চীনে কয়েক বছর ধরে বিস্ময়করভাবে স্থাপত্য অনুলিপি করার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার আছে যা ফ্রান্সের প্রকৃত টাওয়ারের এক-তৃতীয়াংশ উচ্চতার। গুয়াংডং প্রদেশে চীনারা তৈরি করে অস্ট্রিয়ার একটি ঐতিহাসিক গ্রাম যা ইউনেস্কো-সুরক্ষিত।হলস্ট্যাটের এই মনোরম স্থানের অনুলিপি নির্মাণকরতে ৯৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।লন্ডনের টাওয়ার সেতুও নিখুত ভাবে অনুলিপি করা হয়েছিল।
চীনের জন্য এই ধরণের স্থাপত্য একটি বৃহত উৎপাদন শিপ্ল।চীনারা বিখ্যাত স্থানের চিহ্নগুলি অনুলিপি করার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। এসব স্থাপত্য দেখতে হাজার হাজার পর্যটক চীনে আসে। বাংলাদেশেও অনুরূপভাবে ২০০৮ সালে প্রতিবেশী ভারতের একটি মাইলফলক অনুলিপি করেছে। দক্ষিণ এশীয় দেশটির বিখ্যাত তাজমহলের একটি প্রায় সম্পূর্ণ প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছিল বাংলাদেশে।
তাজমহল মুঘল স্থাপত্যের সর্বোচ্চ এবং অনন্যসাধারন নিদর্শন যা ১৭ শতকে নির্মাণ শেষ হয়। ২০ বছর লাগে এর নির্মাণ কাজ শেষ হতে।সম্রাট শাহজাহান এই বিস্ময়কর স্থাপত্যশৈলীটি তৈরি করেন। এটি তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজের সমাধিস্থল যিনি সন্তান প্রসবের সময় মারা যান।ভারতে তাজমহল দেখতে বছরে প্রায় 8 মিলিয়ন পর্যটক আসে।
সাদা মার্বেলপাথরের তৈরি বিশ্বের সাতটি সপ্তাশ্চর্যের একটি হল আগরার তাজমহল। বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসানউল্লাহ মনি দ্বারা শুরু হয়েছিল এর অনুলিপি। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে এই ধরনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করার কারণ ছিল বাংলাদেশের তেমন কোন বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র নেই। তিনি আরও বলেন কারণ বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি আগরাতে যেতে বা তাজ দেখা করতে পারে না।তাই তিনি তাদের কাছে তাজকে এনে দিবেন।
প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যা দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে। এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করার মাধ্যমে তিনি আশা করেছিলেন যে এটি কেবলমাত্র দেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করবে না বরং বিদেশী পর্যটকদের কেও আকর্ষণ করবে।
ঢাকার কয়েক মাইল দূরে সোনারগাঁয়ে এটি অবস্থিত। তাজমহলটি প্রায় চার একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় $৫৬মিলিয়ন।ইতালি থেকে মার্বেল, ব্রোঞ্জ, গ্রানাইট আমদানি করে এই ঐতিহাসিক আশ্চর্যের অনুলিপি নির্মাণ করা হয়।বিল্ডিংয়ের কাজটি শেষ করতে কেবল মাত্র পাঁচ বছর লেগেছি। এখানে দেখা যাবে চারপাশের সুন্দর আর মনোরম পরিবেশ , হাজার হাজার নাম না জানা পাখির কিচিরমিচির করা বিকেল আপনার মন ভালো করে দিবে। তাজমহলের নির্মাণ কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ১৭২ টি কৃত্রিম ডায়মন্ড , ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। নির্মাণ কাজে ৬ জন টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ দেয়া হয়। ভারতের তাজমহলকে অনুসরণ করা হয়েছে বলে নির্মাতাকে ভারতে যেতে হয়েছে অনেকবার।
২০০৮ সালে এই তাজমহল উদ্বোধন করা হয়। পর্যটকদের জন্য এখানে প্রবেশের আগে চমৎকার ১০ টি ঝর্ণা রয়েছে যা মুগ্ধ হয়ে দেখার মতোই।
আহসানউল্লাহ মনি তাজমহলের প্রেমে পড়েন ১৯৮০ সালে আগ্রা সফরকালে এবং তিনি বহুবার এই স্থান দর্শন করে। তবে বাংলাদেশে তাজমহলের কপি তৈরি নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা খুশি ছিলেন না। কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য আহসানউল্লাহ মনির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরেরও হুমকি দিয়েছিল।