সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে এখন ভাবাই যায় না। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মূলত ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি ধাপ এবং অংশ। একজন ডিজিটাল মার্কেটারের দিক থেকে বলতে হলে বলা যায় যে, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ছাড়া বর্তমানে কোনো ব্যবসা কিংবা উদ্যোগই সফলভাবে প্রচার করা সম্ভব নয়। কারণ, যে ব্যবসায় সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নেই, সেই ব্যবসা পাহাড় চড়ে উপরে উঠলেও সর্বোচূড়ায় উঠতে পারবে না। তাই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের গুরুত্বকে কোনোভাবেই হেয় করা যায় না।
আপনি যদি ছোটখাট একজন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন, যিনি ফেসবুকের মাধ্যমে বেশ কিছু নতুন ক্রেতা তৈরি করতে চাচ্ছেন কিংবা আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা ও মার্কেটার হয়ে থাকেন যিনি ফেসবুককে শুধুমাত্র মার্কেটিংয়ের কাজে ব্যবহার করতে চান, তাহলেও ফেসবুক আপনার বেশ কাজে আসতে পারে।
আজকের আর্টিকেলটি যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার আক্ষরিক অর্থবিন্যাস নিয়ে। চলুন তাহলে, সোশ্যাল মিডিয়াকে আক্ষরিক অর্থে অ্যা-বি-সি-ডিতে আসলেই বর্ণনা করা সম্ভবপর হয় কি না, সে বিষয়টাই একটু জেনে নেওয়া যাক।
A – Authenticity
আপনি ব্র্যান্ড হোন কিংবা একজন ইনফ্লুয়েন্সার, আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার অবস্থান হওয়া উচিত সঠিক আর শুদ্ধ। শুদ্ধতার মাধ্যমেই আপনার অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন, উদ্ভট আর মিথ্যে প্ররোচনায় নয়।
B – Brand Voice
আপনার ব্র্যান্ডের বা আপনার সার্ভিসের শুদ্ধতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে, সত্যতা প্রকাশের ক্ষেত্রে সবার পূর্বে আপনাকেই এর পাশে দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর মাধ্যমেই আপনার ব্র্যান্ডের ভিজ্যুয়াল নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পাবে।
C – Consistency
আপনি হয়তো বারবার শুনেছেন যে, একাত্মতাই হচ্ছে সফলতার মূল চাবি। আসলেই তাই! আপনার সম্পর্কে চেনানোর জন্য, আপনার সার্ভিস বা আপনার পক্ষে আরো বেশি ফলোয়ার নিয়ে আসার জন্য একাত্মতার জুড়ি নেই।
D – Dedication
ইন্টারনেট যেহেতু কখনো ঘুমিয়ে থাকে না, তার মানে দাঁড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াও কখনো অলস হয়ে পড়ে না। সোশ্যাল মিডিয়াগুলো প্রায় ২৪ ঘন্টাই জাগ্রত। আর তাই এই কি-পয়েন্টটাকে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি নিজেকে ডেডিকেট করতে পারেন ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধিতে।
E – Engagement
কখনো এমন কাউকে অবহেলা করবেন না, যাকে আপনার কখনো না কখনো দরকার পড়বে। আর তাই এর জন্য প্রয়োজন অ্যাঙ্গেজমেন্টের। শুধুমাত্র পুরনো সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখতেই নয়, বরঞ্চ নতুন কিছু সম্পর্ক তৈরিতে অ্যাঙ্গেজমেন্ট নামক এই কি-পয়েন্টের গুরুত্ব অসীম।
F – Fun
চেষ্টা করুন, মাঝেমাঝেই ট্রেন্ডের সাথে যুক্ত হতে। এতে নিজের আনন্দের পাশাপাশি, আপনার ফলোয়াররাও বুঝতে পারবে আপনি আসলে তাদেরই মতো কেউ একজন। আর এতে করে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার ইনফ্লুয়েন্সড ক্ষমতার বাড়বে।
G – Goals
লক্ষ্য তৈরি করুন। সঠিক লক্ষ্য আপনাকে সঠিক রাস্তা দেখাতে সাহায্য করবে। কিন্তু আপনার লক্ষ্য যদি অস্পষ্ট হয় তাহলে আপনি ভুল পথে পা দেবেন।
H – Humor
রোবোটের মতো জীবনযাপন না করে আপনার কর্মক্ষেত্রে আর সেবাদানেও চেষ্টা করুন আনন্দ আর মিষ্টতা নিয়ে আসতে। এটা শুধুমাত্র কাজের ক্ষেত্রেই নয়, বরঞ্চ আপনার ফলোয়ার বৃদ্ধিতেও অনেক সাহায্য করবে।
I – Influencers
ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে যুক্ত হোন। অনেককেই দেখেছি তারা নিজেদের নিজের ইনফ্লুয়েন্সার যারা আছে তাদের সাথে যুক্ত থাকেন না বা থাকতে চান না। কিন্তু কেন? ইনফ্লুয়েন্সারদের থেকে দূরে না থেকে তাদের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে বেশ কিছু নতুন ফলোয়ারের পাশাপাশি একটা কমিউনিটিতেও যুক্ত হতে পারবেন। আর ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে যুক্ত হওয়া মানে নতুন ট্রেন্ড সম্পর্কে বেশ নতুন কিছু জানতে পারা!
