প্লিজ বিসিবি, আইপিএল থেকে শিখুন!

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ(আইপিএল) এর পরেই শুরু হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ(বিপিএল)। তৎকালীন বিসিবি প্রধান আ.হ.ম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন চাপ উপেক্ষা করে চালু করেন বিপিএল। আইসিসির সভাপতি থেকে পদত্যাগ করে তিনি এক স্বাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তৎকালিন বিসিসিআই প্রধান তাকে মামলার হুমকি দিয়েছিল বিপিএল চালু না করার জন্য। তিনি তার সেই মামলার মোকাবেল আইনিভাবে প্রতিহত করবেন বলে বিপিএল চালু করেন।

প্রথম আসর জমকালো উদযাপন দিয়ে শুরু হলেও তারপর থেকেই খেই হারিয়ে ফেলে বিপিএল। ধীরে ধীরে সম্প্রচার কোয়ালিটি, দর্শক, এবং এক/দুই মাঠে আয়োজনের ফলে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে বিপিএল। যেখানে আইপিএল শুরু হলে হুমরি হয়ে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার ক্রিকেট প্রেমীরা তাকিয়ে থাকে টেলিভিশন এর দিকে, সেখানে বিপিএলে তার উল্টো। বিদেশী দূরে থাক দেশের দর্শকরাই আগ্রহ নিয়ে দেখে না।

এমনটা হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে বিপিএলের সম্প্রচার কোয়ালিটি অন্যতম। সম্প্রচার কোয়ালিটি এই যুগের সাথেতো যায়-ই- না, বরং নব্বই দশকেও এই ধরনের ঘোলা ক্যামেরা ব্যবহার করা হতো কিনা সন্দেহ! আর মাঠের দর্শক? এক মাঠেই টানা দিনের পর দিন দুইটা করে ম্যাচ হলে তো দর্শক প্রতিদিন টাকা খরচ করে আসবেনা! দর্শকেরও তো বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর তার প্রভাব টিভি দর্শকের উপরও পরে। টিভির দর্শকরা যখন দেখে মাঠেই দর্শক নেই তখন তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

বিসিবির হর্তা-কর্তারা চায় কোন রকমে তাড়াতাড়ি বিপিএল শেষ হলেই হয়। তারাতারি শেষ হলে টাকার ভাগ-বাটোয়ারাটাও যে তারা তাড়াতাড়িই পেয়ে যাবে। বিপিএলকে বিশ্বায়ন কিংবা আইপিএল,বিগব্যাস অথবা নব্য সিপিএল ও পিএসএল দের সাথেও প্রতিযোগিতায় তুলার নূন্যতম চেষ্টা বিসিবির নেই। আর ঠিক এই কারনেই নামী-দামী বর্তমান প্লেয়াররা বিপিএল খেলতে আগ্রহী হয় না।

বিশ্ব ক্রিকেট এর জানা-অজানা ১৫ ঘটনা, জানেন কি?

মাশরাফিকে নিয়ে ১৪ টি তথ্য, জানতেন কি?

বিপিএল এর বিশ্বায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হলে দেশীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান কে বাদ দিতে হবে। সম্প্রচারে সব ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে। স্পাইডার, ড্রোনক্যামসহ এলইডি স্ট্যম্প ব্যাবহার করতে হবে। উন্নতমানের জনপ্রিয় ধারাবর্ণনাকারী ও ক্রিকেট বিশ্লেষকদের সংযুক্ত করতে হবে। থার্ডক্লাশ মার্কা উপস্থাপকদের নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এক মাঠে একাধারে খেলার আয়োজন না করে ভেন্যুর বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। আর তবেই ক্রিকেট মাঠে দর্শক আনা সম্ভব হবে। সবার আগে একজন নামকরা বিপনন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। পরিচালক হলেই যে কেউ বিপনন জ্ঞানসম্পন্ন হবে এমনটা ভাবা বোকামি। তাই পরিচালকের বাইরে থেকে হাইপ্রোফাইল বিপনন ব্যাক্তিত্ব নিয়োগ দিতে হবে। প্রচারেই প্রসার এটা আগে বুঝতে হবে বিসিবিকে।

আইপিএল যেখানে প্রচারের উপর বিশ্বাসী, সেখানে বিপিএল হর্তাকর্তা তাদের জ্ঞানের কমতির জন্যই কোন ধরনের প্রচারে বিশ্বাসী না। তারা মনে করে প্রচারে যেই টাকা খরচ হবে তা না করলে তাদের ভাগে সেই টাকা আসবে। সুতরাং প্রচারের দরকার নেই। এইতো বেশ চলছে। বিশ্বায়ন এর দরকার নেই টাকা আসলেই হলো। অথচ তারা বুঝেনা এইটা খরচ না, এইটা ইনভেস্টমেন্ট। আজ তারা যদি প্রচারে টাকা খরচ করে তবে নামজাদা ক্রিকেটাররাও বিপিলে আসবে। এতে করে বিপিএল এর মার্কেট ভ্যালু বাড়বে। প্রচারস্বত্ত্ব সহ, টিকেট ও বেশি বিক্রি হবে। আর তাতে করে তাদের আশার চেয়েও বেশি টাকা তারা তাদের পকেটে নিতে পারবে। আফসোস বিপিএল এর হর্তাকর্তারা বিপনন জ্ঞানশুন্য। আর তাদের এই অজ্ঞতার ফল বহন করতে হচ্ছে পুরো দেশকে।

দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা চায়, বিসিবি আইপিএল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে বিপিএলকে বিশ্বায়ন করবে। কিন্তু তারা এটাও জানে বিসিবির পরিচালকরা মহাজ্ঞানী, তারা অন্যের থেকে শিক্ষা নিতে অনাগ্রহী। কারন তারাতো খেলাই দেখে না। হতাশার শেষ কোথায়?