অপরিচিত পরিবেশে গিয়ে কিংবা অপরিচিত কাউকে দেখে বেশিরভাগ শিশুরা কাঁদে- এটা আমাদের সবার জানা থাকলেও অভিভাবকেরা একেকজন একেকভাবে এই ধরণের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানান। মজার বিষয় হলো নির্দিষ্ট একটা সময়ে শিশুরা এই ধরণের উদ্বেগে ভুগবে সেটাই, সেই সাথে এর পরবর্তী ধাপে তার আচরণের পরিবর্তন ঘটবে সেটাও স্বাভাবিক। এই আচরণকে ‘স্ট্রেঞ্জার এ্যাংজাইটি’ বলা হয়।
চার মাস বয়স থেকে শিশুরা তার কেয়ারগিভার বা বাবা মায়ের সাথে যে আচরণ করে, অন্যদের সাথে তা করে না। এখানেই শুরু। সাত-আট মাস বয়সে প্রথমবারের মত এই পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হয়ে উঠে। শুধু তাই না, এই সময়ে তার পছন্দ অপছন্দও তৈরি হয়। সবার সাথে আলাদা আলাদা সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই এই সময়ের ‘স্ট্রেঞ্জার এ্যাংজাইটি’ কে ইমোশনাল ডেভেলপমেন্টের বা আবেগিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া হয়। কগনিটিভ স্কিল বা জ্ঞানীয় বিকাশ যত বেশি ডেভেলপ করে, এই উদ্বেগ তত বেশি তীব্র হয়। সবচেয়ে বেশি তীব্র হয় বারো মাসের দিকে। কোন মানুষটি তার সম্পর্কে নেতিবাচক কে ইতিবাচক সেটা শিশু বুঝতে পারে এবং সেই মতো প্রতিক্রিয়া দেখায়।
এই উদ্বেগের একটা কারণ হচ্ছে শিশু মনে করে অপরিচিত কারো কাছে গেলে সে আহত হতে পারে বা তার ক্ষতি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে এই ধরণের উদ্বেগ কয়েক মিনিট পরেই চলে যায়। বাকিদের আচরণে ভিন্নতা দেখা যায়। কেউ মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদে, কেউ বা পরিচিত কেউ কোলে নিলেই চুপ হয়ে যায়।
‘স্ট্রেঞ্জার এ্যাংজাইটি’র অর্থই হচ্ছে শিশুর ইমোশনাল ডেভেলপমেন্ট বা আবেগিক বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে। এছাড়াও এর আরও দুইটা ইতিবাচক দিক আছে-
প্রথমত, আপনার শিশুর কাছে আপনি স্বর্গের মত নিরাপদ, আস্থা-ভরসার জায়গা।
দ্বিতীয়ত, আপনার শিশু সম্ভবত ফিজিক্যাল স্কিলগুলো অর্থাৎ হামাগুড়ি, ক্রিপিং (বুক ঘষে এগিয়ে চলা), রোলিং অর্থাৎ দূরে সরে যাওয়া যায় এমন স্কিলগুলো মাত্র আয়ত্তে আনা শুরু করছে। সে যখন এগুলোতে পারদর্শী হতে পারবে, সে আপনার কাছাকাছি থাকতে পারবে, অপরিচিতদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে পারবে। সাত-আট মাস বয়সে শিশু এগুলো ভালভাবে পারে না, তাই তার মন বলে ’তুমি মা বাবার কাছ থেকে সরে গেলেই বিপদ হবে’!
যেসব শিশুরা ওভার স্টিমুলেশনের ভেতর দিয়ে যায়, প্রচুর শব্দ, কর্কশ কোলাহল, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন অপরিচিত মানুষের দেখা হয়- তাদের উদ্বেগ তিন মাস থেকেও শুরু হতে পারে। তিন মাসের শিশুর ক্ষেত্রে এই উদ্বেগ তাই অস্বাভাবিক।
শিশুর বয়স যখন আঠারো থেকে চব্বিশ মাস, তখন থেকে বাবা মায়ের এই উদ্বেগ কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। কোন নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার আগে থেকে তাকে গল্প বলে, সবকিছুর বর্ণনা দিয়ে নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় তা বোঝানো উচিত। কমিকের বা কার্টুনের সুপার হিরো বা তার প্রিয় কোন ক্যারেক্টার কিভাবে নতুন জায়গার সাথে মানিয়ে নেয় তা ব্যাখ্যা করলেও শিশুরা অনুপ্রেরণা পায়।