তবু যেতে দিতে হয়;
তবু চলে যায়।
হুম, দেখতে দেখতে আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে গেল। পুরাতন ক্যালেন্ডার এর বদলে এখন নতুন ক্যালেন্ডার শোভা পাবে সবার ঘরে ঘরে । আরও অনেক কিছুই হয়ত বদলে গেছে বা যাবে এই নতুন বছরে। কিন্তু প্রতি বছর শেষে আমাদের সবার মনেই হয়ত একটা পাওয়া না পাওয়ার হিসাব চলে । কি অর্জন করলাম আর কিই বা হারালাম !
আমরা যা হারিয়েছি তা তো আর কখনও ফিরে পাব না। আবার হারান জিনিসগুলোকে মনে রাখলে তা কস্ট বাড়ান বৈ কোন ইতিবাচক উপকারে আসে না । তাই আজ নতুন বছরের শুরুতে বাংলাহাবের বিশেষ আয়োজন। ইতিবাচক অর্জন নিয়ে ।
বাংলাহাবের এক ঝাঁক লেখক লিখেছেন তাদের এই বছরের সেরা অর্জনগুলো নিয়ে। তাহলে কি এই লেখকদের জীবনে নেতিবাচক বা না পাওয়া কিছুই নেই এই ২০১৭ তে? আছে অবশ্যই।
কিন্তু নতুন বছর যেহেতু নতুন শুভ বার্তা নিয়ে আসে তাই বাংলাহবের লেখকরা তাদের ইতিবাচক সেরা অর্জনগুলো দিয়েই নতুন বছর ২০১৮ কে বরণ করে নিচ্ছে । লেখকদের কাজ মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগানো । তাই বাংলাহাবের লেখকেরা তাদের ভাল কাজ, ভাল অর্জনগুলো পাঠকদের সাথে ভাগাভাগি করে তাদেরকেও ভাল কাজে যুক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে । নতুন বছর সবার ভাল কাটুক। দেশ ও মানুষের উপকার করে কাটুক। আর অন্তত একটা মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্যে দিয়ে কাটুক ।
আবু হাসনাত রুহুঃ সি ই ও বাংলাহাব
২০১৭ সালটা আমার কর্ম জীবনের জন্য অন্যতম সাল। এই সেই সাল যে সালে আমি আমার বর্তমান অফিসে পদোন্নতি পেয়েছি। তাও আবার একটা না দুই দুইটা। মানে হল, স্যার বলেছিল হাসনাত বেছে নাও কোন পদটি তুমি চাও। আর সেই কথাটা আমার কলিগদের বলার পর শুরু হয়ে গেল আমাকে নিয়ে ট্রল। যাইহোক, অফিস টাইমটা খুব মজাই কাটে আামার। সে হিসেবে আমার ২০১৭ সাল ভালই কেটেছে ।
কিছুটা দুঃখ আছে এই সালে। আমার বাবা মা অনেক ট্রাই করেছে আমার বিয়ে দিতে। বিয়ে করা নিয়ে আমি আর আমার আম্মুর এক দারুণ অভিযান আছে। যদিও সেই লেভেলের অভিযান দেয়ার পরও আমার বিয়ে হয় নাই। অন্যকোন সময় বলব সেই ঘটনা। এখন বলতে লজ্জা লাগছে।
এবার আসি বাংলাহাব নিয়ে। আমাদের প্রিয় সাইট বাংলাহাবকে নিয়ে ২০১৭ সালে আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভাল । কারন, এবছর আমরা গুগলকে এডভারটাইজমেন্ট পার্টনার হিসেবে পেয়েছি। যেটা আমাদের আর্থিকভাবে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে।
পাওয়া না পাওয়ার অনেক ঘটনা আছে। তাই বলে লাইফ কখনই থেমে থাকবে না। নতুন বছরে সবাইকে নতুন ভাবে শুরু করতে হবে, নতুন উদ্যমে। সবাইকে ২০১৮ সালের শুভেচ্ছা। বাংলাহাবের সাথে থাকবেন। বাংলাহাব – এবার পুরো পৃথিবী বাংলায় ।
জুলকারনাইন মেহেদী, এডিটর-ইন-চিফ, বাংলাহাব
২০১৭ তে ইতিবাচক ঘটনা আমার জন্য বাংলাহাব। এ বছর আমাদের এই সাইটের লেখক ও পাঠক সংখ্যা বেড়েছে দ্রুত গতিতে। অনেক লেখককে আমরা নিজেদের লেখা সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ করে দিতে পেরেছি। এটাকে আমি নিজের ও টিমের একটা অর্জন বলে মনে করি। ২০১৮ তেও এ ধারা অব্যহত থাকবে বলে আমি আশা করি।
মাহফুজুর রহমানঃ
মানুষের তীব্র আনন্দ অথবা প্রবল বেদনার সাক্ষী হওয়া আমার জন্য নতুন কিছু নয়। তবু এবছরটা আর দশটা বছরের চেয়ে আলাদা আমার কাছে, সেই সাথে আলাদা বিশেষ একটি ঘটনাও। এবার যে আমি মুদ্রার দুটো পিঠই একসাথে দেখে ফেললাম!