J – Judgement
একটা কথা আমি প্রায়ই বলি, “যখন আপনি একটা লক্ষ্যে আছেন তখন সেটা যাতে আপনার ঘুম থেকে খাওয়া, খাওয়া থেকে বাথরুম, বাথরুম থেকে কাজ, কাজ থেকে ঘুম – এমনভাবে ২৪ ঘন্টাই আপনার মাথায় থাকে!” অর্থাৎ, আপনি যখন একটা ব্র্যান্ড তৈরি করছেন তখন যেন আপনার পুরো লক্ষ্যই থাকে সেই ব্র্যান্ড নিয়ে, পুরো চিন্তাচেতনা আর যুক্তি থাকে সেই ব্র্যান্ড নিয়েই। এমন জাজমেন্ট তৈরি করুন যাতে আপনার ব্র্যান্ডের ভালো হয়।
K – Keyword Research
কীওয়ার্ড হচ্ছে এমন কিছু শব্দ বা বাক্য যেগুলো মূলত একজন মানুষ সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করার সময় সার্চ বাক্সে লিখে থাকে। আপনি আমার ব্র্যান্ডকে সার্চ করার জন্য কোন কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, তা-কি আমার পক্ষে জানা সম্ভব? আপনি ভাবছেন, “এতো অসম্ভব। কারণ, লক্ষ কোটি কী-ওয়ার্ড লেখা যেতে পারে একটা বিষয় খোঁজার জন্য। এটা কোনোভাবেই বলা সম্ভব নয়!”
কিন্তু আমি যদি বলি, এটা সম্ভব! আর এই জাদুটাই জানে ডিজিটাল মার্কেটাররা, যেটাকে বলে কী-ওয়ার্ড রিসার্চ। তারা এমন কিছু টেকনিক ব্যবহার করে, যেগুলোর দ্বারা তারা আপনার মনের কথা পড়তে পারে। তো এই বিষয়টার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, কী-ওয়ার্ড রিসার্চ করা ছাড়া একটা ওয়েবসাইট মেইনটেইন করা আর তেলের বদলে পানি দ্বারা গাড়ি চালানোর চেষ্টা করা একই। চলতে চলতে আটকে যাবে, কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানো আর হবে না!
L – Listening
আপনার কাস্টোমার, আপনার অডিয়েন্স, আপনার ফলোয়ারের কথা শুনুন। তাদের সমস্যাগুলোকে নিয়ে ভাবুন। মনে রাখবেন, তারাই আপনার উপযোগ!
M – Managing
বর্তমানে প্রায় হাজার হাজার সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক রয়েছে। তার মধ্যে, আপনাকে অবশ্যই যেগুলো খুব প্রয়োজনীয় সেগুলোতে একটিভ থাকা উচিত। কিন্তু ৫ টা সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কও একসাথে ম্যানেজ করাটা বেশ কষ্টকর। এই বিষয়টাতেই আপনাকে বেশ ভালোভাবে দক্ষ হতে হবে।
N – Niche
কথায় আছে, ফাইন্ড দ্যা নিশ, ফিল দ্যা নিশ এন্ড ওউন দ্যা নিশ! সঠিক নিশ খুঁজে বের করাটা বেশ কষ্টকর আর সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নিশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সুপার একটিভ হতে হবে। সঠিক নিশ বাছাই না করতে পারলে আপনি সঠিকভাবে মার্কেটে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না।
O – Optimization
ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজেশনের কথাটা নাহয় মানা যায়। শুধুমাত্র এসইও করেই ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করা সম্ভব। কিন্তু আপনার সোশ্যাল মিডিয়াকে অপ্টিমাইজ কীভাবে করবেন? সোশ্যাল মিডিয়াকেও অপ্টিমাইজ করা সম্ভব। সঠিক অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াকেও বেশ ভালো অবস্থানে নিয়ে আসা যায়।
P – Planning
সঠিক প্ল্যানিং আপনার কাজের ইফিশিয়েন্সি চল্লিশভাগ বৃদ্ধি করে দিতে পারে। সঠিক প্ল্যানিংয়ের কোনো জুড়ি নেই। হোক এটা মার্কেট রিসার্চ কিংবা বিজনেস প্ল্যানিং। সঠিকভাবে প্ল্যানিং করলে কাজের ক্ষমতা আর সফলতার নিশ্চয়তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
Q – Quality & Quantity
এই দুটো বিষয়ের দিকে মনোযোগ দিন। সবসময় কোয়ালিটি বা গুণগত মান কাজ করে না, তখন এই অন্য গুণটা, অর্থাৎ কোয়ান্টিটি বা পরিমাণের দিকেও মনোযোগ দিতে হয়। আবার কোনোক্ষেত্রে দুটো একসাথে ব্যবহারের কারণেই ওয়েবসাইট ভিজিটর বৃদ্ধি করা যায়!
