি ইংল্যান্ডের সমর্থক। তাইএই ডিসমিসালটিকে পক্ষপাতিত্ব বলে মনে হয়। এরপর নিউ সাউথ ওয়েলসের সমর্থকরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
এই সিদ্ধান্তে স্বাগতিক দলের সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এদের অনেকেই পিচে নেমে এসে কৌলথার্ড, এমনকি ইংরেজ খেলোয়ারদেরকেও লাঞ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, বাজিকররা দর্শকদের দাঙ্গা বাঁধানোর জন্য ফুসলে দিয়েছিলো। তাদের বাজি ছিলো এনএসডব্লিউয়ের ওপর। অথচ ম্যাচে স্বাগতিকদেক অবস্থা ছিলো করুণ। ওরা ম্যাচ হারলে বাজিকররা প্রচুর টাকা খোয়াতো। তাই এই সুযোগে ম্যাচ বানচাল করার জন্য জুয়াড়িরা দর্শকদের ক্ষেপিয়ে দেয়।
আরেকটা ধারণা প্রচলিত আছে, ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্বের কারণে ভিক্টোরিয়ান অাম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তটা দর্শকরা মেনে নিতে পারেনি। তাদের কাছে ম্যাচটা সাধারণ কোনো ক্রিকেটের চেয়েও বেশি গুরুত্ববহ ছিলো।
মার্ডককে পরবর্তী ব্যাটসম্যানকে নামানোর জন্য না পাঠিয়ে খেলা স্থগিত করে দেয় গ্রেগরী। নিউ সাউথ ওয়ালসের এই অধিনায়ক লর্ড হ্যারিসকে ডেকে বলে কৌলথার্ডকে আম্পায়ার পদ থেকে অপসারণ করতে। যেহেতু সে নিরপেক্ষতায় বজায় রাখতে পারছে না এবং তার ইংরেজদের হয়ে কাজ করার প্রবণতা বেশি।
এডমুন্ড বার্টন নামক অন্য আম্পায়ারটি কৌলথার্ড ও লর্ড হ্যারিসের পক্ষ নিয়ে বলে যে, মার্ডকের বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্তটি সঠিক। এবং ইংরেজ কৌলথার্ড উপযুক্ত সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তখন এমনকি গ্রেগরীও কৌলথার্ডকে অপসারণ না করেই ম্যাচ পুনরায় আরম্ভ করার পক্ষে রাজি হয়েছিল।
যাই হোক, খেলার কার্যধারা ছিন্ন করার জন্য দর্শকবৃন্দ শোরগোল শুরু করে। ম্যাচটি সেদিনের জন্য পরিত্যক্ত হয়। পরবর্তী রবিবার, রেস্টডে তে খেলাটি পুনরায় হবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লর্ড হ্যারিসের দল একটি ইনিংসের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন করে।
এই দাঙ্গার ফলে ইংল্যান্ড দল সিডনিতে যেসব খেলার শিডিউল ছিল তা বাতিল করে। এই ঘটনাটি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে ফেলে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রগুলোতে তীব্র নিন্দায় মুখরিত হয়ে উঠে।
লর্ড হ্যারিসের লেখা একটি খোলা চিঠি ইংরেজ সংবাদপত্রে ছাপা হয়। কিন্তু এটা নিউ সাউথ ওয়ালসের জন্য চরম নিষ্ঠুরতায় পরিণত হয়, যখন চিঠিটা অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রে ছাপা হয়।
উপরন্তু নিউ সাউথ ওয়ালস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে লেখা একটি রক্ষণাত্মক চিঠি দুই দলের সম্পর্কের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়। এই কাজটি অ্যাংলো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সম্পর্ক ভাঙ্গনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
যাই হোক, ১৮৮০ সালে লর্ড হ্যারিস ইংল্যান্ড দলের প্রতিনিধি হয়ে লন্ডনের ওভালে অস্ট্রেলিয়ানদের আমন্ত্রণ জানালে দুই ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের মধ্যকার এই বিরোধ শিথিল হয়। এই ম্যাচটি ঐতিহ্যবাহী অ্যাংলো অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট ম্যাচগুলোর জন্য দৃঢ় সংযোগ সৃষ্টি করে। বিখ্যাত অ্যাশেজ শুরু হবার আগের ঘটনা এই সিডনি রায়ট। বলা যায় এই দাঙ্গার ফলেই অ্যাশেজ ট্রফির সূচনা হয়।