গল্প – একঃ
ছোটবেলায় প্রচন্ড রাগী ছিলাম আমি। বাবা একদিন আমাকে একটা পেরেক ভর্তি ব্যাগ দিলেন আর বললেন যে, ‘যতবার তুমি রেগে যাবে ততবার একটা করে পেরেক আমাদের বাগানের কাঠের বেড়াতে লাগিয়ে আসবে।’
প্রথম দিনেই আমি বাগানে গিয়ে ৩৭ টি পেরেক মারলাম। পরের কয়েক সপ্তাহে রাগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে শিখলাম, তাই প্রতিদিন কাঠে নতুন পেরেকের সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমে এলো। আমি বুঝতে পারলাম হাতুড়ী দিয়ে কাঠের বেড়ায় পেরেক বসানোর চেয়ে রাগকে নিয়ন্ত্রন করা অনেক বেশি সহজ। শেষ পর্যন্ত সেই দিনটি এলো যেদিন একটি পেরেকও মারতে হলো না।
আমি বাবাকে এই কথা জানালাম। বাবা এইবার আমাকে বললেন, ‘এখন থেকে তুমি যেসব দিনে তুমি একবারও রাগবে না, সেদিন একটি করে পেরেক খুলে ফেলো। অনেক দিন চলে গেল এবং আমি একদিন বাবাকে জানালাম যে সব পেরেকই আমি খুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।
তখন বাবা আমাকে নিয়ে বাগানে গেলেন এবং কাঠের বেড়াটি দেখিয়ে বললেন, ‘তুমি খুব ভাল ভাবে তোমার কাজ সম্পন্ন করেছো, এখন তুমি তোমার রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারো। কিন্তু দেখো, প্রতিটা কাঠে পেরেকের গর্ত গুলো এখনো কিন্তু রয়ে গিয়েছে। কাঠের বেড়াটি কখনোই আর আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। যখন তুমি কাউকে রেগে গিয়ে কিছু বলো তখন তার মনে ঠিক এমনই একটা আঁচড় পড়ে যায়।’
শিক্ষা- রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রাগ থেকে নেয়া সিদ্ধান্ত কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না। তাই নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখুন। মানসিক ক্ষত অনেক সময় শারীরিক ক্ষতের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর।
গল্প – দুইঃ
বিশাল এক পাহাড়ের উপরে এক ঈগল বাসা বানিয়েছিলো। ঈগলের বাসায় ছিলো তার পাড়া দুইটি ডিম। প্রতিদিন সকালে সে এগুলো রেখে খাবারের খোঁজে উড়ে যেত বাইরে।
একদিন ঈগল যখন বাসার বাইরে ছিলো তখন ভূমিকম্পে গোটা পাহাড়টাই নড়ে উঠলো। এতে ঈগলের একটি ডিম বাসা থেকে ছিটকে পড়ে গেল। গড়াতে গড়াতে সেই ডিম এসে পড়লো পাহাড়ের নিচে এক মুরগীর বাসার সামনে।
মুরগী ডিমটিকে নিজের বাসায় নিয়ে এলো, অন্যান্য ডিমের সাথে রাখল। যত্ন করে তাতে তা দিতে থাকলো। একদিন সেই ডিম ফুটে ঈগলের একটি সুন্দর বাচ্চাও বের হলো। মুরগীর বাচ্চাদের সাথেই ঈগলের বাচ্চাটি বড় হয়ে উঠতে লাগলো।
আকাশে একদিন ঈগলের ঝাঁককে উড়ে যেতে দেখে সে অন্য মুরগীদের বললো, ‘ইস, আমিও যদি তাদের মত উড়ে বেড়াতে পারতাম!’ এক মুরগী হেসে উত্তর দিলো, ‘তুমি কিভাবে উড়বে? তুমি তো মুরগী এবং মুরগী কখনো উড়ে না।’
ঈগল মাঝে মাঝেই ঈগলের ঝাঁক উড়ে বেড়াতে দেখতো এবং স্বপ্ন দেখতো সেও তাদের মতই উড়ে বেড়াবে। কিন্তু প্রতিবার সে তার স্বপ্নের কথা জানালে মুরগীরা বলতো যে এটা একেবারেই অসম্ভব। মুরগীর এই কথাটিই ঈগল বিশ্বাস করতে শিখলো এবং তার জীবনটা বাকী মুরগীদের মতই কাটিয়ে দিলো। অনেক দিন এভাবে কাটানোর পর একদিন সে মারাও গেল।
শিক্ষাঃ আসলে আমাদের জীবনেও এটা চরমতম সত্য। তুমি যা বিশ্বাস করতে শেখো একদিন তুমি তাই হয়ে উঠবে। তাই তুমি যদি ঈগলের মত উড়ার স্বপ্ন দেখো, তবে সেই স্বপ্নকেই অনুসরন করো। মুরগীর কথায় কান দিতে যেও না।
গল্প – তিনঃ
একজন বয়স্ক রাজমিস্ত্রী সে তার কাজ থেকে অবসর নিতে চাইলো। তাই সে তার মালিকের কাছে গিয়ে বললো, ‘বস,আমি এই বাড়ি বানানোর কাজ থেকে অবসর নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটাতে চাই’।
তার মালিক এতে কিছুটা দুঃখ পেলেন কারণ সে ছিলো সবচেয়ে দক্ষ ও কর্মঠ রাজমিস্ত্রী। তবুও তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে, কিন্তু তুমি কি চলে যাওয়ার আগে আর একটি মাত্র বাড়ি বানাতে আমাদের সাহায্য করবে?’ বয়স্ক রাজমিস্ত্রী এই প্রস্তাবে স্বানন্দে রাজী হয়ে গেল।
কিন্তু কাজ শুরু করার পর দেখা গেল তার মন সেখানে ছিল না এবং সে সবসময় তার অবসরের কথা ভেবে অন্যমনস্ক থাকতো। সবসময় সে বাড়ির কথা চিন্তা করতো। তাই এর আগে যত কাজ সে করেছিলো শেষ কাজটাই তার করা সবচেয়ে খারাপ কাজ হয়ে গেল।
যখন সে বাড়িটি তৈরী করা শেষ করলো তখন তার মালিক বাড়িটি দেখতে এলো এবং বৃদ্ধের হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে বললো, ‘এটা এখন থেকে তোমার বাড়ি, তোমার দীর্ঘ বিশ্বস্ততার জন্য তোমার প্রতি এটা আমার উপহার।’
এই কথা শুনে বৃ্দ্ধ আফসোস করে উঠলো! সে মনে মনে ভাবলো, ‘হায় হায়! যদি আমি শুধু একবার জানতাম যে আমি আমার নিজের বাড়ি তৈরী করছি তাহলে এটা আমার জীবনে করা সবচেয়ে ভাল কাজ হতো!’
শিক্ষাঃ আমরা প্রতিটা দিন আমাদের জীবনকে এই বাড়ির মতই তৈরী করে চলেছি। কিন্তু আমরা প্রায়ই তা ভুলে যাই। আর তাই সব কাজে আমাদের বেস্ট টার চেয়ে অনেক কম চেষ্টাটা করি, অনেক কম পরিশ্রমটা দেই। আমরা যদি আজ এই সত্যটা উপলব্ধি করতে পারি তবে আমরা হয়তো আমাদের সেরা পরিশ্রমটাই দিতে পারবো।