আমাদের বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম সমস্যা মন খারাপ। কারনে অকারনে প্রায় সময়ই হটাৎ করেই মন খারাপ হয়ে যায়। আর মন খারাপের বিরূপ প্রভাবটা সকল কাজের উপরই পড়ে। ফলস্বরূপ সকল কাজেই ঘটে বিঘ্ন। তাই চলুন মনটা ভালো করার, ভালো রাখার চেষ্টা করি।
বন্ধুদের খোঁজখবর নিন : মন খারাপের একটি অন্যতম কারণ হলো কোনো কাজ খুঁজে না পাওয়া, অর্থাৎ অলস সময় পার করা। অলস সময় পার করলে একঘেয়েমিতা দেখা দেয়। যা মন খারাপে রূপ নেয়। তাই এই একঘেঁয়েমিতা কাটাতে বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত জনের খোঁজ খবর নিন। এখন যেহেতু সকলের হাতেই আছে মোবাইল, তাই ফোন করে, মেসেজ করে অথবা ভিডিও কল করে পরিচিত মানুষজনের খবর নিন, তাদের সাথে একটু গল্পগুজব করুন। এতে একদিকে আপনার যেমন মন ভালো হবে তেমনি যার খোঁজ খবর নিচ্ছেন সেও আপনার প্রতি খুশি এবং আরো আন্তরিক হবে।
প্রার্থনা করুন : মন ভালো করার জন্য প্রার্থনা খুবই কার্যকরী। সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ করলে মন নরম হয় এবং কৃতজ্ঞতার সঞ্চার হয়। প্রার্থনার উদ্দেশ্যে নিজেকে পাক-পবিত্র করা আপনার মনের উপর একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাত মুখ ধোয়ার ফলে আপনার শরীর ও মনটা ফ্রেশ লাগবে। যদি মুসলিম হোন, যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করেন তবে আপনার আশেপাশের অনেকের সাথে আপনার দেখা সাক্ষাৎ হবে, তাদের খোঁজখবর ও নেয়া হবে। তাই চেষ্টা করুন নিয়মিত মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার। অন্য ধর্মের হয়ে থাকলে নিজ নিজ ধর্মীয় ইবাদত করুন।
ঘুরতে বের হন : অনেকেই এখন সারাক্ষন বাড়ি বা রুমে বসেই কাটায়। এতে একঘেয়ে হয়ে ওঠে অবচেতন মন। তাই মন খারাপ থাকলে বাড়ি / রুম থেকে বের হন। বাইরে কোথাও যেতে ভালো না লাগলে ছাদে চলে যান। খোলা বাতাস, উন্মুক্ত আকাশ উপভোগ করুন। চারপাশ ভালো করে দেখুন, মন ভালো হবে। ছাদে না গিয়ে হাটতেও বের হতে পারেন। হাটাহাটি করলে অনেকের সাথে পথে দেখা হয়, পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হলে সালাম দিন, কুশল বিনিময় করুন।
সাইক্লিং করুন : মন ভালো করার জন্য সাইক্লিং করতে পারেন। এতে বাইরের পরিবেশে একটু ঘোরাফেরাও হবে আবার শারীরিক ব্যায়ামও হবে বেশ। চেষ্টা করুন রোজ বিকালে সাইকেল নিয়ে বের হওয়ার। সাইকেল চালালে যে শুধু শরীর ও মন ভালো হবে তাই ই নয়, বরং আপনার মনযোগ ও বৃদ্ধি পাবে।
বই পড়ুন : মন ভালো করার জন্য এই পদ্ধতিটি খুবই কার্যকরী। আমরা সচরাচর শিক্ষা জীবনে অনেকটা বাধ্য হয়েই বই পড়ি। তবে মন ভালো করার ক্ষেত্রে স্ব-ইচ্ছায় বই পড়া খুবই কার্যকরী। বই পড়ার ক্ষেত্রে বই নির্বাচন করুন আপনার ইচ্ছা মাফিক। আপনার আগ্রহ অনুযায়ী আপনি নির্বাচন করুন যে আপনি কোন বইটি পড়বেন। হতে পারে সেটি গল্পের বা কবিতার বই। অথবা কোন আত্মজীবনী। আপনি যদি সাহিত্যপ্রেমী না হয়ে থাকেন এবং আপনি যদি ব্যার্থতার দ্বারা মানসিক কষ্টে থাকেন তবে আপনি বিভিন্ন মানুষের আত্মজীবনী পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি সফলতার অংশটুকুর চেয়ে ব্যার্থতার অংশটুকুকে বেশি গুরুত্ব দিন। তাহলে আপনার মন ভালো হওয়ার পাশাপাশি আপনি আপনার ব্যার্থতার কারন ও চেষ্টার ত্রুটি বা অসঙ্গতির দিকটি বুঝতে পারবেন কিছুটা হলেও। আর বই পড়ার আরেকটি বিশেষ উপকারের দিক হলো, আপনি নিশ্চয় সেখান থেকে কিছু না কিছু জানতে পারবেন। জীবন সম্পর্কে আপনার নতুন একটি ধারণা সৃষ্টি হবে। সে আপনি যে বই ই পড়ুন না কেন। আর আপনার জন্য এই মুহূর্তের সবচেয়ে ভালো খবর এটাই যে, আপনার মনটা ভালো হবে। তাই মন খারাপ দূর করতে বই পড়াকে একটি মাধ্যম করে তোলাই যায়।
