সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্ব মিডিয়ায় অন্যান্য যে কোন ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে মুসলিমদের দ্বারা গঠিত কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ৩৫৭% বেশি কাভারেজ পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, সন্ত্রাসী যদি মুসলিম ধর্মালম্বী হয় তবে অন্ততপক্ষে ১০৫টা সংবাদ শিরোনাম হয়। আর সন্ত্রাসী যদি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা হয় মাত্র ১৫টি সংবাদ শিরোনাম।
চোখ বন্ধ করে যদি একজন সন্ত্রাসীর ছবি আঁকতে বলি তাহলে দেখুন তো কি দেখা যায়? বেশিরভাগদের চোখেই – একজন দাঁড়িওয়ালা টুপিওয়ালা অথবা কোন বোরকা পরিহিতা মুসলিম তাইনা? হ্যাঁ যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করলেও এইটাই দেখা যায়। গবেষণার ভাষ্যমতে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে একজন মুসলিম চরমপন্থী কর্তৃক সন্ত্রাসী আক্রমণে সংবাদপত্রের তথা সমগ্র মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করে অনেক অনেক গুণ বেশি। এই গবেষণার গবেষকগণ বিভিন্ন ধরণের কারণসমূহ বিচার বিশ্লেষণের পরই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তবে বিভিন্ন ধরণের কারণ সমূহের মধ্যে লক্ষ্যসমূহের ধরণ, মৃত্যুর হার এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর পুর্বে পরিকল্পনাকারীদের পুলিশের হাতে ধরা পড়া সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী দ্বারা কর্তৃক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে শিরোনাম হয় মাত্র ১৫টি সংবাদের, এমনকি যদি তারা কোন ধর্মের অনুসারী সেটা জানা না যায় সেক্ষেত্রেও। কিন্তু সন্ত্রাসী যদি মুসলিম ধর্মালম্বী হয় তবে সেটা শিরোনাম হয়ে যায় অন্ততপক্ষে ১০৫টা সংবাদের।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ তথ্য অনুসারেও একই ফলাফল আসে। অন্তত ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সংগঠিত সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেখানো যেতে পারে। সংবাদপত্রের তথা সমগ্র মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করার এই অসমতা ও পক্ষপাতমূলক সমীকরণটি সমাধান করা সত্যিই বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাদের মতে, ডানপন্থী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছে কমপক্ষে দুইবার বা তারও বেশি। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মুসলিম চরমপন্থী হিসেবে তাদের আক্রমণের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
সকল সংবাদ শিরোনামের পাঠক যে একই ধরণের তা কিন্তু নয়। যদিও এই গবেষণার প্রধান গবেষক এরিন ক্যাথ্যরিন এর বক্তব্য অনুসারে, “আমরা এটাকে বিভিন্ন তথ্য অনুসারে দু’ভাগে ভাগ করেছি। এবং আমরা এর ফলাফল পেয়েছি যে দেশের তথা আন্তর্জাতিক মহলেও দেশের অন্যন্য অভ্যন্তরীণ আট দশটা খবরের থেকেও এই সংবাদ শিরোনাম আকর্ষণ করে বেশ কয়েক গুণ বেশি।
গার্ডিয়ান এর একটা নতুন ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে যে, হোয়াইট ফ্রাইট নামের এক ভদ্রলোক একটা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। এবং সেটা সংগঠিত হয়েছে একজন অমুসলিম কর্তৃক। ২০১৫ সালে নিউ ইয়ার্কের একটি ছোট সম্প্রদায় ইসলামবার্গে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করার অপরাধে রবার্ট ডোগার্ট নামের এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্বনামধন্য আইনজীবীর মত অনুযায়ী রবার্ট হোগার্টের পরিকল্পনাটি একটি সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড রূপেই স্বীকৃতি পেয়েছে।
২০১১ সালে নরওয়ের ওসলোতে অ্যান্ডারস ব্রেভিক নামের এক ব্যক্তির সন্ত্রাসীর হামলায় প্রায় ৭৭ জন নিহত হয়। এবং এক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ নিউজিল্যান্ডের আল নূর মসজিদে এবং ক্রাইস্টচার্চে হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি সাম্প্রতিক। যে মারাত্মক হামলায় প্রায় ৫০জন নিরপরাধী প্রাণ হারায় এবং প্রায় ৫০ জন গুরুতর আহত হয়। এই হামলার অভিযুক্ত অপরাধী অস্ট্রেলিয়ান ব্রেন্টন ট্যরেন্ট একজন অমুসলিম। এই হামলার মূল কারণ সমূহের মধ্যে ডান চরমপন্থীতা, ইসলামবিদ্বেষ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য এবং অভিভাষণবাদ অন্যতম। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে এরকম হামলার অনেক নজীরই বিদ্যমান।
ইসলাম মানেই সন্ত্রাস নয়। মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী নয়। শান্তির ধর্মের নাম ইসলাম। ইসলামে সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান নেই। শুধুমাত্র ইসলাম কেন পৃথিবীর কোন ধর্মই সন্ত্রাসবাদের পক্ষে নয়। তাই একজন সন্ত্রাসীর পরিচয় হওয়া উচিত সে শুধুই একজন সন্ত্রাসী তা সে যে ধর্মালম্বীই হোক না কেন। কারণ একজন সন্ত্রাসী সকল ধর্মের, জাতীর, বর্ণের বাইরের।
ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে লিখেছেন রেহেনা রজনী