হোম কোয়ারেন্টাইন সময়ে শিশুর মানসিক যত্ন

করোনাকালীন এই সঙ্কটময় সময়ে আমরা সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি । যেহেতু এই সময় বাইরে যাওয়া বারণ সুতরাং সবসময়ই ঘরের ভেতরে থাকতে হচ্ছে যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। ঘরে থাকতে থাকতে অনেকের মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। অনেককে আবার বাসায় থেকে অফিসের কাজ এবং বাসার কাজ সবকিছুই সামাল দিতে হচ্ছে। যা অনেকের মধ্যেই মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।

আরো পড়ুনঃ করোনা ভাইরাস নিয়ে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কিভাবে?

বড়দের পাশাপাশি পরিবারের শিশুদের মধ্যেও বিভিন্ন মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে কারণ তারা স্কুলে যেতে পারছে না, বাইরে খেলতে যেতে পারছে না এবং বন্ধুদের সাথে দেখা করতে পারছে না। ছোটরা যেহেতু তাদের আবেগগুলো ঠিক মত প্রকাশ করতে পারে না সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের একটু বেশিই মনযোগী হতে হবে।

তো এই হোম কোয়ারেন্টানের সময় কিভাবে শিশুদের মানসিক চাপ সামাল দিবেন সে বিষয়ে কথা বলব।

Image Source: Internet

১। শিশুকে সাথে নিয়ে দৈনন্দিন কাজের রূটিন তৈরি করুন

সাধারণত শিশুরা তখনই বিরক্ত অনুভব করে যখন সে জানে না তার কখন কি করতে হবে বা তার করনীয়ই বা কি। তাই শিশুর সামনে যখন একটি পরিস্কার এবং সুস্পস্ট নির্দেশনা থাকবে যে আজ সারাদিন তাকে কি কি কাজ করতে হবে তখন সে নিজেকে সেভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেয় এবং সেভাবেই সে সারাদিন অতিবাহিত করে। এতে বাবা মায়ের উপরেও চাপ কমে। তাই প্রথমেই শিশুকে সাথে নিয়ে প্রতিদিনকার একটি রুটিন তৈরি করুন । শিশু ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে সারাদিন কোন সময় কোন কাজটি করবে তা শিশুকেই ঠিক করতে বলুন। বিশেষত কোন সময় শিশু পড়ালেখা করতে চায় এবং কতক্ষন পড়ালেখা করতে চায় তা শিশুকেই ঠিক করতে দিন। এভাবে শিশুর খেলার সময়, ঘুমানোর সময়, বাবা মাকে সাহায্য করার সময় কোনটি হবে তা শিশুকে সাথে নিয়ে রূটিন করে ফেলুন। তাহলে শিশু সেভাবেই নিজেকে সারাদিনের জন্য প্রস্তুত করবে।

২। সামাজিক গল্পের মাধ্যমে শিশুকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করুন এবং সঠিক তথ্য দিন

৩- ৭ বছর বয়সী শিশুরা সাধারনত গল্পের মাধ্যমে শিখতে পছন্দ করে। তাই করোনা সম্পর্কে একটি গল্প তৈরি করে সেই গল্পের মাধ্যমে শিশুকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন এবং করোনা নিয়ে আপনি শিশুকে যে বার্তা দিতে চান তা দিতে পারেন। এতে শিশু করোনা নিয়ে ভয় বা উদ্বিগ্ন না হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে করোনা প্রতিরোধে তার করোনীয়গুলো করবে। এই গল্পে রুপকথার জনপ্রিয় চরিত্রগুলোকে ব্যবহার করতে পারেন।

৩। নিজের ভয় বা উদ্বেগ শিশুর মধ্যে সংক্রমিত করা থেকে বিরত থাকুন

শিশুর সামনে করোনা নিয়ে নিজের ভয় বা উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। কারন আপনি যদি শিশুর সামনে নিজেই উদ্বিগ্ন হয়ে যান বা ভয় পান তবে তা শিশুর মধ্যেও প্রবাহিত হবে। এবং শিশুও ধীরে ধীরে উদ্বিগ্ন এবং ভীত হয়ে যাবে।