যন্ত্রকে না বলুন : কিছু সময় মোবাইল কম্পিউটার তেকে দূরে থাকুন। আমরা প্রায় সব সময়ই কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাব বা অন্য কোনো প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে মেতে থাকি। এই প্রবণতা তেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। সারাক্ষণ মোবাইল কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকার ফলে অনেক সময়ই আমরা বাস্তব জীবনের সাথে নিজেদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে তখন বেশ কষ্ট হয়। নিজের পরিবর্তনটাকে তখন আমরা নেতিবাচক মনে করি এবং মন খারাপের উদ্রেগ হয়। তাই সব সময় প্রযুক্তি পণ্যের উপর নির্ভরশীল হওয়ার এই প্রবনতাটি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রযুক্তি পণ্য ব্যাবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে শরীর ও মন দুইই ভালো থাকবে।
ঘর গোছান : শুনতে কেমন কেমন মনে হলেও এটা সত্যি। আপনি আপনার মন ভালো করার জন্য ঘর গোছাতে পারেন। এর দুটি উপকার আছে। প্রথমত, আমাদের চারপাশ যদি সাজানো গোছানো পরিপাটি থাকে তবে স্বাভাবিক ভাবেই মনটা ভালো থাকে। একইভাবে, আশপাশের পরিবেশ যদি অগোছালো, নোংরা হয়ে থাকে তবে সেটা মনের উপর একটা বাজে প্রভাব ফেলে এবং এমনিতেই খারাপ হয়ে যায় এই বাজে পিরিবেশের জন্য। দ্বিতীয়ত, ঘর গোছানোর মাধ্যমে আপনি নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে পারবেন। আর শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে, অলসতা মন খারাপের অন্যতম একটি কারণ। তাই কাজ করে নিজেজে বাস্ত রাখুন। এতে আপনার শরীর মন দুইই ভালো থাকবে।
শখের কাজ করুন : মন ভালো রাখার জন্য আপনি আপনার শখের বা প্রিয় কাজগুলো করতে পারেন। এতে আপনার সময় দ্রুত কেটে যাবে এবং মনটাও ভালো হয়ে যাবে।
খাওয়াদাওয়া করুন : পেটে ক্ষুদা থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই মন খারাপ থাকে। এছাড়া আপনি যদি ভোজন রসিক হয়ে থাকেন বা খেতে পছন্দ করেন তবে খাওয়াদাওয়া করতে পারেন। আর মানুষের শারীরিক এবং মানসিক কারণেই মানুষের ভরা পেটে মন খুব কম সময়ই খারাপ হয়। তাই খাওয়াদাওয়া আপনার মন ভালো করার একটি মাধ্যম হতেই পারে।
গোসল করুন : অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিটা কাজ করে। মব খারাপ থাকলে গোসল করতে পারেন। এতে শরীরে সজীবতা ফিরে আসে। ফলে শরীরের পাশাপাশি মনটাও ভালো হয়ে যায়।
খেলা করুন : আপনি খেলতে পছন্দ করে থাকেন তবে এই পদ্ধতিটা আপনার জন্য দারুন কাজের। কিছু সময় খেলাধুলা করলে শরীর ও মন সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
এই ছিল কিছু মন ভালো করার টিপস। ভালো লাগলে জানাবেন এবং শেয়ার করবেন। কাজে দিলে ভবিষ্যতে আরো এমন টিপস পাবেন। যুক্ত থাকুন বাংলা হাব এর সাথে।