R – Responding
সোশ্যাল মিডিয়াতে অবস্থান করা মানে শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করাই নয়, বরঞ্চ আপনাকে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার আর অডিয়েন্সের প্রশ্ন, তাদের জিজ্ঞাসা আর তাদের প্রশংসা শোনার ধৈর্য আর সময় রাখতে হবে। এতে করে অ্যাঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি পাবে।
S – Sharing
কথায় আছে, শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং। আপনার অডিয়েন্স আর আপনার মাঝে পার্থক্য হচ্ছে একটা রেখার। এই রেখার ওপাশে আপনি যত বেশি শেয়ার করতে পারবেন, যত বেশি বলতে পারবেন, যত বেশি জানাতে পারবেন আপনার ওপাশের অডিয়েন্স তত বেশি আপনার সাথে ইন্টারেক্ট করতে চাইবে।
T – Tools
সঠিক টুলসের ব্যবহার আপনাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে, কোনো টেকনিক্যাল দক্ষতা ছাড়াই। আর সঠিক মার্কেটিং টুলস ব্যবহারের কারণে আপনার সময় কম লাগবে এবং কাজের কষ্টও কমে যাবে। আমরা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এসইও করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো টুলস ব্যবহার করি। ঠিক তেমনি অনেক ফ্রি মার্কেটিং টুলস রয়েছে, যেগুলো দ্বারা খুব সহজেই আপনিও আপনার সাইটের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনতে পারেন।
U – Uniqueness
অনন্য হিসেবে গড়ে উঠাটা সহজ কিন্তু এটাকে ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা বেশ কঠিন। আপনি খুব সহজেই নিজেকে ইউনিক বলে প্রকাশ করতে পারেন কিন্তু এই অনন্যতা ধরে রেখে অডিয়েন্সের ফুল কুড়ানোটা বেশ কঠিন কাজ।
V – Virality
এমন কন্টেন্ট লিখুন, যেটা ভাইরাল হবে। যেটা হাজার হাজার মানুষ পড়বে। আমার বেশ কিছু কন্টেন্ট রয়েছে এখানে, যেগুলো প্রায় কয়েক লক্ষের বেশি মানুষ পড়েছে। এগুলোকেই ভাইরাল কন্টেন্ট বলে। ভাইরালিটি আপনাকে ক্ষণিকের জন্য উপরে তুলে রাখলেও আপনাকে আপনার সঠিক অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
W – Whereabouts
আপনি কোথায় আছেন আর কী করছেন, এই বিষয়টার দিকে আপনাকে ভালোভাবে লক্ষ্য রেখে এগুতে হবে। কারণ, আপনি নিজেও হয়তো জানেন না যে, কীভাবে এগুলে আপনার সুবিধা হবে। আর তাই, সম্ভব হলে সব জায়গাতেই থাকুন কিন্তু নিজের ওজন বজায় রেখে।
X – Xylography
জাইলোগ্রাফি হচ্ছে কাঠে খোদাই করার বিদ্যা। আপনাকে মানুষের মনে খোদাই করার বিদ্যাটা জানতে হবে।
Y – Ylem
এটা হচ্ছে এক ধরণের ভাস্কুলার টিস্যু, যেটা মূলত বিভিন্ন গাছের বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান পানি আদানপ্রদানের কাজে ব্যবহৃত হয়। আপনাকেও আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আর আপনার ব্র্যান্ডকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, এই সোশ্যাল মিডিয়াকে ভাস্কুলার টিস্যু হিসেবে ব্যবহার করতে হবে! পারবেন তো?
Z – Zeal
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের অগণিত মাত্রায় ব্যবহারের জন্য একটা কন্ঠ দিয়েছে। সেটাকে সঠিক কাজে ব্যবহার করে, সেটাকে সঠিক পথে লাগিয়ে আমাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
সোশ্যাল মিডিয়া বেশ শক্তিশালী একটা ডিজিটাল মার্কেটিং মেথড। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে আপনার ব্র্যান্ডিংটাকে আরো সুউচ্চ গম্বুজে পৌঁছে দিতে এর ব্যবহার না করলেই নয়!