আজকের দিনে কাউকে যদি ভিডিও গেমসের কথা জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে সে হয়তো ফিফা কিংবা কম্পিউটারের হাই রেজুলেশনের কোন গেমসের নাম বলবে। কিন্তু বর্তমানে এই হাই রেজুলেশনের গেমসগুলো যে বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট তার ভিত্তি ছিল ৯০ দশকের গেমসগুলো। বর্তমানে কম্পিউটারে বসে বা মোবাইলে খেলার জন্য গেমসগুলো ছিল না।
গেমস খেলার জন্য যেতে হত দোকানে। স্কুল পালানোর পর কোন কারণে ক্রিকেট খেলা না হলে ৯০ দশকের কিশোরদের গন্তব্য ছিল গেমসের দোকান। এক টাকার কয়েনে খেলা যেত যতক্ষণ না নায়কের লাইফ শেষ হচ্ছে।
ক্যাডিল্যাকস অ্যান্ড ডাইয়ানোসরাস (মোস্তফা):
আসল নাম বললে হয়তো ক্যাপকমের তৈরি এই গেমসটিকে অনেকেই চিনতে পারবেন না। কিন্তু যদি মোস্তফা নামে ডাকা হয় তাহলে ১৯৯৩ সালে তৈরি গেমসটিকে সবাই এক নামে চিনবে। ৯০ এর দশকে শিশু-কিশোরদের কাছে এক কয়েনে মোস্তফার গেমওভারকারী পেত এভারেস্টজয়ীর মর্যাদা। গেমসটির প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয় জাপানী উপন্যাস জেনোজয়িক টেলস অবলম্বনে। যেখানে কুখ্যাত সব ডাইনোসর ব্যাবসায়ীদের বিপক্ষে লড়তে হয় গেমারকে। গেমারকে লড়তে হয় মোস্তফা, হেনা, জ্যাক বা ম্যাশ এর চরিত্রে। দুর্দান্ত সব ধাপ পার হতে ব্যাবহার করা হয় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। তিনজন গেমার একসাথে মোস্তফা খেলার সুযোগ পেত। এখনও মোস্তফা খেলা কেউ যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গেমসের দোকান পড়ে যায় তাহলে দু এক কয়েন অবশ্যই খেলে যায়।
দ্যা কিং অফ ফাইটার (নাইনটি সেভেন বা টু থাউজেন্ড টূ):
দ্যা কিং অফ ফাইটার সংক্ষেপে কেওএফ। ১৯৭৪ সালে তৈরি এসএনকে কোম্পানির গেমসটির দুটি ভার্সন বাংলাদেশে বহুল পরিচিত। একটি গেমস পরিচিত নাইনটি সেভেন নামে এবং অপরটি টু থাউজেন্ড টু নামে পরিচিত। ফাইটিং গেমস হিসবে এর ব্যাপক চাহিদা ছিল তৎকালীন গেমারদের মধ্যে। কে কার কত কয়েন খেতে পারে অর্থাৎ কে কাকে কতবার হারাতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলত গেমারদের মধ্যে। গেমসের প্লেয়ারদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল কাইয়ু, পাগলা, লাস্ট বস। প্রতিযোগিতা চলত কে কার কোন স্পেশাল পাওয়ারটা ভালো মারতে পারে। তবে বর্তমানে গেমসের নতুন ভার্সন প্লে স্টেশন ৪ এ মুক্তি দেয়ার ফলে এখন অত চাহিদা দেখা যায় না।
স্ট্রীট ফাইটার:
জনপ্রিয় গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাপকমের তৈরি স্ট্রীট ফাইটারকে ভাবা হয় কিং অফ ফাইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। গোটা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও এই গেমটি জনপ্রিয় ছিল। তাকাশি নিশিমিয়া ও হিরোশি মাতসুমুতোর তৈরি গেমটিতে মার্শাল আর্ট জানা রাইয়ুর ভুমিকায় খেলতে হত গেমারকে। ৫ টি দেশের ১০ জন খেলোয়াড়দের বিপক্ষে মার্শাল আর্টে অংশ নিতে হত গেমারকে। দুইজন একসাথে এই গেমসটি খেলা যেত। দ্বিতীয় গেমারকে কেন চরিত্রে খেলতে হত।
মেটাল স্লাগ:
কিশোরদের চেয়ে শিশুদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ছিল মেটাল স্ল্যাগ। নাজকা কর্পোরেশনের তৈরি গেমটি একসাথে দুজন খেলতে পারত। গুলি করে ট্যাংক, আর্মি, প্লেন ধ্বংস করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই ছিল গেমটির লক্ষ।
অ্যারো ফাইটার:
বহু শিশু-কিশোরদের বড় হয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পাইলট হবার সপ্ন লালন করেছে এই গেমটি। ১৯৯২ সালে গেমটি তৈরি করে ভিডিও সিস্টেম নামের একটি কোম্পানি। কন্ট্রোলে বসে জঙ্গিবিমানের পাইলট হবার স্বাদ নিতে বহু শিশু কিশোরের পছন্দের তালিকায় ছিল গেমটি।
বর্তমানে অনেক রেজুলেশনের গেমগুলো হয়তো আপনাকে আরও জীবন্ত ও প্রাণবন্ত খেলার অভিজ্ঞতা দেবে। কিন্তু দোকানে বন্ধু মিলে খেলার অভিজ্ঞতাটা আসলেই অন্যরকম।
লেখক- মেহেদী নোভেল। যে নোভেলের পাতায় পাতায় টুইস্ট।