স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রমে জড়িত থাকার কারনে রাত বিরেতে ফোন আসার ব্যাপারটা স্বাভাবিকের কাতারে চলে গেছে অনেক আগেই, তাই সেদিন রাতেও দুটোর সময় ফোন পেয়ে বিশেষ বিচলিত হইনি। সময়টা পরিষ্কার মনেই নেই, এবছরের শুরুর দিকে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফোন এলো, প্রসূতি মায়ের রক্ত চাই। রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ।
সবচেয়ে সহজলভ্য রক্তের গ্রুপ, তাই বিশেষ বেগ পেতে হলো না খুঁজে বের করতে। আমার সাথে বসে থাকা বন্ধু অনেক আগেই কার রক্ত লাগবে, কোথায় লাগবে ইত্যাদি প্রশ্ন করা বাদ দিয়েছে। একবাক্যে রওনা হয়ে গেল আমার সাথে। বাহন নিয়েও কোন ঝামেলা হলনা। হল থেকে নিচে নেমেই দেখলাম এক বন্ধু বাইক নিয়ে ক্যাম্পাস চক্কর দেয়ায় ব্যাস্ত। তাকে পাকড়াও করে নিয়ে বিশ মিনিটেই হাজির হয়ে গেলাম হাসপাতালে।
গিয়ে দেখি রোগীর আত্মীয় স্বজনের কোন খবর নেই। কোন এক প্রতিবেশী তার দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন সন্তানসম্ভবা ওই মহিলার জন্য। না জানলে কখনো বিশ্বাস করতাম না এই পরিবারটি ওই মহিলার রক্তের সম্পর্কের কেউ হয়না। মহিলার স্বামী চট্টগ্রামে কিছু একটা কাজ করে, অথবা করে না। সে এখানে নেই এবং সাধারনত থাকে না। যতদুর বোঝা গেল খুব একটা খবরও নেয় না স্ত্রীর। অগত্যা, তার যাবতীয় দায়িত্ব মাথায় তুলে নিতে হয়েছে এই মহৎ পরিবারটিকে।
রোগীকে দেখে আমরা থমকে গেলাম। শীর্ণকায় ভদ্রমহিলা প্রচুর রক্ত হারিয়ে সাদা কাগজের মত রঙ পেয়েছেন, ক্ষণে ক্ষণে খিঁচুনি দিচ্ছে তার শরীর। এখনো রক্ত হারানো বন্ধ হয়নি তার- শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে দ্রুত গতিতে ভরে উঠছে একটা ব্যাগ।
সার্জারি করতে গিয়ে তার শরীরের ভিতরে কিছু একটা কেটে ফেলেছেন ডাক্তার, তাই বন্ধ হচ্ছে না রক্তপাত। এক ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে আত্মতৃপ্তি লাভ এখানে বাতুলতা মাত্র।
বন্ধুটি রক্ত দিল, আমি আর বাইকার বন্ধুটি ব্যাস্ত হয়ে উঠলাম ফোনে। কিছুক্ষনের মধ্যে বাইক নিয়ে বন্ধু বেরিয়ে পড়ল আরেকজনকে নিয়ে আসতে। প্রথম বন্ধু রক্ত দেয়া শেষ করতে করতে হাজির হয়ে গেল দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডোনার। দ্বিতীয় ডোনার বাইকার বন্ধুটি নিজেই।
সেদিন রাতে সর্বমোট নয় ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছিল ওই সম্ভাব্য মাকে। বুকের গভীরে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে একটি সেকেন্ডের জন্যও তার শরীরে রক্ত দেয়া বন্ধ না করে আক্ষরিক অর্থেই তার ‘লাইফলাইন’ হয়েছিল কিছু তরুন, যাদেরকে হয়তো সাদাচোখে সবাই স্রেফ বাউন্ডুলে আর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো লোক হিসেবেই জানে।
ভোরের আলো ফুটবে, এমন সময় যখন ডাক্তার জানালেন ভদ্রমহিলা একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং বাচ্চা ও মা দুজনেই আপাতত বিপদমুক্ত, তখন রাতজাগা তরুণ মুখগুলোতে যে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা দেখা দিল, তা নিখাদ আত্মতৃপ্তির। এমন নির্ভেজাল হাসি এই ছন্নছাড়া জীবন শেষ করে যখন প্রথম চাকরীর খবর পাবে তখনও ওদের মুখে ফুটবে কিনা সন্দেহ আছে!
তবে ওদের সবার মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়ে এল ওই ভদ্রলোকের প্রতি, তিনি যখন টলটলে চোখে ওদের হাত চেপে ধরে ধন্যবাদ জানালেন। স্রেফ মানবতার খাতিরে অনেকেই হয়তো বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে, কিন্তু এমন ব্যাকুলতার সাথে দূরের কারো জন্য এগিয়ে আসাটা অবাক করা ব্যাপারই বটে।
একরাশ আত্মতৃপ্তি আর বাউন্ডুলে হয়েই বেঁচে থাকার দৃপ্ত প্রত্যয় নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ঘরবাড়ি হয়ে থাকা ক্যাম্পাসে ফিরে এলাম আমরা কজন।
অন্য কারো মুখে হাসি ফুটুক আর না ফুটুক, আমাদের হাসি কান ছোঁয় মাঝে মাঝে এমন দুয়েকটা রাতজাগা ভোরে।
বন্ধুকে যখন বললাম, ‘দোস্ত, সামনের বছর আর এমন করা হবেনা। ছাত্রজীবন যে কদিন পরেই শেষ’- তখন আমার গলা একটু ধরে গেছিল কিনা আমি নিশ্চিত নই!
রবিউল হোসাইনঃ
এই ২০১৭ সালে আমরা ৩০ জন বন্ধু মিলে “সার্পোট” নামে একটা সংগঠন তৈরী করে ঝড়ে পড়া ৩৮ জন শিশুকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি| এবং ১৮ জন শিশুর সারা বছরের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে গেছি | ওই সব শিশুদের হাসি মুখগুলোই এই বছরের আমার সেরা পাওয়া|
শারমীন আক্তার সেতুঃ
মানব সেবায় নিয়োজিত মানুষগুলোর জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে কস্টে জর্জরিত অথবা যন্ত্রনায় কাতর মানুষগুলোর মুখে স্বস্তির হাসি । ছোটবেলা থেকে মনের কোণে একটা সুপ্ত বাসনা ছিল বড় হয়ে মানুষের জন্য কিছু করব । বড় হয়ে সেই ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করার জন্য হলাম মনোবিজ্ঞানী। মনোবিজ্ঞানী হওয়ার সুবাদে সারা বছরই কোন না কোন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। সেই জন্য মহান আল্লাহ্র দরবারে হাজার হাজার শোকরানা যে তিনি আমাকে এই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর সুযোগ দান করেছেন ।
যাইহোক, সারা বছরের কথা বাদ দিলাম। কারন বছরের এই শেষ সময়ে এসে এমন একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, এমন একজন মানুষের উপকার করতে পেরেছি যে তা সারা বছরের আর সব আনন্দকে ছাড়িয়ে গেছে।
একজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যে কিনা তার কলেজের প্রতিকূল পরিবেশের কারনে হতাশায় ভুগছিল। এর আগে একবার উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট খারাপ করার পর এবং কলেজের প্রতিকূল পরিবেশ ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের কটু কথার ভয়ে সে আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করতে চাইছিল না এবার । প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্থ আর নিরুপায় হয়ে আমার কাছে আসে কাউন্সেলিংয়ের জন্য । কাউন্সেলিং নেয়ার কিছুদিন পর সে আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানায় । কারন জানতে চাইলে বলে কাউন্সেলিং নেয়ার পর সে আবারও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য দৃড় প্রতিজ্ঞ হতে পেরেছে এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ফর্ম ও ফিল আপ করেছে এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের কটু কথাও তাকে দমাতে পারেনি। সব কিছুকে পেছনে ফেলে সে সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরনা পেয়েছে ।
যে মেয়েটি সবসময় এই বিষয়টি নিয়ে বিষণ্ণ আর হতাশাগ্রস্থ থাকত তার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখেছি । আত্মবিশ্বাসের হাসি দেখেছি । অনুভব করেছি সমস্ত বাঁধাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় । কানে তার কথাগুলো এখনও লেগে আছে ,
“ ধন্যবাদ আপু, আমি ফর্ম ফিল আপ করেছি । কাউন্সেলিং না নিলে হয়ত আমি পরীক্ষাটাই দিতাম না । অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এটা বুঝতে সহায়তা করার জন্য যে জীবনে কোনটা ঠিক” ।
এটাই এই বিদায়ী বছরে আমার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন । এই পিচ্চি হতাশাগ্রস্থ বিষণ্ণ মেয়েটার চোখ মুখের আনন্দ আর আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক । এটাই এই বছরের সবচেয়ে বড় পাওয়া, অন্তত একটা মানুষকে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ন একটা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পেরেছি । অন্তত একটা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক আশার আলো জ্বালাতে পেরেছি ।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সবার নতুন বছর ভাল কাটুক। আর আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন এভাবেই সবসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্থ মানুষগুলোর পাশে থেকে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, তাদের জীবনে কণ্টকময় পথে চলার সময় তাদের পথটাকে ফুলের মত কোমল করে দিতে পারি ।
ফাতেমা তানিয়া:
আমাদের বাসার অদূরে ছোট্ট একটি ভাসমান চায়ের দোকান আছে। আমি আর আমার hubby বের হলেই এই ছোট্ট চায়ের দোকানে চা পান করি । খুব যে স্পেশাল চা তা নয় কিন্তু লোকটির আচার ব্যবহারে অন্যরকম মিষ্টতা আছে তাই যেখানেই যাই না কেন ফেরার পথে উনার দোকান থেকে চা খেয়ে বাসায় ঢুকি। পরনের কাপড়ই বলে দেয় কতটা গরীব কিন্তু বেশ হাসিখুশি আর ধার্মিক। প্রায়ই দোকানের পেছনে টুলে দাঁড়িয়েই নামাজ পড়ে দোকান রেখে মসজিদে হয়ত সবসময় যাওয়া সম্ভব হয়না। আবার মাঝে মাঝে ছয় সাত বছরের একটি মেয়ে খুব সুন্দর করে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে চা বিক্রি করে। জিজ্ঞাস করলে বলে, আব্বা নামাজে গেছে আইয়া পড়ব!
একদিন শপিং করে বাসায় ফেরার পথে উনার দোকানে চা খেতে খেতে দেখলাম দুটি ছোট্ট শিশু এবং একজনের কোলে আরেকটি শিশু। লোকটি ওদের থেকে নিজের কোলে শিশুটিকে নিয়ে চা বানাচ্ছে আর শিশু দুটি লোকটির গা ঘেঁষে চা, মুড়ি খাচ্ছে। তাদের পাঁয়ে ছেড়া স্যান্ডেল, তালি মারা হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি, আর কোলের শিশুটির গায়ে কিছুই নেই। তবু খুব খুশি তারা। আমাদের চা খাওয়া শেষ তবু ওদের নিষ্পাপ ভালবাসা দেখছিলাম। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব অভাবী কিছুই নেই তবু কত সন্তষ্ট তারা তাদের অভাবী না পাওয়ার জগতে । অন্য একদিন আমরা উনার দোকানে চা পান করতে করতে জিজ্ঞাস করলাম, আপনার সংসারে কে কে আছে, কয় ছেলে মেয়ে আর কি করে চলে সংসার???
রোজের ন্যয় একটি হাসি দিয়ে বলে,
: চার ছেলে মেয়ে, আমি, আমার বউ আর অসুস্থ মা। কোনরকম দুই বেলা খাইয়া ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ্। থাকি বস্তিতে। এই চা বিস্কুট, মুড়ি বিক্রি কইরাই চলে সংসার।
: গ্রামের বাড়ি কই, আপনি গ্রামে চাষবাস করে এর থেকে তো ভালোই থাকতে পারেন এত কষ্ট করে কেন থাকেন এখানে?
: ঘর বাড়ি সবই ছিল কিন্তু বাপ মরার পরে চাচা আর চাচাতো ভাইরা গ্রামের চেয়ারম্যান মিলে টাকার জোরে হাত কইরা সব দখল কইরা নিছে। তারপরে এইখানে এমনে চলতাছি..ভালই আছি..।
বললাম, পরশু তো ঈদ। ঈদের বাজার করছেন আর বাচ্চাদের জন্য জামা কিনবেন না?
