খুব ছোটবেলায় আমাদের সবার কার্টুন দেখার শুরুটা “মীনা”, “মিকি মাউস”, “টম এন্ড জেরি”, “ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট”সহ বিভিন্ন কার্টুন দিয়ে সাজানো ছিল। আরেকটু বড় হতেই তার সাথে যুক্ত হয় প্রাণ-এর কমিক্স, দারুণ সব চরিত্র চাচা চৌধুরী, বিল্লু, পিংকী দিয়ে। কিন্তু এসবগুলোই যে ভিনদেশি।
খুব সম্ভবত ২০০০-২০০১ সালের দিকে একুশে টিভি’তে “মন্টু মিয়ার অভিযান” নামে বাংলাদেশে তৈরি এনিমেশনটি আর সবার মত আমার কিশোর মনেও নাড়া দিয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালের দিকে আসে “ত্রাতুলের জগৎ”, যা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়। এগুলো দিয়ে বাংলাদেশের এনিমেশন জগতের সূচনা হয় বলা যায়।
এরপরে ২০১৩ সালে ইউটিউবে ঝড় তোলে বাংলাদেশি এনিমেশন স্টুডিও টুন বাংলা’র টু-ডি এনিমেশন “মুরগী কেন মিউট্যান্ট”। কিন্তু এই কাজগুলো এসেছে বেশ কয়েক বছর বিরতির পর।
ছোটবেলা থেকে কার্টুন আঁকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু যা হয়, পড়ালেখা, জীবিকার তাগিদে নিজের এই ভাল লাগার জায়গাটা পরিচর্যার অভাবে যেন মরতে বসেছিল। ২০১৬-তে উত্তরাতে থাকাকালীন “সাইকোর স্টুডিও” খোঁজ পাই, যেখানে আমার থ্রি-ডি এনিমেশন শেখার হাতে খড়ি হয়।
সাইকোর-এর সাথে মানসিক একটা যোগসূত্র অনুভব করার কারণ হচ্ছে, এর যিনি প্রতিষ্ঠাতা, মুরাদ তালকিন ভাইয়ের একটা ব্যপারের সাথে নিজের মিল খুঁজে পাই। উনি দেশে যেমন EEE নিয়ে পড়া শেষ করে আমেরিকা ফুল সেইল ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে এনিমেশনের উপর পড়াশোনা করে আসেন, আমিও সেরকম নিজের অনার্স বা এম এস এর পড়া বিষয়ের বাইরে এসে এনিমেশন বা কার্টুন আঁকা শেখার চেষ্টা করছি। তো সাইকোর স্টুডিও কোর্স করার সময় মুরাদ তালকিন ভাই, আবির মাহমুদ ভাই, শোভন ভাই থেকে এনিমেশনের ব্যাসিক ধারণাগুলো পাই।
সাইকোর স্টুডিও’র কাজগুলো দেখলে যে কেউ একবাক্যে স্বীকার করবেন, তারা বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমানের কাজ উপহার দেয়ার প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নেমেছে। সাইকোর স্টুডিওর আগের কিছু কাজের লিংক
প্রজেক্ট ন্যানোবট
স্কাই ল্যান্টার্ন
আমাদের সবার প্রিয় সাইকোর স্টুডিও আর দীপ্ত টিভি দীর্ঘ আড়াই বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর নিয়ে আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি শর্ট এনিমেশন মুভি “টুমরো”, যা মূলত পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরিতে নির্মিত হয়েছে। এর পরিচালক মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন ভাইয়ের সাথে ফেসবুকে পরিচয়। উনার প্রতিটা স্ট্যাটাসের সাথে গত ২ বছর ধরে আমি বা আমার মতো আরো অনেকে “টুমরো’র সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত না হলেও মানসিকভাবে যুক্ত হয়ে গিয়েছি।
“Tomorrow”-র টিজার ভিডিও
https://youtu.be/p19-O1VSaKc
২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর যখন দীপ্ত টিভির ইউটিউব চ্যানেলে এ মুভির টিজার রিলিজ দেয়া হয়, তখন থেকে একটাই প্রশ্ন ছিল, “ভাই, কবে আসবে মুভিটা?” এনিমেশন মুভি ভালবাসেন, কিন্তু এই টিজার দেখে সেদিন আবেগাপ্লুত হন নি, এরকম কেউ বোধ হয় নেই। এখন পর্যন্ত সেই টিজার ইউটিউবে দেখা হয়েছে ৩৫,৭২৭ বার, ১৯০০ জন ভিডিওতে লাইক দিয়েছেন, কমেন্ট করেছেন ৩২৯ জন। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মতো জায়গায় যেখানে মূল চলচ্চিত্র শিল্প একটা ক্রান্তি লগ্ন অতিক্রম করছে, তখন “টুমরো” নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।
বাংলাদেশে নির্মিত এই অ্যানিমেটেড সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে দীপ্ত টিভিতে।
আগামী ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭ টায় দীপ্ত টিভিতে ‘টুমরো’ সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে এবং পরের দিন ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় পুনঃপ্রচারিত হবে।এর আগে ২৩ নভেম্বর ‘টুমরো’ প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে।কাজী জাহিন হাসান এবং কাজী জিসান হাসান এর প্রযোজিত সিনেমাটির কাহিনি রচনা করেছেন নাসিমুল হাসান ও আহমেদ খান হীরক।
বাংলাহাব টিম এর পক্ষ থেকে “টুমরো”র জন্য রইলো শুভ কামনা।
লেখক- জুলকারনাইন মেহেদী, এডিটর-ইন-চিফ, বাংলাহাব