বইয়ের নাম : আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি।
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ।
প্রকাশক : মাজাহারুল ইসলাম।
প্রকাশনী : অন্যপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ।
প্রথম প্রকাশ : জুলাই,২০০৩।
ফখরুদ্দিন সাহেব নামক ব্যক্তিটি রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ছাদে শুয়ে থাকেন। একদিন বৃষ্টির সময় তার স্ত্রী রুপার ঘুম ভেঙ্গে গেলে সছাদে গিয়ে আবিষ্কার করে ফখরুদ্দিন বৃষ্টির মধ্যেই শুয়ে আছে। ছাদে পানি জমে গেছে, সে তার মধ্যেই শুয়ে আছে। এতেই শেষ নয়। ফখরুদ্দিন একবার এক্সপেরিমেন্টের জন্য দশ।ব্যাগ রক্ত নিয়ে আসে। সে রক্ত সে পেয়ারা গাছের গুঁড়িতে দিয়ে দেখতে চাচ্ছে ফলাফল কি হয়।
ভাবছেন হয়তো এসব কেন লেখছি। নাম শুনে বোঝা যাচ্ছে এটি একটি রোমান্টিক উপন্যাস। যদি তেমনটি ভেবে থাকেন তবে মশাই একটু নড়েচড়ে বসুন।
“আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি” কেন্দ্রীভূত হয়েছে ফখরুদ্দিন চৌধুরী নামকএক ব্যক্তির উপরে। এটি একটি সাইকো থ্রিলার। গল্পের প্রধান চরিত্র ফখরুদ্দিন চৌধুরী। বইটি উত্তমপুরুষে লেখা। ফখরুদ্দিনের নিজের জবানিতে কাহিনী বর্ণনা করা।পড়ার সময় মনে হয় সে আপনাকেই গল্পটা বলছে।
ফখরুদ্দিন সাহেব তার দূরসম্পর্কের মামার সাথে কনে দেখতে যায়। কনে পছন্দ হওয়াতে সেরাতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। ফখরুদ্দিনের মামা ইফতেখার সাহেব একজন সরকারী কাজি । বিয়ের পরদিন তার স্ত্রী তার সাথে থাকতে রাজি হন না। অতপর ফখরুদ্দিন বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এর বেশ কিছুদিন পর তার সাবেক স্ত্রীর ছোট বোনের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে তার বিয়ে হয়।তার স্ত্রী রুপা বিয়ের কদিনের মাথায় মনে করে তার স্বামী মানসিক রুগী। সে ভুলিয়ে ভালিয়ে তাকে একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছেও নিয়ে যায়। অবশ্য রুপার ওকে মানসিকভাবে অসুস্থ ভাবার অনেক কারন আছে। তার পাগলামোর কিছু নমুনা শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে।
তার স্ত্রী রূপাকে সে ডাকে দস্তা কন্যা নামে। আবার ফখরুদ্দিন তার মন গড়া আরেক নারীর উপস্থিতি অনুভব করেন যাকে সে ডাকে কাঁসা কন্যা নামে। শেষ অবধি সে কার সাথে থাকে। এর মাঝে ফখরুদ্দি ঠান্ডা মাথায় দুটো খুন করে। কাদের সে খুন করলো? কিভাবে করলো? এই প্রশ্নের উত্তর না হয় আপনারা বইটি পড়ে নিজেরাই খুঁজে নেবেন।
জাদুকর হুমায়ুনের জাদুকরি লেখার আরেকটি বলিষ্ঠ নমুনা আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি। নেই কোন বীভৎস সব খুনের বর্ণনা নেই বরং আছে একজন মানুষের মনের জটিল দিকগুলো। ‘ আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি” পাঠককে ভাবাবে “আচ্ছা চরিত্রটা ঠিক কী করতে চলেছে “। বইটা চৌম্বকের মতো এর আকর্ষনে পাঠক মনকে সহজেই জড়িয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে। এটা পড়ার পর সত্যিই মনে হবে, লেখক হুমায়ুন কি করে শুধু কিছু শব্দের মাধ্যমে তিনি পাঠক মনকে কত সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সক্ষম ছিলেন, যেটা অনেকেই পারেন না। দারুণ টাইপের কোন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পড়তে চাইলে এর বিকল্প হতে পারে না।