৪। শিশুকে আপনার কাজের অংশ করে নিন

পরিবারের  গৃহস্থালি কাজে শিশুকে সম্পৃক্ত করুন। আপনি যে কাজটি করবেন সেটার কিছু কিছু অংশ শিশুকে করতে দিন অর্থাৎ শিশুকে বলুন আপনার কাজে সহযোগিতা করতে। সেক্ষেত্রে আপনার কাজের ছোট ছোট অংশগুলো শিশুকে করতে দিন।

৫। শিশুর ভাল কাজের প্রশংসা করুন

শিশুকে তার ভাল কাজ গুলোর জন্য ধন্যবাদ দিন এবং প্রশংসা করুন। তার নেতিবাচক আচরনগুলোর দিকে আলোকপাত করার চাইতে ইতিবাচক আচরণগুলোতে বেশী আলোকপাত করুন। আর নেতিবাচক আচরনগুলো থেকে তার কি কি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আছে তা তাকে বুঝিয়ে বলুন।

blank
Image Source: Internet

৬। বাসায় থেকেই পরিবেশে ভিন্নতা আনুন

যেহেতু বাইরে যাওয়া নিষেধ সুতরাং পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করে  শিশুকে নিয়ে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ছাদে ঘুরতে যান । এ সময় যেহেতু বাইরে যাওয়াটা নিরাপদ নয় তাই মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের সাথে ভিডিও কল বা ফোনকলে কথা বলিয়ে দিন। এতে তার বিষন্ন ভাব দূর হবে ।

blank
Source: Internet

৭। শিশুর সাথে ইতিবাচকতার চর্চা করুন

শিশু যদি জেদ করে তবে যেই জিনিস নিয়ে জেদ করছে তা যদি দিতে চান তবে প্রথমেই তাকে দিয়ে দিন। কারন জেদ করার পর দিলে শিশুর মধ্যে পুনরায় পুনরায় জেদ করার প্রবনতা তৈরি হয় এবং অভিভাভবকের সাথে মনমানিল্য সৃস্টি হবার সুযোগ তৈরি হয়।

৮। কোন একটি কাজের বা ডিভাইসের প্রতি শিশুর আসক্তি তৈরি হওয়া থেকে সতর্ক থাকুন

এই সময় শিশু কোন একটি কাজের প্রতি যেন আসক্ত হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন যেমনঃ মোবাইল, ইন্টারনেট বা টিভি এগুলোর প্রতি আসক্ত যাতে না হয়ে যায় সেজন্য শিশুর জন্য বিভন্ন ইন্টারেক্টিভ গেমের ব্যবস্থা করুন যেখানে শিশু খেলার মাধ্যমে তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে। কারন এগুলোতে যখন আসক্তি তৈরী হবে তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে তখন তার স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হবার সম্ভাবনা তৈরী হয়।

৯। শিশুর সাথে গুণগত সময় কাটান

শিশুর সাথে গুনগত সময় কাটান। শিশুর রুটিনে আপনার সাথে কাটানোর জন্য যেটুকু সময় রয়েছে সেই সময়টুকুতে মোবাইল বা ইন্টারনেট বন্ধ করে শুধু আপনার শিশুর সাথেই থাকুন। অর্থাৎ এই সময়টুকুতে পুরোটা সময় জুড়ে শিশুর সাথে খেলুন, গল্প করুন, ছবি আঁকুন বা শিশুর যা করতে ভাল লাগে এবং যা ক্ষতিকর নয় শিশুর সাথে এমন কাজ করুন।

blank
Source: Internet

১০। পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন

সর্বোপরি শিশুর পুস্টির দিকে লক্ষ্য রাখুন। মনে রাখুন, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি যথেস্ট শক্তিশালি হয় তবেই শিশু শুধু করোনা সহ অন্যান্য রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবে।

এছাড়াও পড়তে পারেন-

মায়েরা শিশুদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিন, ভয় নয়

১৪ প্রশ্ন-উত্তরে জানুন করোনা ভাইরাস নিয়ে সঠিক তথ্য, ফেসবুক গুজবকে বলুন ‘না’

এছাড়া করোনা ভাইরাস নিয়ে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে ভিজিট করুন বাংলাহাব এর প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিক সাইট “বাংলাহাব Answers” ( ask.banglahub.com.bd )