আগের পোষ্টে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান ওইময়াকোন সম্পর্কে লিখেছিলাম যেখানে মানুষের বসবাস প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আজ যে স্থান সম্পর্কে লিখতে চাচ্ছি সেখানে জীবনধারণই অসম্ভব ব্যাপার ! অথচ সেখানে মানুষ বসবাস করছে তাও আবার সাচ্ছন্দ্যে এবং স্বাভাবিকভাবে। এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম এবং শুষ্ক উত্তপ্ত একটি স্থান। এটি ইথিওপিয়ার ডানাকিল ডিপ্রেশন। ইথিওপিয়ার আর একটি অঞ্চল যার নাম আফার। এটি উত্তরপূর্ব ইথিওপিয়ার ইরিত্রিয়া সীমানার কাছে অবস্থিত। ডানাকিল ডিপ্রেশনটি একটি ভূতাত্ত্বিক বিষণ্নতা যা ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া সীমান্তের সমুদ্রের সমুদ্রের নিচে অবস্থিত। ডানাকিল ডিপ্রেশন জীবকূলের জন্য একটি চরম স্থান। এটি একটি আগ্নেয়গিরির এলাকা যা ডালল ভলকানো থেকে লেক আসাল পর্যন্ত বিস্তৃত, ইরিত্রিয়া দিয়ে ইথিওপিয়া সীমান্তের কাছে। এ এলাকা সমুদ্রতল থেকে ১০০ মিটার (৩২৮ ফুট) এবং ম্যাগমা পৃষ্ঠের খুব ঘনিষ্ঠে প্রবাহিত হয়।
এখানে চামড়া গলে যেতে পারে বা খুব সহজেই ফোষ্কা পড়তে পারে ! মাথার মগজ যেন টগবগ করে ফুটতে থাকে, তৃষ্ণায় যেন ছটফট করতে থাকে প্রাণ ! বিশ্রাম নেবার শীতল ছায়া নেই, বাতাস নেই, তৃষ্ণা মেটানোর পানি পাওয়াও দুষ্কর ! অথচ সেই চরমভাবাপন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতেও কিছু অদ্ভূত মানুষের রয়েছে শান্ত বসবাস। তবে তারা যাযাবর জাতি বলা যায়। তারা আফার জাতি। যাদেরকে এমন পরিবেশ পরিস্থিতিতেও অসাধারণভাবে শীতল এবং আরামদায়ক লাগে। পূর্বপুরুষ থেকে তাদের এখানে বসবাস। বহুকালের বিবর্তণের ফলে তাদের দেহগুলি তাপ ও শুকনোতে অভিযোজিত। তাই তাদের অধিকাংশ লোকের তুলনায় অনেক কম খাবার এবং পানি দরকার। আফার জনগোষ্ঠির প্রধান জীবিকা নির্ভর করে লবণের উপর। তাদের কাছে লবণ হলো টাকার মতো। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে লবণ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। আর এসব লবণ পরিবহনের জন্য তারা উট এবং গাধা ব্যবহার করে। লবণ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার জন্য তারা একসঙ্গে উটের পাল নিয়ে লবণ সংগ্রহ করে।
এই এলাকায় একটি মাত্র নদী আছে যার নাম আওয়াশ। আওয়াশ নদীর পানি অন্যসব নদীর মত সমুদ্রে মিলিত হয় না। এটি শুধুমাত্র ইথিওপিয়ার উচ্চভূমিতে প্রবাহিত হয়ে ডানাকিল ডিপ্রেশনের লেকে গিয়ে শেষ হয়।
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর অস্বাভাবিক প্রতিকূল স্থান। এখানে দিনে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস [১০৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট] এবং রাতে ৩০ ডিগ্রী [মাঝারি ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট], যা ক্লোরিন বাষ্প বাতাসগুলিকে পুড়িয়ে দেয়।
এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত হয়না বললেই চলে। এখানে বছরে মাত্র একবারই বৃষ্টি হয়। যার মাত্রা সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়। ডানাকিল ডিপ্রেশন পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু স্থান। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকেও প্রায় ৪১০ ফুট নিচে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের মতে এই স্থানটি মানুষ বসবাসের সম্পূর্ণ অনুপযোগী বিষন্নতম জায়গা।
ভৌগোলিক ও জলবায়ুর বিশাল তারতম্যের কারণে স্থানটি এ্যালিয়েন ল্যান্ড নামেও পরিচিত।
এখানে একটি ত্রিপল জংশন আছে যা তিনটি টেকটনিক প্লেটস নামে পরিচিত। ডিপ্রেশন সীমানা অতিক্রম করলেই ইরিত্রিয়া, দিবোউতি এবং সবশেষে ইথিওপিয়ার আফার এলাকা। এটি পশ্চিম আফ্রিকার বৃহত্তম একটি ফাটল, যা উপত্যকারই অংশ। ফাটল উপত্যকাটি টেকটোনিক প্লেটসকে দূরে সরিয়ে সেখানে নতুন ভূ-ত্বক তৈরি করেছে। যার ফলে এখানে প্রতিবছর এক থেকে দুই সে.মি গভীরতার তিনটি ফাটল দেখা দেয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, লক্ষ লক্ষ বছর পরে এই প্লেটসগুলো দূরে সরে যাবে এবং লবণাক্ত পানির সৃষ্টি হবে যা লোহিত সাগরে ছড়িয়ে পড়বে। এই স্থানে একটি নতুন মহাসাগরের সৃষ্টি হবে যা সত্যি বিস্ময়কর হবে। ডানাকিল ডিপ্রেশন হবে নতুন মহাসাগরের জন্মস্থান।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট