আচ্ছা আপনার সাথে যদি এমন হয় যে, আপনি একটা বই পড়ছেন আর সেই প্রভাব টা পড়ছে আপনার বাস্তব জীবনে? সেটা যদি সাধারণ কিছু না হয়ে, হয় কোন এক অতিপ্রাকৃত কিছু?
অদ্ভুত না? হ্যাঁ এই অদ্ভুত অনুভুতি আর গল্পের মাঝে হারিয়ে যাবেন লেখক মারুফ রেহমানের “লাবণী” বইটি পড়ে।
উপন্যাসের গুরুত্বপুর্ণ চরিত্র তামিমের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা ও এর পরিনতি পাবেন এই উপন্যাসে।
তামিম একজন খুব সাধারণ ছেলে ছিলেন। যার পড়াশুনা শেষ, তাই একটা চাকরি দরকার। ভাগ্যক্রমে পেয়েও গেল একটা সিএনজি স্টেশনে ক্যাশিয়ারের চাকরি।
সব ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল। মোটামুটি বন্ধুবান্ধবহীন এই ছেলের জীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী হচ্ছে বই। আর এই বই কে ঘিরেই ঘটেগেল অদ্ভুত কিছু ঘটনা। পুরনো কিছু বই কিনতে গিয়ে ফ্রিতে পেয়ে গেলেন দু’টো ছেড়া ফাঁটা বই।
ছেড়া ফাঁটা বই দু’টোর একটা বই পড়া শুরু করলেন তামিম। এক মাওলানা কে ঘিরেই এই বই এর শুরু। নানা ঘটনার মধ্যে অন্যতম হল জ্বীনের দেখা পেয়ে যান সেই মাওলানা আর তারপর হারিয়ে ফেলেন জ্ঞান। এরপর কি হল? তামিম ব্যস্ত হয়ে পড়লেন জানার জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এখান থেকেই বইটা ছেড়া। তামিমের এই বইটি আর শেষ করা হয়ে ওঠে না।
দ্বিতীয় বই টাও ছেঁড়া। তামিম বইটি শুরু করলেন। মুল চরিত্রের নাম লাবণী। খুব সাধারণ কিন্তু অদ্ভুত সেই মেয়ে। তামিম গল্পের সাথে সাথে যেন লাবণীর প্রেমে পড়তে শুরু করলেন।
সেই গল্পে অপুরুপ অদ্ভুত এই মেয়েটির প্রেমিকের নাম জুয়েল। ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে তাদের। কিন্তু কিছু ঘটনার জন্য তাদের সম্পর্কের সমাপ্তি হয়। কাল্পনিক চরিত্র লাবণীর প্রতি তামিমের ভালবাসা আরও বেড়ে যায়। তামিম লাবনীকে উপলব্দি করা শুরু করে। কখনো তার পায়ের শব্দ শুনতে পায়, কখনোবা কিনতে যায় কাল্পনিক সেই লাবনীর জন্য ফুল।
হঠাৎ করেই বইটা হারিয়ে ফেলে তামিম। আর তারপর থেকেই একধরনের অস্থিরতা ঘিরে ধরে তাকে । কি আছে বইয়ের শেষে? কি হবে লাবনীর?
নানা প্রশ্নগুলো হন্ন হয়ে খুঁচ্ছিল সে। কেমন একটা অদ্ভুত ঘোরের মাঝে যেন সে আছে। পারছে বের হতে,অবশ্যই নিজেও চাইছেনা তার এই ঘোরটা কাটুক। এরপর নিজের বোন- দুলাভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার সাথে লাবণীর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার অদ্ভুত মিল খুজে পায় সে।
একটা অস্থিরতার মধ্যে যাওয়া শুরু করে তার দিনগুলো। বোনের চাপে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় শ্যামা নামক এক মেয়ের সাথে। তবে তার অশান্ত মনে তখন শুধু একটিই নাম লাবণী। শ্যামার মাঝে লাবণীকে খোঁজার চেষ্টা করে তামিম। আর এর ফলে একটু একটু করে নতুন সংসারে বাসা বাঁধে অবিশ্বাস নামক রোগটি।
তবুও শ্যামা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে তামিমের ভালবাসা পাবার। কিন্তু তামিমের মনে কাল্পনিক এক ভয় ঢুকে গেছে, শ্যামাও যদি লাবণীর মত কিছু করে!
কি সেই কিছু? কি সেই অদ্ভুত ঘটনা? কি অতিপ্রাকৃত ঘটনা গুলো ঘটছে তার জীবনে? এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে অতিপ্রাকৃত উপন্যাস “লাবনী” তে।
শিল্পী জাহিদুল হক অপু অসাধারণ প্রচ্ছদ করেছেন। চারিদিকে কালোর মাঝে একটা মেয়ের মুখ আর লাল রং এ লেখা লাবনী। যেন এক ভৌতিকতার পরিবেশ। সেখানে কেউ নেই রয়েছে শুধু লাবনী। সব মিলিয়ে এই অতিপ্রাকৃত উপন্যাস কে প্রচ্ছদ টি আরো পরিপুর্ণতা দিয়েছে।
“লাবনী” উপন্যাসে লেখক মারুফ রেহমান ভালোবাসা ও ভৌতিকতা কে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কিছু কথা ছিল একেবারেই অসাধারণ। একেবারে চমৎকার কিছু লাইন। যেগুলো পাঠকের হৃদয় জুড়ে থাকবে অনেকদিন। আর এখানেই বোধহয় লেখকের সার্থকতা। তেমন একটা আমার পছন্দের লাইন হলো-
“দেহ বাঁচাতে ওষুধ লাগে। আত্মা বাঁচাতে লাগে ফুল।” ।
বই এর নামঃ লাবণী
বই এর ধরনঃ অতিপ্রাকৃত উপন্যাস
লেখকঃ মারুফ রেহমান
প্রচ্ছদঃ জাহিদুল হক অপু
প্রকাশনীঃ বর্ষাদুপুর প্রকাশনী
কভার মুল্যঃ ২০০ টাকা।
রিভিউ লেখকঃ আরেফিন শিমন