আবারো হেসে বলল, গরীবের ঈদ নাই গো আফা! এমনে দুই বেলা খাইয়া চায়ের দোকান নিয়া বসমু! আর পুরান জামা ধুইয়া পড়ব সবাই আর একটু সেমাই কিনমু.. এইত।
আমার খুব খারাপ লাগছিল… ব্যাগে মাত্র পাঁচশ টাকা ছিল আর আমার hubby এর কাছে ছিল একহাজার টাকা। লোকটির হাতে জোর করে ভরে দিল টাকাগুলো। ভরে বললাম, ভাই ঈদের দিনে বউ বাচ্চা আর অসুস্থ মাকে নিয়ে একটু ভালো মন্দ বাজার করে খাবেন।
লোকটি নিতে চাচ্ছিল না । বললাম দোয়া করবেন, আমরাও অন্যরকম এক জীবন যুদ্ধ করছি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
অবশেষে ছলছল চোখে টাকাগুলো নিল।
নীলা মনি গোস্বামীঃ
পার্কে আড্ডা দিতে গেলেই ভয় হয় ভীষন। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে দেখলে ভয়ে আতঙ্কে একেবারে সিঁটকে যাই আমি। ওদের মুখের ভাষা জঘন্য। আর ভয়ঙ্কর ওদের কাজ কর্ম।টাকার জন্য পা কামড়ে বসে থাকে ওরা। কখনওবা খাবারের মধ্যে ছুঁড়ে দেয় বালি, থুথু কিংবা নাকের ময়লা। তাই এদের দেখলেই কেমন যেনো গা শিউড়ে উঠতো আমার।
সেদিনও ভয়ে ভয়ে বসে ছিলাম পার্কের ভেতর।আড্ডা দিচ্ছিলাম বন্ধুদের সাথে।মাঝে মাঝে সেলফিও তুলছিলাম।হঠাৎ কোথা থেকে যেনো দৌড়ে এলো ছোট্ট একটি বাচ্চা। পরনে ময়লা ছেঁড়া জামা, মুখ ভর্তি একগাদা লালচে বিচি। হাম হয়েছে বোধহয়।নাক দিয়ে সর্দিও পড়ছে।
হলদে দাঁতগুলো বের করে হেসে উঠলো সে। তারপর কাচুমাচু মুখে বললো, ” আফা। ও আফা। “
” কি? টাকা চাই? এই নাও। ” হাতে ধরা দু’টাকার নোটটা এগিয়ে দিতে দিতে শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকালাম ছেলেটার দিকে।
” না। ট্যাকা না। সেলফি তুলুম।”
চমকে তাকালাম ছেলেটার দিকে। সাত আট বয়সী ছোট্ট সেই বাচ্চাটাকে দেখে কেমন যেনো কষ্টে কুঁকড়ে উঠলো বুকের ভেতরটা। একরাশ মমতা নিয়ে কাছে টেনে নিলাম তাকে।
তারপর তাকে নিয়ে তুলে ফেললাম কতগুলো সেলফি। সেলফি তুলে আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো বাচ্চাটি। পাশ থেকে টেনে নিয়ে এলো তার ছোট্ট বোনটিকে। তারপর দু”জন মিলে কত কি অঙ্গভঙ্গি আর ভেঙচি!!!
ওদের ছবি তোলার ভঙ্গি দেখে হেসে কুটি কুটি হয়ে গিয়েছিলাম আমি সেদিন। আর মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ভীষনভাবে। বাচ্চা দু’টোর সে সরল হাসি মনে থাকবে আমার আজীবন।
তানহা তারাননুম ঈমিতা
২০১৭ ছিল চিত্রাভ আলোকচ্ছটার ন্যায় একটি বছর, নানা রুপ, নানা রঙ্গ এ ভরা। এ বছর আপনজন হারানোর বেদনার পাশাপাশি ছিল ব্যক্তিগত অর্জনের স্মৃতিচিহ্ন। বাংলাহাব টিমে যুক্ত হতে পারা ২০১৭ এর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবেঁ বছরের শেষের দিকে এসে অনেকগুলো খুশির সংবাদ একসাথে পেয়েছি। ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বইমেলায় তিনটি নতুন বই আগমনের সুসংবাদ। আশা করছি সকলের নতুন বছর এতটাই আনন্দঘন হোক। শুভকামনা।
চন্দ্রপ্রভার রাত্রি
একদিন আমি ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম। শহরে নেমে মেলায় যাবো। চট্টগ্রামে বছরের শেষে নানা মেলা লেগেই থাকে। আমি বাস থেকে নেমে মেলাতে প্রবেশ করবো। দেখলাম, এক আপুর ব্যাগ রিকশা থেকে পড়ে গেছে। রাস্তায় অনেক গাড়ি ছিল। কেউই তাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছিলেন না। এমনকি তার পাশেই বসা তার স্বামীও নন। আমি এগিয়ে গেলাম ও তাকে সহযোগিতা করলাম। উনি আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। ঘটনাটা আমাকে সব সময় আরো ভালো কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে।
বাংলাহাবের সকল পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি রইল ইংরেজি নববর্ষ- ২০১৮ এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা।