শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া আমরা এক মূহুর্তও বেঁচে থাকার কথা ভেবে উঠতে পারি না। আর এই শ্বাস-প্রশ্বাস চলে বায়ুর মাধ্যমে। প্রতিবার নিঃশ্বাসের সাথে বাতাসের অক্সিজেন আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে। আর সে সাথে প্রবেশ করে কিছু প্রাণঘাতী কণা। দূষিত এই কণা সৃষ্টি করছে নানারকম জটিল রোগ। বর্তমানে পৃথিবীর প্রতি দশ জনের নয় জনই বায়ু দূষণে আক্রান্ত। প্রতিবছর এই বায়ু দূষণের কারণে পৃথিবীর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের একটি নতুন গবেষণায় তারা এ তথ্য প্রকাশ করে।
১০৮ টি দেশের ৪ হাজার ৩০০ টি শহরের উপর ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) তাদের এই গবেষণা চালায়। তাদের মতে এই গবেষণাটি বায়ূ দূষণের উপর সবচেয়ে বিস্তৃত গবেষণা। প্রতিষ্ঠানটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ড. মারিয়া নিরা বলেন, বায়ু দূষণের এই পরিসংখ্যান দেখে আমি বেশ শঙ্কিত। বিশেষ করে পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে বায়ু দূষণের পরিমাণ তো মাত্রাতিরিক্ত। বর্তমান বিশ্বে বায়ু দূষণ সবচেয়ে বড় হুমকি। এ বিষয়ে আমার কোন দ্বিধা নেই।
আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সাথেই দূষিত এই বায়ুতে থাকা বিভিন্ন বিষাক্ত কণা আমাদের ফুসুফুসে প্রবেশ করছে। এর ফলে অ্যাজমা, ফুসফুসে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ধমনী জনিত রোগের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বিষাক্ত এই বায়ু কণারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সালফেট, কার্বণ, নাইট্রেট। এসব কণা গাড়ি, শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ফার্ম থেকে উৎপন্ন হচ্ছে।
ডব্লিউএইচও এর মতে ২০১৬ সালে বায়ু দূষণের কারণে ৪২ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মারিয়া আরও জানান, মেগাসিটিগুলোতে বায়ু দূষণের মাত্রা খুব বেশি। যা সাধারণ দূষণ মাত্রা থেকেও ৫ গুন বেশি। বায়ু দূষণের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের উপর। বায়ু দূষণের কারণে এই পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার শতকরা ৯০ ভাগই এই অঞ্চলের মানুষ। তবে ইউরোপ, আমেরিকা ও পূর্ব ভূ-মধ্যসাগ্রীয় অঞ্চলের বড় বড় শহরগুলোর বায়ু দূষণের মাত্রা স্বাভাবিক মানের থেকেও অনেক বেশি। যেহেতু আমরা আমাদের এই গবেষণার উৎস আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছি সেহেতু বায়ু দূষণকারী শহরের কোন ক্রম আমরা তৈরি করিনি। তবে দূষণের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহর গুলো উপরের দিকেই অবস্থান করছে। তবে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ও পেশোয়ারের সাথে তাদের কোন তুলনাই সম্ভব নয়। কারণ গবেষণা অনুযায়ী এই দুটো শহরে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু পাওয়া গিয়েছে। এই দুটো শহরের সাথে ভারতের ভারানসি,কানপুর, দিল্লী এবং সৌদি আরবের আল-জুবাইল শহরেরও তুলনা সম্ভব।
গবেষণায় দেখা যায় উন্নয়নশীল অঞ্চলের শহরগুলো বায়ূ দূষণের দিক থেকে এগিয়ে। এসব অঞ্চলের মানুষের বসতবাড়ি থেকেই বায়ু দূষণ হচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে রান্নার জ্বালানী। এসব অঞ্চলে খুব কম সংখ্যক মানুষই আছে যারা প্রক্রিয়াজাত গ্যাস অথবা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। কাঠ কয়লাই তাদের মূল জ্বালানী। আর এসব কাঠ কয়লা পুড়ানোর মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে কার্বণ ডাই অক্সাইড এবং কার্বণ মনোক্সাইড।
তবে ভালো খবর এই যে বায়ু দূষণ রোধে অনেক দেশ এগিয়ে এসেছে। নিজ দেশের শহরের বায়ু দূষণ তারা তদারকি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বায়ু দূষণের পরিমাণ কমানোর জন্যে গাড়িতে চলার পরিবর্তে হাঁটার উপদেশ দিয়েছেন। যখন বায়ুতে দূষণের পরিমাণ বেড়ে যাবে তখন বাড়ির ভিতরে থাকার কথা বলেছেন তারা।
তবে , ডব্লিউএইচও তাদের এই গবেষণা যে শুধু বায়ু দূষণকারী শহরগুলোর কথাই উল্লেখ করেছে তা নয় বরং তারা এও উল্লেখ করেছে যে কোন শহরগুলোর বায়ু দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে কম।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, এরিজোনা, কলোরাডোর মত শহর আছে এই তালিকায় যেখানে বায়ু দূষণের পরিমাণ একদমই কম। এসকল শহর অন্যান্য শহরগুলোর মত একটি রোলমডেল হতে পারে।
সি এন এন অবলম্বনে লিখেছেন তানভীর রায়হান রিজভী